সম্পাদকীয় ২

বড় সুখের সময়

কলিকাতার ডাকসাইটে মদ্যপরা নির্ঘাত পুলিশের বড়কর্তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইবেন। পানের মাত্রা খানিক বেশি হইয়া গেলে কী ভাবে বাড়ি ফেরা যায়, সেই চিন্তা প্রত্যেককেই অল্পবিস্তর কাবু করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ০০:০০
Share:

কলিকাতার ডাকসাইটে মদ্যপরা নির্ঘাত পুলিশের বড়কর্তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইবেন। পানের মাত্রা খানিক বেশি হইয়া গেলে কী ভাবে বাড়ি ফেরা যায়, সেই চিন্তা প্রত্যেককেই অল্পবিস্তর কাবু করে। গাড়ি চালাইলে দুর্ঘটনার ভয়, পুলিশে ধরিবার ভয়ও খানিক থাকে। পুলিশকর্তাদের আশীর্বাদে আর সমস্যা থাকিল না। অতঃপর, রাত্রের দিকে পা হইতে মাথা পর্যন্ত টলমল করিলে, পায়ের ভিতর পা হইয়া গেলে চিন্তা নাই— পানশালাই চালকের ব্যবস্থা করিবে। নচেৎ, অ্যাপ-ক্যাব ডাকিয়া দিবে। শহরে মদ্যপানজনিত পথদুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়িয়া যাওয়ায় ইহাই পুলিশের দাওয়াই। কেহ বিস্মিত হইয়া প্রশ্ন করিতে পারেন, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাইবার প্রবণতাটিতে রাশ টানিবার যে সহজতর উপায়টি ছিল, পুলিশকর্তারা তাহার কথা ভাবিয়া দেখিলেন না কেন? অর্থাৎ, রাত্রের শহরে পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো হইল না কেন? আরও বেশি শ্বাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হইল না কেন? মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাইয়া ধরা পড়িলে বিপুল জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিল করিয়া দেওয়ার ব্যবস্থা হইল না কেন? উত্তরটি জটিল নহে। শহর কলিকাতার রাত্রের রাজপথে যাঁহারা মত্ত হইয়া গাড়ি চালান, তাঁহাদের অধিকাংশই সামান্য মানুষ নহেন। হয় তাঁহারা স্বনামধন্য, অথবা কোনও তাবড় প্রভাবশালীর হাত আছে তাঁহাদের মাথায়। পুলিশের সাধ্য কী তাঁহাদের শাসন করে! এ দিকে, কিছু না করিলেও নহে। অতএব, পুলিশকর্তারা বিকল্প পথ বাছিয়াছেন। এমন পথ, যাহাতে সাপটি না মরিলেও লাঠি বিলক্ষণ ভাঙিবে। মদ্যপ অবস্থায় যাহাতে কেউ গাড়ি না চালাইতে পারেন, তাহা নিশ্চিত করিবার দায়টি পানশালাগুলির উপর চাপাইয়া দিয়াই কর্তারা দায়িত্ব শেষ করিলেন।

Advertisement

এই সিদ্ধান্তে আরও বেশি মদ্যপানের প্রণোদনা তৈরি হইল। বাড়ি ফিরিবার দায়িত্বটি যদি লইতে না হয়, তবে আর দুই পাত্র পান করিতে সমস্যা কোথায়? কর্তারা হয়তো বলিবেন, তাহাতে সমস্যা কী? মদ্যপান করিয়া গাড়ি না চালাইলেই হইল। সমস্যা হইল, এই ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না। মত্ত গাড়িচালনা বন্ধ করিতে হইলে তাহা পুলিশকেই করিতে হইবে— অপরাধের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ শাস্তির মাধ্যমেই করিতে হইবে। অথবা ভাবিতে হইবে, বাজারপ্রক্রিয়াকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়। পুলিশের বর্তমান সিদ্ধান্তটিকেও সেই ছাঁচে ঢালিয়া লওয়া যাইতে পারে। ধরা যাউক, পুলিশ নিয়ম বাঁধিয়া দিল, কোনও পানশালায় মদ্যের অর্ডার দেওয়ার পূর্বে একটি মোটা অঙ্কের টাকা— পাঁচ বা দশ হাজার টাকা— জামিন রাখিতে হইবে। মদ্যপানের পর কেহ গাড়ি চালাইবার মতো অবস্থায় না থাকিলে তাঁহার জন্য যে ড্রাইভার বা অ্যাপ-ক্যাবের ব্যবস্থা করা হইবে, এই জামিনের টাকাটি সেই খাতে যাইবে। সুস্থ অবস্থায় পানশালা ছাড়িলে টাকাটি ফেরত পাওয়া যাইবে। নিজস্ব ড্রাইভারের ব্যবস্থা করিতে, অথবা বিকল্প পরিবহণের জন্য যত টাকা প্রয়োজন, টাকার এই অঙ্কটি যেহেতু তাহার তুলনায় অনেকখানি বেশি, ফলে ইহার মধ্যে এক অর্থে একটি জরিমানা নিহিত আছে— অবিবেচনার শাস্তি। যাঁহাদের খানিক হইলেও কাণ্ডজ্ঞান আছে, তাঁহারা সুস্থ থাকিয়া অথবা ড্রাইভার ডাকিয়া জরিমানার হাত হইতে বাঁচিতে চাহিবেন। আর, অন্যদের জরিমানা হওয়াই উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন