National News

অস্বস্তির ব্যূহে শাসক

পাঁচ রাজ্যে ভোটযন্ত্রের সিল ভাঙার আগে নরেন্দ্র মোদীর স্নায়ু কি আরও টান টান হল?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৮
Share:

স্বস্তিতে কাটল না দিনটা নরেন্দ্র মোদীর। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের দুন্দুভিনিনাদ শোনা যাচ্ছে। চূড়ান্ত সংগ্রামের অব্যবহিত আগে যে বড়সড় অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হলেন নরেন্দ্র মোদী, সে পরীক্ষার ফল প্রকাশের ঠিক আগের দিনটা দেশের শাসককুলের জন্য সুখকর হল না। শিবির ছেড়ে চলে গেলেন অন্যতম মিত্র। প্রতিপক্ষ একই দিনে বড়সড় ঐক্য ও সংহতির ছবি তুলে ধরল। রাজনৈতিক পরিসরে যখন এই রকম অস্বস্তি, ঠিক তখনই প্রশাসনিক পারদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে চলতি মন্ত্রীসভার মেয়াদে দ্বিতীয়বার পদত্যাগ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও গভর্নর।

Advertisement

বিরোধী দলগুলো জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল অনেক দিন ধরেই। লোকসভা নির্বাচন যত কাছাকাছি আসছে, ততই সুস্পষ্ট হচ্ছে বিরোধী ঐক্যের চেহারাটা। দেশজোড়া বিরোধী ঐক্য যে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর জন্য এ সময়ে খুব একটা স্বস্তির খবর নয়, তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার দরকার পড়ে না। তাই প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের নেতৃত্বে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরের বিভিন্ন শক্তি যখন রাজধানীর বুকে সম্মিলিত হয় যৌথ রণকৌশল রচনার লক্ষ্যে, তখন শাসক শিবিরের প্রধানকে অস্বস্তিতে থাকতেই হয়। পাঁচ রাজ্যের ধুন্ধুমার সংগ্রামের ফল প্রকাশিত হওয়ার ঠিক আগের দিন এই রকম একটা সমীকরণ রূপ পেতে শুরু করলে শাসকের স্নায়ুর উপর চাপ বাড়ে বই কমে না।

বিহারের ওবিসি নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহার দিক থেকেও যে একটা ধাক্কা আসতে পারে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা সে কথা জানতেন না, এমন নয়। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিহারে উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টিকে যে সঙ্গে না-ও পাওয়া যেতে পারে, তা বেশ কয়েক মাস ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। বিহারে এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যেই মূলত আসন সমঝোতা বহাল রাখার বিষয়ে আলাপ আলোচনা এগোতে শুরু করেছিল। কিন্তু কুশওয়াহা এমন একটা দিনে প্রতিশোধটা নেবেন, তা সম্ভবত নরেন্দ্র মোদীরা আগে আঁচ করতে পারেননি। ২১টা বিরোধী দল যে দিন রাজধানীতে বৈঠক করছে শক্তি সংহত করার লক্ষ্যে, ঠিক সেই দিনেই মন্ত্রীত্বে ইস্তফা দিয়ে এবং এনডিএ ত্যাগ করে শাসক শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে দিচ্ছেন উপেন্দ্র কুশওয়াহা— এই ছবি কোনও সুলক্ষণের আভাস দেয় না।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সবচেয়ে অস্বস্তিকর এবং অপ্রত্যাশিত ধাক্কাটা দিলেন অবশ্য উর্জিত পটেল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিতের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের মতানৈক্য অস্বস্তিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে— এ খবর বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। স্বশাসিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কার্যপ্রণালীতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনধিকার হস্তক্ষেপে উর্জিত বেজায় অখুশি বলে জল্পনা ছিল। তিনি ইস্তফা দিতে পারেন বলেও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরে সব টানাপড়েন থিতিয়ে আসার ইঙ্গিত মেলে, উর্জিত পটেলের ইস্তফার জল্পনাও ফিকে হতে হতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের আগের দিন শাসককে আচমকা যে ধাক্কাটা দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, তাতে বোঝা গেল, জল্পনাটা গুজব ছিল না। বোঝা গেল, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ আদ্যন্ত ভিত্তিহীন নয়। আরও এক বার প্রশ্ন উঠে গেল প্রশাসক নরেন্দ্র মোদীর পারদর্শিতা নিয়ে।

আরও পড়ুন: সংঘাতের জের! শেষ পর্যন্ত ইস্তফাই দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল

আরও পড়ুন: এনডিএ-তে ফাটল, জোট এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন উপেন্দ্র কুশওয়াহা

সাড়ে চার বছর প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করা নরেন্দ্র মোদীর দল পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল সংগ্রামের সম্মুখীন— রাজনীতিক মোদীর মুন্সিয়ানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় এই পরিস্থিতি। একটা মন্ত্রীসভার মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দু’জন গভর্নরের পর পর পদত্যাগ সিলমোহর দেয় প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগগুচ্ছে। পাঁচ রাজ্যে ভোটযন্ত্রের সিল ভাঙার আগে নরেন্দ্র মোদীর স্নায়ু কি আরও টান টান হল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন