সম্পাদকীয় ২

ম্যাজিক

তেলের দাম কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণে বাড়িতেছে। তাহার প্রথমটি হইল ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফের খড়্গহস্ত হইয়া উঠা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০১:২৪
Share:

ম্যাজিক নাই, কে বলিল? কর্নাটকে না হয় শেষ অবধি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের ম্যাজিক কাজ করিল না, ইয়েদুরাপ্পার পক্ষে থাকা বিধায়কের সংখ্যা ১০৪ হইতে বাড়িয়া কিছুতেই ১১২ হইল না। কিন্তু, কর্নাটকের সৌজন্যে গোটা দেশ ম্যাজিক দেখিল বিলক্ষণ। কোনও এক জাদুমন্ত্রে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগের ১৯ দিন পেট্রোল-ডিজেলের দাম ন যযৌ ন তস্থৌ থাকিল। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম চড়চ়়ড় করিয়া বাড়িল, কিন্তু দেশে একটি পয়সা এ দিক ও দিক হইল না। আর, যেই নির্বাচন মিটিল, তেলের দামও ঊর্ধ্বগামী। কলিকাতার বাজারে পেট্রোল প্রায় আশি টাকা ছুঁইয়াছে। ম্যাজিকই বটে, কারণ এখন তো আর তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করিয়া দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজারের চলন অনুসারে তাহা বাড়ে-কমে। তাহা হইলে এই ১৯ দিনের স্থিতাবস্থাকে ম্যাজিক ভিন্ন আর কী ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? দুর্জনে অবশ্য বলিবে, সেই ম্যাজিকের পিছনে প্রধানমন্ত্রীর হাত রহিয়াছে। ভোটের মুখে তেলের দাম বাড়াইয়া তিনি বিপদ বাড়াইতে চাহেন নাই। তাহাই যদি হয়, তবে আরও অনেক ম্যাজিক প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজার যে তেলের দাম যে ভঙ্গিতে বাড়িতেছে, তাহাতে ২০১৯-এর আগে চিন্তা বিপুল। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান সৌদি আরবকে নিজের উদ্বেগের কথা জানাইয়াছেন, এবং দাম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝাইয়া বলিয়াছেন। কিন্তু, গড়িয়াহাটের বাজারের সহিত যেহেতু তেলের বাজারের পার্থক্য আছে, ফলে দর কষিয়া খুব সুবিধা হইবে বলিয়া মনে হয় না।

Advertisement

তেলের দাম কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণে বাড়িতেছে। তাহার প্রথমটি হইল ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফের খড়্গহস্ত হইয়া উঠা। ইরানের তেলের জোগান বন্ধ হইলে তাহার কী ফল হইবে, বাজারে সেই আশঙ্কাতেই অপরিশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাহার উপর যোগ হইয়াছে ভেনেজুয়েলার সংকট। সমস্যাগুলির চরিত্র এমনই যে ভারতের উদ্বেগে তাহার ইতরবিশেষ হইবার নহে। ২০১৮ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই তেলের দাম বাড়িয়াছে ৪০ শতাংশ। গত এক বৎসরে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৮০%। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে ঠেকিয়াছে। এবং, আরও অনেকখানি বাড়িবে বলিয়াই আশঙ্কা। তাহাতে দেশের বাজারেও তেলের দাম স্বভাবতই বাড়িবে, অবশ্য যদি না ফের ম্যাজিক হয়। কিন্তু, সাধারণ মানুষের চটিয়া যাওয়াই একমাত্র বিপদ নহে। বস্তুত, তাহা তুলনায় গৌণ। মূল বিপদ হইল, তেলের দাম বাড়িলেই ঘাটতির পরিমাণও বাড়িতে আরম্ভ করিবে। চলতি খাতে ঘাটতি বাড়িবে, রাজকোষ ঘাটতিও বাড়িবে। প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী, তেলের ব্যারেলপ্রতি দশ ডলার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিলে ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ০.৩ হইতে ০.৪ শতাংশ-বিন্দু কমিয়া যায়। অর্থাৎ, ভোটের মুখে নরেন্দ্র মোদীকে জিডিপির গতিভঙ্গের জন্যও জবাবদিহি করিতে হইতে পারে, তেমন আশঙ্কা অমূলক নহে। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারের গল্প শুনাইতেই পারেন। কিন্তু, ২০১৪ সালে কেন এই কারণটি তাঁহার নিকট গ্রহণযোগ্য ঠেকে নাই, সেই প্রশ্নের কী উত্তর দিবেন তিনি? কোন ম্যাজিকে মুখরক্ষা করিবেন পরাক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন