পুস্তক পরিচয় ৩

চার দশক পেরিয়েও সুপারহিট

আমাদের মনে প্রথম পালকস্পর্শ দিয়েছিলেন অজয় হোম (১৯১৩-’৯২)। সত্যচরণ লাহা পক্ষিবিজ্ঞানে বহুমাত্রিক কাজ করেও এত কাছের মানুষ হননি। হয়তো তাঁর লেখালেখি ইংরেজিতে ও মুখ্যত দীক্ষিতদের জন্য ছিল বলে।

Advertisement

যুধাজিত্‌ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

আমাদের মনে প্রথম পালকস্পর্শ দিয়েছিলেন অজয় হোম (১৯১৩-’৯২)। সত্যচরণ লাহা পক্ষিবিজ্ঞানে বহুমাত্রিক কাজ করেও এত কাছের মানুষ হননি। হয়তো তাঁর লেখালেখি ইংরেজিতে ও মুখ্যত দীক্ষিতদের জন্য ছিল বলে। ওদিকে অজয় হোমের বাংলার পাখি-তে প্রসঙ্গ অবতারণা, পাখির বর্ণনা, কথায় আঁকা প্রকৃতির ছবি, সমস্তই এমন সাবলীল যে, প্রথম প্রকাশের (’৭৩) পর চার দশক এবং একাধিক প্রকাশক পেরিয়ে এসেও সুপারহিট। বাংলার পাখি বা চেনা-অচেনা পাখি (’৯৫), কোনওটিতেই রঙিন ছবি ছিল না। বাংলার পাখি-র এই সম্পাদিত ও রঙিন চিত্রসহ সংস্করণটিকে (দে’জ, ২৫০.০০) তাই সাধুবাদ জানাতে হয়। পাখিদের শ্রেণিবিভাগ ও বৈজ্ঞানিক নামে সর্বক্ষণ ঘটে চলা বদল মেনে এখানে নামগুলিকে আধুনিক করা হয়েছে। সম্পাদক প্রসাদরঞ্জন রায় লিখেছেন এ দেশের পক্ষিচর্চায় শেষ দেড়শো বছরেরও বেশি সময়ের এক অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, তবে অজয় হোমের জীবন ও প্রকৃতিচর্চার বিবরণ আরও প্রসারিত হতে পারত।

Advertisement

অজয় হোম পাখিদের পাঠকের সামনে আনার বদলে পাঠককেই টেনে এনেছিলেন উন্মুক্ত প্রকৃতিতে। এখানেই তিনি সত্যচরণ, জগদানন্দ, সুধীন্দ্রলালের মতো অগ্রজদের থেকে আলাদা। মুখের ভাষা আর অ্যানেকডোট দিয়ে সাজিয়েছিলেন লেখা। তাঁর রচনার একটা আপাত-গৌণ লক্ষণ মনোযোগ পায়নি। সেই সময় চালু সংস্কৃতায়নের প্রবণতা মেনে পাখিদের গোত্র-বংশ-গণ ইত্যাদির অভিধায় তিনি ব্যবহার করেছিলেন সংস্কৃত শব্দ। যথা: ‘পাখিটি তর্দাশ উপবংশে গোপন গণের (zoothera) প্রজাতি’। ‘তর্দাশ’ আমাদের কাছে ‘হিব্রু’, এবং এখানে ‘গোপন’ও তাই! ‘তর্দাশ অর্থাত্‌ ভূমিকীটভোজী’ উল্লেখও বিশেষ আশ্বস্ত করে না। এর পাশে সম্পাদকের মন্তব্য, ‘ল্যাটিন নামগুলি যথেষ্ট শক্ত’, দুর্বল ঠেকে। তর্দাশ শব্দটার উত্‌স কী? কোথা থেকে এল শিলীন্ধ্রী, চিরিটীক, লটূষক, কলবিঙ্ক এ সব শ্রেণিনাম? রঘু ভীরা-র এক অভিধানের উল্লেখ করেছিলেন অজয় হোম, কিন্তু বইতে শব্দগুলির ব্যাখ্যা দেননি। পরে আশির দশকে বেরনো কে এন দাভে-র বার্ডস ইন স্যানস্ক্রিট লিটারেচার বইটিতে কিছু নামের ব্যুত্‌পত্তি আলোচিত হয়েছে।

দুঃখের কথা, সংস্করণটির মুদ্রণপ্রমাদ ভয়াবহ। ভিন্নদর্শন স্ত্রী ও পুরুষের ভেতর মাত্র একটির ছবি দিলে লিঙ্গের উল্লেখ জরুরি ছিল। বর্ণানুক্রমিক সূচিটি ভূমিকায় উল্লেখ রেখে উধাও হয়ে গেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন