সাত বৎসর পর অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতন বাড়াইল কেন্দ্র। বৃদ্ধির অঙ্ক সাড়ে সাতশো টাকা হইতে দেড় হাজার টাকা। মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে ইহাকে আদৌ ‘বৃদ্ধি’ বলা চলে কি না, সে বিতর্ক না হয় থাক। কিন্তু ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ-সহ সকল শ্রমিক সংগঠন যে দাবি তুলিয়াছে, তাহার কী হইবে? সেই দাবি, সরকারি প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মীদের ন্যূনতম বেতন এবং পেনশন প্রভৃতি সামাজিক সুরক্ষা দিতে হইবে। পর পর চারটি জাতীয় শ্রমিক কনভেনশন এই সুপারিশ করিয়াছে। তাহা মানিলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বেতন হইত অন্তত আঠারো হাজার টাকা। কেন্দ্র সর্বোচ্চ বেতন ধার্য করিল সাড়ে চার হাজার টাকা। প্রশ্ন উঠিয়াছে, সাড়ে বাইশ শত টাকা বেতনের সহায়িকা কি নিজের সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার দিতে পারিবেন? রাজ্যগুলি অবশ্য বুঝিয়াছে, এমন সামান্য বেতনে কর্মী পাওয়া অসম্ভব। অনেক রাজ্যই স্থানীয় মজুরির হিসাবে বাড়তি টাকা বরাদ্দ করিয়াছে। তাহার ফলে একটি বাড়তি সমস্যা দেখা দিয়াছে। বিভিন্ন রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর বেতনে বিস্তর পার্থক্য দেখা দিয়াছে। পুদুচেরিতে বেতন সর্বাধিক, মাসে ১৯,৮৪০ টাকা। সর্বনিম্ন বিহারে, ৩৭৫০ টাকা। একই দায়িত্ব পালন করিয়া পারিশ্রমিকে এই বিপুল তারতম্য কি অন্যায় নহে? বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পারিশ্রমিকের দূরত্ব কমাইবার কাজটি কেন্দ্র না করিলে কে করিবে?
যে সরকার সপ্তম পে-কমিশনের সুপারিশে সরকারি কর্মীদের বেতন আড়াই গুণ বাড়াইতে পারে, সাংসদদের বেতন দ্বিগুণ করিতে পারে, দরিদ্র শ্রমিকদের মজুরি বাড়াইতে তাহারা কৃপণ কেন? উত্তর সহজ। প্রধানমন্ত্রী মোদী সকল সমাজকল্যাণ প্রকল্পের প্রতিই অনুদার। বাম হস্তে মনসাপূজার ন্যায় সামান্য কিছু বরাদ্দে শিশুর পুষ্টিকর আহারও জোটে না, কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা তো দূরস্থান। একশত দিনের কাজের প্রকল্পে মোদীর সরকার যে বেতন ধার্য করিয়াছে, তাহা ন্যূনতম মজুরিরও কম। গোদের উপর বিষফোঁড়া হইল টাকা পাঠাইতে অতিরিক্ত বিলম্ব। দলিতের ছাত্রবৃত্তি, একশত দিনের কাজের মজুরি হইতে শিশুদের খাদ্যের জন্য অনুদান, সকল ক্ষেত্রে অর্থের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ঝুঁকি লইয়া দোকান হইতে ধারে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করিতেছেন, যাহাতে প্রকল্প থামিয়া না যায়। ইহাই ‘নূতন ভারত’ বটে।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি, তাঁহাদের ‘ভলান্টিয়ার’ বা স্বেচ্ছাসেবী করিয়া রাখা চলিবে না, ‘কর্মী’ বলিয়া স্বীকৃতি দিতে হইবে। এই দাবিও মানিল না বিজেপি সরকার। তাহাতে নারীর শ্রমের প্রতি অমর্যাদাই প্রকাশ পাইল। পুরুষতান্ত্রিক পরিবার নারীর শ্রমকে বিনা মজুরিতে ব্যবহার করিতে চায়, রাষ্ট্রও তাহাই করিতেছে। শিশুদের খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশন, গর্ভবতী ও শিশুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদান, সরকারের চোখে এইগুলি ‘কাজ’ নহে। কেন? এই দায়িত্বগুলি মহিলারা পালন করেন বলিয়াই কি? প্রধানমন্ত্রী মোদী নূতন নিয়োগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে ব্যর্থ। যে সকল কাজ পূর্বেই সৃষ্ট হইয়াছে, সেগুলিও তিনি মেয়েদের নিকট আকর্ষক করিতে অনিচ্ছুক। তাঁহার শাসন কালে যে মেয়েদের শ্রমের বাজারে যোগদান কমিয়াছে, তাহা আর আশ্চর্য কী।