সম্পাদকীয় ২

বিপরীত ফল

ধমক দিয়া সংস্কার সম্ভব নহে, সে কথাটা এখন সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ সরকার বুঝিতেছে। বেসরকারি হাসপাতালের উপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সূত্রপাত গত বৎসর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৯
Share:

তবে কি হিতে বিপরীত হইল? পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্কট উত্তরোত্তর জটিল ও গভীর হইতে দেখিয়া তেমনই আশঙ্কা হইতে বাধ্য। সংবাদে প্রকাশ, খরচ কমাইবার চাপে পড়িয়া কর্পোরেট হাসপাতালগুলি বিচিত্র উপায় অবলম্বন করিতেছে। একটি হাসপাতাল তাহার সকল চিকিৎসককে বেতন বন্ধ করিয়া কেবল কমিশন দিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। অপরাপর হাসপাতালও তেমন নানা পদ্ধতি অনুসরণ করিবার কথা বিবেচনা করিতেছে। ইহা চিন্তার কথা। চিকিৎসকের পারিশ্রমিক কমিশন প্রথায় দিবার সিদ্ধান্ত রোগীর যথাযথ চিকিৎসা ও শুশ্রূষার পক্ষে অনুকূল হইবে, তাহার সম্ভাবনা কতটুকু? সর্বোপরি, সম্পূর্ণ সময়ের নিয়োজিত কর্মী না থাকিলে কোনও প্রতিষ্ঠান উৎকর্ষে পৌঁছাইতে পারে না। প্রতিষ্ঠান উত্তম না হইলে পরিষেবা উত্তম হইবে কী করিয়া? প্রশ্নটি চিকিৎসকের সাম্মানিকেই সীমিত নহে।

Advertisement

ব্যয়সংক্ষেপের যে সব উপায় হাসপাতালগুলি অবলম্বন করিতে চলিয়াছে, তাহার কোনওটিই চিকিৎসার মানের পক্ষে ভাল হইবে কি না, রোগীর পক্ষে স্বস্তিদায়ক হইবে কি না, সেই প্রশ্নগুলি পীড়া দিতেছে। অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে খরচ কমাইবার প্রসঙ্গটি এড়াইতে চাহেন, তাহাতে অস্বস্তি আরও বাড়িতেছে।

ধমক দিয়া সংস্কার সম্ভব নহে, সে কথাটা এখন সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ সরকার বুঝিতেছে। বেসরকারি হাসপাতালের উপর রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার সূত্রপাত গত বৎসর। পর পর কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনায় কলিকাতার কিছু কর্পোরেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠিয়াছিল। তাহাদের পরিষেবা স্বচ্ছ, সংবেদনশীল ও দায়বদ্ধ করিবার দাবি জোরদার হয়। ইহারই সূত্র ধরিয়া তৃণমূল সরকার বেসরকারি হাসপাতাল পরিষেবার সর্বোচ্চ কী মূল্য বাঁধিতে চাহিয়াছে, সরকারি স্বাস্থ্য বিমার অন্তর্ভুক্ত রোগীদের পরিষেবা মূল্য সকল রোগীর জন্য ধার্য কেন করা হইবে না, সে প্রশ্ন তুলিয়াছে। অনুমান, অনেক হাসপাতালই সরকারের অভিপ্রায় আন্দাজ করিয়া প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে নাই। কিন্তু তাহাদের উভয়সঙ্কট। এক দিকে সরকারি স্বাস্থ্য বিমায় চিকিৎসিত রোগীদের বহু বকেয়া জমিতেছে। অপর দিকে রোগীদের একটি বড় অংশ নেতা কিংবা পুলিশের মধ্যস্থতায় হাসপাতালের বিল কমাইতেছে, বা অংশমাত্র দিতেছে। প্রতিবাদ করিলে ভাঙচুর, মারধর ঘটিতেছে। ভয় ও অনাস্থা গ্রাস করিয়াছে পরিষেবার এই ক্ষেত্রটিকে।

Advertisement

সমাধান কঠিন। কিন্তু নৈতিক প্রশ্নটি ভুলিলে চলিবে না। বেসরকারি পরিষেবার উপর এমন শর্ত চাপাইবার অধিকার কি সরকারের আছে? ক্রেতা তথা নাগরিকের সুরক্ষার দায় অবশ্যই সরকারের। কিন্তু সেই দায় রোগী তথা গ্রাহকের অভিযোগের মীমাংসা করিবার ব্যবস্থা নির্মাণেই সীমাবদ্ধ। চিকিৎসা হইতে যাহাতে কেহ বঞ্চিত না-হয়, তাহা দেখিবার জন্য সরকারি হাসপাতাল রহিয়াছে। বেসরকারি হাসপাতাল প্রতারণা করিলে, চিকিৎসায় গাফিলতি করিলে বিচার করিবে ক্রেতা আদালত, মেডিক্যাল কাউন্সিল, সরকার-নিয়োজিত চিকিৎসক কমিটি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার মূল্য নিয়ন্ত্রণের দায় বাজারের উপরেই ছাড়িতে হইবে। সেখানে জোর করিতে গেলে চিকিৎসক ও রোগী, উভয়েরই ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা অধিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন