শর্ত রাখিয়াছেন কলিকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীরা। শনিবারে কাজ করিবার শর্ত। কলিকাতা-সহ দেশের অন্যত্র হাই কোর্টে জমিয়া থাকা মামলার পরিমাণ বিপুল। অথচ আদালতে শনি এবং রবি— দুই দিন ছুটি। এই অবস্থার প্রেক্ষিতেই বকেয়া ফৌজদারি আপিল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র আইনজীবীদের অনুরোধ জানাইয়াছিলেন শনিবার দিনটিকে কাজের দিনে পরিণত করা হউক, অর্থাৎ সপ্তাহে ছয় দিন আদালতের কাজ চলুক। কিন্তু কলিকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীদের তিনটি সংগঠন এই প্রস্তাব গ্রহণ করে নাই। সরাসরি নাকচ করিয়াছে বলা চলিবে না, কিন্তু শনিবারে কাজ করিবার একটি শর্ত আরোপ করিয়াছে। শর্তটি হইল, কলিকাতা হাই কোর্টে শূন্যপদগুলি পূরণ করিয়া কর্মরত বিচারকের সংখ্যা অন্তত ৭০ করিতে হইবে। তবেই তাঁহারা শনিবার, এমনকী প্রয়োজন হইলে রবিবারেও কাজ করিবার কথা ভাবিতে প্রস্তুত।
সত্য, কলিকাতা হাই কোর্টে বিচারপতিদের অনেক পদ শূন্য পড়িয়া আছে। অনুমোদিত পদসংখ্যা ৭২ হইলেও বর্তমানে হাই কোর্টে কর্মরত বিচারপতির সংখ্যা মাত্র ৩১। তাঁহাদের মধ্যে চার জন আগামী বৎসরের গোড়ায় নির্ধারিত সময়ে অবসর লইলে সেই সংখ্যা আরও কমিবে। এবং, বিচারপতি নিয়োগ লইয়া কেন্দ্রীয় সরকার ও বিচারবিভাগের টানাপড়েন অব্যাহত থাকায়, আশঙ্কার কারণ আছে, এই সমস্যার দ্রুত সমাধানও হইবে না। সুতরাং সমস্যা আছে। সেই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিচারপতিদের সক্রিয় উদ্যোগও নিশ্চয়ই কাম্য। কিন্তু এই বাস্তব স্বীকার করিয়া লইয়াও প্রশ্ন তোলা যায় শর্ত চাপাইবার পদ্ধতিটি লইয়া, বিশেষত যেখানে শনিবারে বিচারবিভাগের কাজ করিবার দৃষ্টান্তও আছে। গত বৎসর এপ্রিল মাসে দিল্লি দূষণসহ আরও কিছু মামলার শুনানির জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালত শনিবার দিনটিকে বাছিয়া লইয়াছিল। এই বৎসরের সেপ্টেম্বর মাসেই ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শনিবারও কাজ করিতে শুরু করেন জমিয়া থাকা মামলার সংখ্যা কমাইবার জন্য। এই মানসিকতাই কাম্য। মামলার পরিমাণ এবং তজ্জনিত কারণে বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা যে দেশের এক প্রধান সমস্যা, সেখানে ছুটি লইয়া দর কষাকষির কোনও স্থান নাই।
কিন্তু কলিকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীরা চিরাচরিত ছুটি-সংস্কৃতিকেই আঁকড়াইয়া ধরিয়া রাখিতে চাহেন। লম্বা গ্রীষ্মাবকাশ, পূজার ছুটি এবং বড়দিনের ছুটির পরও বিবিধ কারণে কাজ না-করিবার এহেন মানসিকতার জন্য অতীতেও তাঁহারা বহু বার সমালোচিত হইয়াছেন। বস্তুত জাস্টিস অরুণ মিশ্র হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পথে শপথ গ্রহণ করিবার দিনই তাঁহার ‘সম্মানার্থে’ অর্ধদিবস ছুটির ঐতিহ্য লইয়া কটাক্ষ করিয়াছিলেন। ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরও তাঁহার কার্যকালে এই ছুটি-সংস্কৃতির অবসান ঘটাইতে চাহিয়াছিলেন, সফল হন নাই। অর্থ লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত অসংখ্য মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিনি শনিবার কাজ করিবার প্রস্তাব দিলেও তাহা গৃহীত হয় নাই। বরং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সম্মান প্রদর্শন, অত্যধিক গরম, দাবি না মেটা ইত্যাদি রকমারি কারণে কর্মবিরতি পালনের ধারাটি সমানে চলিতেছে।