Editorial News

লজ্জাজনক ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন

মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় যে কাণ্ড ঘটল, তা নজিরবিহীন। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, সীমাহীন পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, চিৎকার, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, তেড়ে যাওয়া, প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়ি—মোহনবাগানের বার্ষিক সাধারণ সভা এমনই দৃশ্যপটের সাক্ষী হয়ে রইল।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

ক্লাবকর্তারা যা ঘটালেন, যে ছবি তৈরি করলেন, তা চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। ছবি: সংগৃহীত।

কেউ বলেন ঐতিহ্য, কেউ বলেন দেশের গর্ব, কেউ বলেন জাতীয় ক্লাব। আর সেই সব বিশেষণকে ছাপিয়ে কবচকুণ্ডলের মতো ক্লাবকে ঘিরে থাকে অজস্র সমর্থকের পরিসীমাহীন আবেগ। অসীম দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় সেই গরিমাকে ম্লান করলেন মোহনবাগান ক্লাবের কর্মকর্তারা, ভূলুন্ঠিত হল সমর্থকদের আবেগ।

Advertisement

মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় যে কাণ্ড ঘটল, তা নজিরবিহীন। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, সীমাহীন পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, চিৎকার, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, তেড়ে যাওয়া, প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়ি—মোহনবাগানের বার্ষিক সাধারণ সভা এমনই দৃশ্যপটের সাক্ষী হয়ে রইল। গণমাধ্যমের দৌলতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল দৃশ্যপটটির সাক্ষী রইলেন লক্ষ লক্ষ মানুষও। মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষে এ ঘটনা যে একেবারেই সম্মানজনক নয়, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ক্লাবের কর্মকর্তারা অসম্মানিত বা লজ্জিত বোধ করছেন কি না জানা নেই। ক্লাবটির অজস্র সমর্থক যে মরমে মরছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

মোহনবাগানের মতো ক্লাবের নাম জাতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্রিটিশ শাসনেও ভারতীয়ত্বের মুখ উজ্জ্বল করেছে যে সব প্রতিষ্ঠান, মোহনবাগান সে সবের অন্যতম। শতাব্দী পেরিয়ে আসা ক্লাবটির কর্মকর্তাদের মধ্যে মতান্তর বা মনোমালিন্য এতদিন গোপন ছিল, এমন নয়। কাদা ছোড়াছুড়ির খবর আগেও বাইরে এসেছে। কিন্তু, এ বার ক্লাব তাঁবুতে বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যা ঘটল, স্মরনাতীত কালে সে ছবি দেখা যায়নি। সুতরাং, স্মরনাতীত কালে মোহনবাগানকে লোকচক্ষে এত অপদস্থও হতে হয়নি।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ক্লাবকর্তারা যা ঘটালেন, যে ছবি তৈরি করলেন, তা চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। এই ধরণের ক্লাব কিন্তু কর্মকর্তা-সর্বস্ব নয়। মোহনবাগানের মতো ক্লাবগুলি বেঁচে থাকে লক্ষ-কোটি সমর্থকের আবেগে ভর করে। ওই আবেগই এই ধরণের ক্লাবের প্রাণবায়ু, ওই ভালবাসাই এই ধরণের ক্লাবের অক্সিজেন, ওই আকুলতাই এই ধরণের ক্লাবের স্পন্দন। তাই এই ধরণের ক্লাবগুলির আসল মালিক বা আসল কর্মকর্তা এই সমর্থকরাই। অতএব, সমর্থকদের আবেগে আঘাত দিয়ে বা ক্লাব সম্পর্কে তাঁদের গৌরবময় অনুভূতিকে ধূলিসাৎ করে কখনও ক্লাবকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মোহনবাগান সদস্যদের এবং কর্মকর্তাদের অনেকেই সে কথা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন। তাই বার্ষিক সাধারণ সভায় অভদ্রতা এবং বিশৃঙ্খলার এমন বেনজির ছবি তাঁরা তৈরি করতে পারলেন।

কোনও ক্লাবের সদস্য বা কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ বা টানাপড়েন কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ক্লাব যত বড় হয়, সদস্য সংখ্যা ততই বেশি হয়, মতামতের বহুত্ব ততই বাড়ে, বাড়ে মতানৈক্য এবং মতবিরোধের সম্ভাবনাও। কিন্তু, মতানৈক্য বা মতবিরোধ পেরিয়ে সুষ্ঠভাবে ক্লাব পরিচালনা করার জন্য ক্লাবের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনও রয়েছে। কর্মকর্তাদের ক্ষমতালিপ্সা অথবা স্বার্থপরায়ণতা অথবা আরও নেতিবাচক কোনও প্রবণতা এমন স্তরে পৌঁছে গিয়েছে যে, কোনও নিয়ম-কানুন বা সন্দিহান বা কার্যপদ্ধতি মেনে কাজ হল না। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা হল। এই ঘটনা মোহনবাগান ক্লাবের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটাল তো বটেই, অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবেও ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে গেল।

আরও পড়ুন
মোহনবাগান ক্লাবের সভায় ধুন্ধুমার, বচসা গড়াল হাতাহাতিতে

আবার বলছি, চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন মোহনবাগান কর্মকর্তারা এবং সদস্যদের একাংশ। দীর্ঘদিন ধরে কেউ ক্লাবের কর্মকর্তা পদে রয়েছেন বলেই তিনি ক্লাবে যা খুশি করতে পারেন, বিষয়টা এমন নয়। এই ধরণের ক্লাব বেঁচে থাকে সমর্থকদের আকুল আবেগে ভর করেই। সমর্থকদের এই আবেগ রয়েছে বলেই ক্লাব এত মহিমান্বিত। সমর্থকদের এই ভালবাসা রয়েছে বলেই কর্মকর্তারা এত গৌরবজ্জ্বল অবস্থানে। সমর্থকরা না থাকলে, কিছুই নেই। সেই অজস্র সমর্থক লজ্জিত, অপমানিত, সঙ্কুচিত, কুণ্ঠিত বোধ করছেন নিজেদের ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভার ছবিটা দেখার পরে। মোহনবাগান কর্মকর্তারা সে কথাটা বুঝতে পারছেন? না কি সঙ্কীর্ণতায়, স্বার্থপরায়ণতায়, আত্মকেন্দ্রিকতায় তাঁরা এতটাই নিমগ্ন যে, সমর্থকদের কথা তাঁরা ভুলেই গিয়েছেন? ওই চরম বিশৃঙ্খলা এবং লজ্জাজনক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে চড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে গোটা ক্লাবকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন