farmers

উপদেশ যথেষ্ট নহে

পঞ্জাব-হরিয়ানাতেও পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি স্পর্ধা দেখাইয়া একই সঙ্গে গ্রামর পর গ্রামে খেত জ্বালাইয়াছেন চাষিরা। সংঘাতের পথে সমাধান মিলিবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০৭
Share:

ছবি পিটিআই।

চাষিকে কেবল উপদেশ দিয়া লাভ নাই, তাঁহাদের যথাযথ প্রযুক্তি দিতে হইবে। ভারতে প্রতি বৎসর পঞ্চাশ কোটি টন ফসল-অবশিষ্ট উৎপন্ন হয়। তাহার অধিকাংশই পশুখাদ্য বা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হইলেও, নয় কোটি টনের কিছু অধিক প্রতি বৎসর পুড়াইয়া দেন চাষিরা। তাঁহাদের নিকট সময় এবং টাকা বাঁচাইবার ইহাই সহজ উপায়। ফসলের গোড়া পুড়াইবার জন্য যাঁহারা চাষিদের অসচেতন প্রতিপন্ন করিয়া, অথবা গ্রেফতার করিয়া দায় সারিতে চাহেন, তাঁহারা মনে রাখিতে পারেন— দগ্ধ ফসলের দূষিত বায়ু ও কঠিন অনুর্বর মাটি চাষিকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে। খড় নষ্ট হইবার জন্য পশুখাদ্যের মূল্য বাড়িয়া যায়। এই সকল সমস্যা সত্ত্বেও যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের নানা রাজ্যের চাষিরা ফসলের গোড়া জ্বালাইতেছেন, তাহার কারণ কৃষির প্রযুক্তি তাঁহাদের প্রয়োজন মিটাইতে ব্যর্থ। বর্তমানে ফসল কাটিবার যে যন্ত্র বা ‘হার্ভেস্টার’ পাওয়া যায়, তাহা ফসলের গোড়ার বেশ কিছুটা রাখিয়া শস্য কাটিয়া লয়। অতঃপর ফসলের গোড়া উঠাইবার কোনও সহজ উপায় চাষিদের হাতে নাই। শ্রমিক নিয়োগ করিবার খরচ তাঁহাদের সাধ্যাতীত। পরিবেশের স্বার্থে বাড়তি খরচ করিতে যেখানে ধনীরাও নারাজ, সেখানে দরিদ্র চাষির নিকট সেই আশা অন্যায়।

Advertisement

পঞ্জাব-হরিয়ানাতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়াইবার অভ্যাস বাড়িবার ফলে রাজধানী দিল্লির দূষণ মাত্রা ছাড়াইয়াছে। ২০১৫ সাল হইতে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করিয়াছে। ইতিমধ্যে নানাবিধ সমাধানের প্রস্তাব হইয়াছে। যথা, সরকার ফসলের গোড়া উঠাইতে সুলভ মূল্যে যন্ত্র ভাদিড়া বে। ‘হ্যাপি সিডার’ যন্ত্রের সাহায্যে চাষি একই সঙ্গে ধানের গোড়া উঠাইতে এবং গম বুনিতে পারিবেন, জমি কর্ষণের প্রয়োজন হইবে না। অথবা জৈব রাসায়নিকের বড়ি জলে গুলাইয়া ছড়াইলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফসলের গোড়া পচিয়া মিশিয়া যাইবে মাটিতে। খরচ সামান্য, মাটি উর্বর হইবে। এই সমাধানগুলি ব্যবহার করিয়া কেহ উপকৃত হন নাই, এমন নহে। কিন্তু, এগুলি সকলের নিকট পৌঁছায় নাই, সমান ভাবে সমাদৃতও হয় নাই। ফলে ফসলের গোড়া পুড়াইবার কুপ্রথা কমিবার লক্ষণ নাই। এ বৎসর কেবল পঞ্জাবে সেপ্টেম্বর হইতে নভেম্বরের মধ্যে তিয়াত্তর হাজারেরও অধিক ফসল পুড়াইবার ঘটনার অভিযোগ মিলিয়াছে, যাহা গত চার বৎসরে সর্বোচ্চ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার তাহাকে নিয়ন্ত্রণ করিতে আইন প্রয়োগ করিতেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার এ বৎসর দুই হাজারেরও অধিক চাষির বিরুদ্ধে পুলিশে মামলা রুজু করিয়াছে। এই লইয়া কৃষক সংগঠনগুলির সহিত সরকারের বিলক্ষণ সংঘাত বাধিয়াছে। পঞ্জাব-হরিয়ানাতেও পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি স্পর্ধা দেখাইয়া একই সঙ্গে গ্রামর পর গ্রামে খেত জ্বালাইয়াছেন চাষিরা। সংঘাতের পথে সমাধান মিলিবে না। চিন ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ফসলের অবশিষ্টকে নানা প্রকার শিল্পে কাজে লাগানো হইয়া থাকে। এ দেশে তাহার প্রক্রিয়াকরণের পরিকাঠামো প্রস্তুত হয় নাই, শিল্পে তাহার উপযোগিতাও সামান্য। অথচ গ্রামীণ জীবনে তাহার প্রয়োজন কমিতেছে। অতএব এক দিকে ফসলাবশিষ্টের ব্যবহার বাড়াইবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। অপর দিকে চাষির সম্মুখে সুলভ এবং সহজ বিকল্প রাখিতে হইবে। নিবিড় জনসংযোগ ও প্রশিক্ষণ, এগুলিই চাষিকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফিরাইয়া আনিবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন