COVID-19 Waste

অসচেতন

কালক্রমে কোভিডের টিকা যদি বা সহজপ্রাপ্য হয়, দূষিত বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থা না হইলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমিবে না।  

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিরুদ্দেশ হইয়াছে দেড় লক্ষ কিলোগ্রাম কোভিড বর্জ্য। কিংবা, আড়াই লক্ষ কিলোগ্রাম। কত বর্জ্য, কোথায় তাহা উধাও হইল, কেহ বলিতে পারে না। কোভিড-আক্রান্তদের নিকটে আসিতে সকলে যখন সন্ত্রস্ত, তখন কোভিড রোগীর ব্যবহৃত, সংক্রমিত বর্জ্য অনায়াসে মিশিতেছে সাধারণ বর্জ্যে। ইহার অন্যতম কারণ পুরসভার একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত। গৃহবন্দি রোগীদের ঘর হইতে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ করিবার দায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছে কয়েকটি সংস্থার উপরে। কিন্তু কোভিড রোগীর বর্জ্য সংগ্রহ করিলে রোগীর পরিবার সাফাই সংস্থাকে পাঁচশো টাকা দিবে— পুরসভার এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ প্রকল্পটিকেই বিপন্ন করিয়াছে। গ্রাহককে টাকা দিতে বাধ্য করিবার কোনও উপায়, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার হাতে নাই। অপর দিকে, টাকা চুকাইবার সঙ্গতি অনেক কোভিড-আক্রান্তের পরিবারের না-ও থাকিতে পারে। আবার অনেকে সামর্থ্য থাকিলেও টাকা দিতে অসম্মত। ফলে কোভিড বর্জ্য সাধারণ আবর্জনার সহিত পথে ফেলিয়াছে গৃহস্থ। তাহার যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ ও বিনষ্টি হয় নাই। বিপুল পরিমাণ কোভিড বর্জ্য রাজ্যের ছয়টি ভারপ্রাপ্ত সংস্থার নিকট সংগৃহীত হয় নাই— কোথায় গিয়াছে, তাহাও কাহারও জানা নাই।

Advertisement

সমস্যার মূলে রহিয়াছে বর্জ্য সম্বন্ধে অসচেতনতা, ঔদাসীন্য। সরকারের তরফেও, নাগরিকের তরফেও। কোভিড বর্জ্যের তদারকি করিবার জন্যেই একটি কমিটি গঠন করিয়াছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কোভিড-আক্রান্তদের একটি বড় অংশই যে বর্জ্য সরাইবার জন্য টাকা দিতে রাজি হন নাই, সে কথাও কমিটির সদস্যদের অজানা ছিল না। জৈব ও চিকিৎসাজনিত বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের ভারপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি তাহা কমিটিকে জানাইয়াছিল। পুরকর্তাদের যেখানে কঠোর হইবার প্রয়োজন ছিল, সেখানে তাঁহারা কেবলমাত্র সদিচ্ছার উপরে নির্ভর করিলেন। ফলে বিপুল ঝুঁকির সম্মুখীন হইতে হইল রাজ্যবাসীকে। অন্য দিকে, জঞ্জাল বর্জন বিষয়ে এই শহর, বা এই রাজ্যের, সচেতনতা খুব উচ্চ দরের নহে। ২০১৬ সালে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন পাশ হইলেও কাজ হয় নাই, কারণ দৈনিক উৎপাদনের হিসাবে রাজ্য পিছাইয়া। যাহার অর্থ, বর্জ্য পৃথকীকরণ হইতেছে না। আবর্জনার সহিত পতঙ্গবাহিত রোগের সম্পর্ক জানিয়াও ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর সহিত ‘সুস্থ ভারত’-এর সম্পর্ক নাগরিকরা দেখিতে পান না। কোভিড-কালেও বর্জ্যবিধি অবাধে লঙ্ঘিত হইয়াছে। তাহাতে বর্জ্য হইতে অতিমারি ছড়াইবার আশঙ্কা যথেষ্ট। সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে কাজ করিতেছেন পুরসভার সাফাই কর্মচারীরা, যাঁহারা সর্বদা সুরক্ষার সরঞ্জাম পান না। তদ্ব্যতীত রহিয়াছেন আরও অগণিত জঞ্জালজীবী। বর্জ্য সরাইবার যে কাজটি চরম সতর্কতার সহিত করিবার কথা ছিল, তাহা কার্যত চরম তাচ্ছিল্যে ঘটিতেছে। শহর ও মফস্সলের নানা এলাকায়, উন্মুক্ত স্থানে ব্যবহৃত পিপিই, পরিত্যক্ত মুখোশ পড়িয়া থাকিতে দেখা যাইতেছে।

কোভিড অতিমারি বর্জ্য উৎপাদন বহু গুণে বাড়াইয়া দিয়াছে। হাসপাতাল ও গৃহস্থালি হইতে সংগৃহীত বর্জ্য জৈব সংক্রমণ এবং প্লাস্টিকের প্রাধান্য, উভয় কারণেই চিন্তার বিষয়। দূষণ ঘটিতেছে বহু স্তরে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেবলই চিকিৎসা নহে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার প্রধান উপায় রোগ প্রতিরোধ, যাহার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্তি। তাহা উপেক্ষিত হয় বলিয়াই অধিক ব্যয়ে, অধিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই সত্যটি না বুঝিবার কথা নহে, কিন্তু বুঝিয়াও তাহাকে কাজে লাগাইতে ভুল হইয়া যায়। রাষ্ট্রের তরফেও, নাগরিকের তরফেও। কোভিড-এর মতো রোগ সেই ভ্রান্তিরই অপেক্ষা করিয়া থাকে। কালক্রমে কোভিডের টিকা যদি বা সহজপ্রাপ্য হয়, দূষিত বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থা না হইলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমিবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন