National News

এই রাজনীতিতে রামজসই হয়, রামরাজ্য হয় না

শাসককে নাকি সব সময়ই অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হয়। দেশের নাগরিকরা শাসন ক্ষমতা তাঁর হাতে সঁপে দিয়েছেন বলেই নাগরিকদের প্রতি শাসকের অপরিসীম এবাং সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা থাকে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৬
Share:

শাসককে নাকি সব সময়ই অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হয়। দেশের নাগরিকরা শাসন ক্ষমতা তাঁর হাতে সঁপে দিয়েছেন বলেই নাগরিকদের প্রতি শাসকের অপরিসীম এবং সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা থাকে। এই কথাগুলো গণতন্ত্রের পরিসরে সব সময়ই শোনা যায়। তবে দায়বদ্ধতা বা দায়িত্বশীলতার এই শিক্ষা শুধু গণতন্ত্রের কেতাবি কথা নয়। এ দেশের বর্তমান শাসকরা যে পৌরাণিক চরিত্রটির অনুগামী, সেই রামচন্দ্রও এই শিক্ষাই দিয়েছেন। প্রজাকল্যাণের স্বার্থে রাজাকে নিতান্ত ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ, প্রেম-ভালবাসা, মোহ-মায়াও যে বিসর্জন দিতে হতে পারে, রাজা রামের জীবনই তার দৃষ্টান্ত। কিন্তু ভারতের বর্তমান শাসকরা শাসকের সে ধর্মের ধারেপাশেও নেই। অতএব আমাদের ভারতও প্রতিশ্রুত ‘রামরাজ্যের’ ধারেপাশে নেই।

Advertisement

গুরমেহের কউর আঁচটা সাংঘাতিক ভাবে টের পাচ্ছেন এখন। রামানুগামী হওয়ার নামে আসলে অনেকেই যে বিপথগামী, তা ধর্ষণের হুমকিতে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। দেশের শাসক দলের অনুগত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের অনুগত নন গুরমেহের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় হেঁকে জানিয়েছেন, দৌরাত্ম্য যতই চলুক, তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের আগ্রাসনে ভীত নন। এরই প্রতিক্রিয়ায় ধর্ষণের হুমকি এসেছে! বিশদে এসেছে।

অসহিষ্ণুতার আর একটা রূপ প্রকাশ্যে এল এই ঘটনায়। তবে একে শুধু অসহিষ্ণুতা বললে কিছুই বলা হয় না আসলে। অসংবেদনশীলতা, অশিক্ষা, বর্বরতা, মূল্যবোধহীনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অসভ্যতা, মূঢ়তা, আদর্শহীনতা— এই সব ধরনের হীনতা এবং নীচতার সুস্পষ্ট নিদর্শন এই হুমকি।

Advertisement

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ রাজনৈতিক তথা সাংগঠনিক ভাবে প্রসারিত হতে চাইছে। বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন এই লক্ষ্য পূরণ করা সবচেয়ে সহজ। তাই যত দ্রুত সম্ভব লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে সম্ভবত। কিন্তু রাজনীতিতে নিজেদের হাতেখড়ির কালেই এই ‘বিদ্যার্থী’রা ভুলে গিয়েছেন যে রাজনৈতিক ভাবে প্রসারিত হতে গেলে রাজনৈতিক প্রসারতার প্রয়োজন। ক্ষমতার দম্ভ আর পেশীর আস্ফালনে সব উদ্দেশ্য সাধিত হয় না।

গুরমেহের কউর শহিদের মেয়ে। তাঁর বাবা কার্গিলের যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা সব শহিদের গায়ে নিজেদের অদৃশ্য স্টিকার লাগিয়ে নিজেদেরকে দেশভক্তি তথা জাতীয়তাবাদের একচেটিয়া ইজারাদার প্রমাণ করতে সাম্প্রতিক কালে ব্যগ্র, তাঁরা এই শহিদকন্যাকেও দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দিতে পিছপা হননি। রাজনৈতিক মুর্খামির কোন অংশটুকু আর বাদ রইল!

‘রামানুগামী’ বিদ্যার্থীদের রাজনীতির নমুনা যদি এই হয়, তা হলে আরও হাজারটা রামজস কাণ্ড ঘটতে পারে, কিন্তু রামরাজ্য কিছুতেই আসবে না। হলফ করে বলে দেওয়া যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন