সম্পাদকীয় ২

খেলা যখন

যে ব্যক্তিরা চিনা আধিপত্যের বিরুদ্ধে এত কাল রাজপথ কাঁপাইয়াছেন, এ-ক্ষণে তাঁহারাই ব্যালট বাক্সকে হাতিয়ার করিয়াছেন। সেই চিনবিরোধী জনাবেগের সুযোগ চিনবিরোধী শক্তিগুলিই বা লইবে না কেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share:

হংকংয়ের রাস্তা। ফাইল চিত্র

সপ্তাহখানেক পূর্বে হংকংয়ের পুর নির্বাচন আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে শোরগোল ফেলিল। বেজিংপন্থীদের হারাইয়া বিপুল জয়লাভ করিয়াছে গণতন্ত্রপন্থীরা। বুথের সম্মুখে দীর্ঘ লাইন দেখিয়া অনুমান পূর্বেই ছিল, ফলাফলে নিশ্চিত হওয়া যাইল, সামান্য নির্বাচনকে অসামান্য করিয়া তুলিবার পশ্চাতে নামভূমিকায় চিন। একটি সামান্য আইন পরিবর্তন লইয়া হংকংবাসীকে যে ভাবে খেপাইয়া তুলিলেন একদলীয় শাসনে অভ্যস্ত বেজিং-কর্তারা, তাহাতে তুচ্ছ ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল নির্বাচনেও ওয়াশিংটন হইতে নয়াদিল্লি সকলের নজর ঘুরিয়া গিয়াছিল। যে ব্যক্তিরা চিনা আধিপত্যের বিরুদ্ধে এত কাল রাজপথ কাঁপাইয়াছেন, এ-ক্ষণে তাঁহারাই ব্যালট বাক্সকে হাতিয়ার করিয়াছেন। সেই চিনবিরোধী জনাবেগের সুযোগ চিনবিরোধী শক্তিগুলিই বা লইবে না কেন?

Advertisement

ইত্যবসরে মার্কিন সেনেট একটি বিল পাশ করাইয়া জানাইয়াছে, যাহাদের বিরুদ্ধে হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠিয়াছে, সেই হংকং ও বেজিংয়ের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে চাহিলেই ব্যবস্থা করিতে পারিবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ইতিপূর্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই গণআন্দোলনকে সমর্থন করিয়াছিলেন, তবে সরাসরি বলপ্রয়োগের অধিকার স্বহস্তে লইবার পরে মার্কিন পতাকা হাতে মার্কিন কনসুলেট অবধি মিছিল করিয়াছেন আন্দোলনকারীরা। স্বভাবতই প্রবল চটিয়াছে বেজিং। এমনিতেই হংকং ভোটের ফল চিনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসে নাই। যেটুকু আসিয়াছে, তাহাতেও গণতন্ত্রপন্থীদের জয়ের পশ্চাতে বৈদেশিক শক্তির হাত লইয়া সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছে। হংকংয়ের মাটিতে বেজিং-ও ‘বৈদেশিক’ কি না, ইহা কূটপ্রশ্ন হইলেও বৃহৎ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ফয়সালার অপেক্ষা, তবে বিপক্ষীয় জয় যে গণ-আন্দোলনের ফল, ইহা লইয়া নিশ্চিন্ত হইতে দ্বিধা নাই। এবং নিশ্চিত রূপেই, আপনার করতলগত স্বস্তিদায়ক শক্তি ব্যতিরেকে কাহাকেও মান্যতা দিতে চিনা নেতৃবর্গের ঘোর আপত্তি। সমালোচকরাও যথাযথ ভাবে চিনের একচ্ছত্র শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টিকে বারংবার বিদ্ধ করিয়াছেন।

১৯৪৯ সালে মাও-নেতৃত্বে গেরিলাবাহিনী যখন চিনের ক্ষমতা দখল করিয়াছিল, তখন জাতি-রাষ্ট্রটি বর্তমান অবয়বে উপস্থিত ছিল না। তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মতান্ত্রিক শাসন চলিত, তাইওয়ান চালাইত জাতীয়তাবাদীরা, ম্যাকাও ছিল পর্তুগিজদের অধীন, এবং হংকং দখল করিয়াছিল ব্রিটিশ রাজশক্তি। মুসলমান অধ্যুষিত শিনচিয়াংয়েও চিনের শাসন কায়েম ছিল না। একে একে ইহাদের আত্তীকরণ করিবার চেষ্টা করিয়াছে কমিউনিস্ট পার্টি। শাসকস্তরে নানা কৌশলে কিছু দূর অবধি কার্যসিদ্ধি করিতে পারিলেও একটি স্থানেও জনতাকে বশ মানাইতে পারে নাই তাহারা। সেই কারণেই সীমান্তবর্তী প্রতিটি অঞ্চল লইয়া প্রতিনিয়ত অস্বস্তির কাঁটা বিঁধিতে থাকে বেজিংকে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করিতে ছাড়ে না রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও। ক্ষমতার জাঁতাকলে পড়িয়া দোদুল্যমান জনতাও যখন যাহাকে পারেন সমর্থন করেন। হংকংয়ের অনিয়ন্ত্রিত খেলাঘরে তেমনই এক খেলা চলিতেছে, যাহা গণতন্ত্রের পক্ষে হইলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় কণ্টকিত। এবং যত দিন না কোনও এক পক্ষের দখল কায়েম হইবে, তত দিন অবধি খেলাও থামিবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন