NRC

এনআরসি তালিকায় নাম থাকলেই নিশ্চিন্ত হবেন না, এই খেলা কিন্তু চলতেই থাকবে

শুধুমাত্র টিকে থাকার দায়ে কংগ্রেস, এজিপি, সিপিএম, অন্যান্য ছোটখাটো বামপন্থী দল, এমনকি আসু পর্যন্ত এই অসহায় দ্বিচারিতা সম্প্রসারিত।

Advertisement

পার্থপ্রতিম মৈত্র

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:০৭
Share:

বুড়াবুড়ির এনআরসি সেন্টারে ভিড় স্থানীয়দের।

অসম জুড়ে যেন হাহাকারের রোল। মাত্র ১৯ লক্ষ? এত ঢাক ঢোল পিটিয়ে, এত অর্থ, সময়শক্তি, উৎকণ্ঠা উল্লাস, আত্মহত্যার পর মাত্র ১৯? বিগত কয়েক বৎসরে আমাদের মানসিকতার এতই অধঃপতন ঘটেছে যে, প্রায় ২০ লক্ষ মানুষও আমাদের মনে রেখাপাত করে না। কিন্তু এই ১৯ লক্ষমানুষ গোটা অসম আন্দোলন, অসম চুক্তি, বিজেপি সরকারের অনুপ্রবেশকারী মুসলিম বিতাড়ন, সব কিছুকে ধূলিসাৎ করে প্রমাণ করেছে, অস মে বিদেশি অনুপ্রবেশ নেহাতই একটি অকিঞ্চিৎকর ইস্যু, যাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানো হতো। তাই কান্নার রোল-ক্রোধ-ক্ষোভ তাঁদের, যাঁদের নাম ভারতীয়ত্বের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে। তাঁরাও বিমূঢ়, যাঁরা আশা করেছিলেন ৪১ বেড়ে কমপক্ষে ৫০-এ দাঁড়াবে, এবং ত্রুটিহীন এনআরসির জন্য আর এক দফা সংগ্রামের অবকাশ পাবেন। শুধু তাঁদেরই শূন্যদৃষ্টি, যাঁদের নাম এ বারও উঠল না তালিকায়। মাত্র ১৯ লাখের পাশে কার আর দাঁড়ানোর উৎসাহ থাকে!

Advertisement

অতএব অসমের এনআরসি প্রক্রিয়া এখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হল কি? বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে যে, একটি বিশাল অংশের প্রকৃত ভারতীয়ের নাম বাদ গেছে তালিকা থেকে। অপর দিকে বিপুল সংখ্যক প্রকৃত বিদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। অতএব এই তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। এনআরসি-তে নাম থাকা না থাকায় এখন আর কিছুই আসে যায় না। যাঁদের নাম নেই তাঁরা যাবেন ফরেনার্স ট্রাইবুনালে, যেখানে বিচার হবে তিনি প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক কিনা, অর্থাৎ তাঁর নাম বাদ দেওয়া সঠিক হয়েছে কি না। যাঁরা সঙ্গতি না থাকার কারণে ট্রাইবুনালে যেতে পারছেন না, সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে তাঁদের নাম ট্রাইবুনালে পাঠাতে হবে এবং ট্রাইবুনালে বিচার হবে যে এনআরসি-তে তাঁর নাম না থাকা সংগত কি না। প্রশ্ন উঠতে পারে যাঁরা সন্দেহভাজন তাঁদের জন্যই এ বার ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ইত্যাদি যাবতীয় আদালত। যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় হিসেবে নিজেদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছেন, তাঁরা তো আজকের পর থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হল, এই প্রশ্নের তো মীমাংসা হয়নি যে চূড়ান্ত এনআরসি-তে প্রকৃত ভারতীয় এবং প্রকৃত বিদেশি কে! যেহেতু এই তালিকাকে সবাই অস্বীকার করতে চাইছে, বলা হচ্ছে এটি ভুলে ভরা, এবং যেহেতু প্রচুর বিদেশির নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং যেহেতু প্রচুর প্রকৃত ভারতীয় নাম বাদ গিয়েছে, ফলে এই স্বীকৃতি অস্বীকৃতি, সংযোজন-বিয়োজনের খেলা চলতেই থাকবে অনন্তকাল। ডেমোক্লিসের খাঁড়া মানুষের ঘাড়ের উপর ঝুলতে থাকবে, এবং যে কোনও সময়ে তা নেমে আসতে পারে বিরোধী স্বরের উপর।

প্রশ্ন হল— এনআরসি যদি পর্বতের মূষিক প্রসব হয়, তবে এই চার বছরের পরিক্রমা, হাজার হাজার কোটি টাকার অপব্যয়, লক্ষ মানুষের শ্রম এনার্জি ব্যয়, উৎকণ্ঠা হয়রানি, এই সব কিছুর পিছনে সত্যিই কি কোনও উদ্দেশ্য ছিল? শাসক দল— কেন্দ্রের শাসকদল এবং রাজ্যের শাসক দল— অর্থাৎ কিনা বিজেপি এই প্রক্রিয়ায় লাভবান হবার কথা ভেবেছিল। কিন্তু প্রক্রিয়াটি তো বিজেপি শুরু করেনি। এটা কংগ্রেস আমলে শুরু হয়েছে এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে। সম সময়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি ফলি নরিম্যান রায় দেন— শুধুমাত্র অসম প্রদেশে নাগরিকপঞ্জি নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং এই নবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার শুধু সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে কাজটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে মাত্র। তবু কেন আমরা বিজেপির বিরোধিতা করছি? নাগরিকপঞ্জি নবায়ন একটি সঠিক প্রক্রিয়া হলে, কেন আমরা এনআরসির সার্বিক বিরোধিতা করেছি? তার কারণগুলো ব্যাখ্যা করা দরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘আমরা কি এ দেশের নাগরিক নই? আমাদের কি আত্মহত্যা করতে হবে​

বসুধৈব কুটুম্বকম-এর দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিতে কমবেশি সব দলই করে থাকে। সেটা ধর্মীয়, ভাষিক অথবা জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা যাই হোক না কেন। কিন্তু আগে সেটি সীমিত থাকতো সমাজবিরোধীদের মধ্যেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই রক্তলোলুপ হিংস্রতা, তার ভিতর পশুশক্তিকে আবাহন করা, জাগ্রত করা, এসব বিজেপি এত নিপুণভাবে সম্পন্ন করেছে যে, তাকে প্রতিহত করার অস্ত্র কারওরই জানা নেই। বিজেপির এই তমসাব্রত, সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের অশিক্ষা, পশ্চাৎ গমন এবং মিথ্যার প্রাবল্য তমসাচ্ছন্ন করে রাখে নাগরিকদের, যাঁরা এই প্রক্রিয়ার অভিঘাতে হয়ে ওঠেন হিংস্র লোভী রক্তপিপাসু। এই ঘৃণার আবহে এটি খুব স্বাভাবিক ছিল যে, একটা পর্যায়ে গিয়ে এনআরসি একটি পূর্ণাঙ্গ অশ্বডিম্ব প্রসব করবে। এনআরসি ছিল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল। কোনও একজন আবেদনকারী, তিনি ভারতীয় না বিদেশি সেটি যাচাই করার দায়িত্ব ছিল তাঁদেরই উপর। অসমের দীর্ঘকালের ইতিহাসে, সেই ১৯৪৮ সাল থেকে, অসমীয়াভাষী এবং বঙ্গভাষীদের ভাষাগত বিদ্বেষ এবং বিরোধ চলে আসছে। যেহেতু ধরে নেওয়া হচ্ছে এই বিদেশিরা মূলত বাংলাদেশ প্রত্যাগত, দেশভাগের সময়ে, স্বাধীনতা উত্তর যুগে, অসম চুক্তি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পর্যায়ে অসমে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাঙালি (শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীর বিভাজন বিজেপির আমদানি), সেহেতু এও ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঙালি মানেই বাংলাদেশ থেকে আগত। অতএব বাঙ্গালি মানেই সন্দেহের তালিকাভুক্ত। এর সঙ্গে ভারতের সব রাজ্য থেকে আগত সাধারণ মানুষও (ধনবান অর্থবান ব্যক্তিসমূহ নয়, শুধু আলি কুলি বঙ্গালি) অসমের কৃষ্টি সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য দায়ী, এই বোধে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক দল উপদল হাওয়া দিয়ে গেছে। এনআরসি ঝাড়াই-বাছাই পর্বে এ সবেরই প্রভাব পড়েছিল। কেননা মানুষ নৈর্ব্যক্তিক হতে পারে না। অতএব বিজেপি আজ যতই দায়িত্ব রঞ্জন গগৈ বা প্রতীক হাজেলার মতো ব্যক্তির ওপর চাপাক না কেন, এটাই হবার ছিল, হয়েছে। প্রতিটি এনআরসি কেন্দ্রে স্থানিক সম্প্রদায় তার প্রাপ্য মাংসখণ্ডের ভাগ নিয়েছে।

প্রায় ৩ কোটি ৩০ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৯ লক্ষ ৬ হাজার জনের নাম তালিকাচ্যুত হয়েছে। খসড়া তালিকায় বাদ ছিল প্রায় ৪১ লক্ষ মানুষের নাম। ৩১ অগস্ট প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় যে ১৯ লক্ষের নাম রইল না, তাঁদের মধ্যে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাননি প্রায় ৫ লক্ষ, ২ লক্ষের বেশি ডি-ভোটার ও তাঁদের পরিবার, ১ লক্ষের কিছু বেশি ঘোষিত বিদেশি, আরও লক্ষাধিক সন্দেহভাজন যাঁদের কেস পেন্ডিং। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৯ লক্ষ। অর্থাত্ এর বাইরে মোটামুটি ১০ লক্ষ মানুষ এই এনারসি প্রক্রিয়ায় তালিকাচ্যুত হলেন। তাও তাঁদের সুযোগ থাকছে ট্রাইবুনালে নিজেদের প্রকৃত ভারতীয় প্রমাণ করার। সেখানেও না হলে এবং সঙ্গতি থাকলে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট। শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা যাবে হাতে রইল পেন্সিল।

ফলে এই এনআরসি কাউকেই খুশি করতে পারেনি। ভিক্টিমদের কথা ছেড়েই দিলাম, এমনকি আসু থেকে বিজেপি কেউ তুষ্ট নয়। বিজেপির ক্ষেত্রে এনআরসি-কে ব্যর্থ প্রমাণিত করা দায় ছিল অনেক বেশি, কেন না তা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনগণকে রুষ্ট না করে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল আনা সম্ভব হচ্ছিল না। বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে যে তালিকাচ্যুত আবেদনকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশ হিন্দু, এত দিন যাঁরা চেষ্টা করেছেন নিজেদের প্রকৃত ভারতীয় প্রমাণ করতে। ট্রাইবুনালেও ব্যর্থ হলে তাঁদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে— অসমীয়া জনগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রবল বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে কবে সংসদের দুই সদনে পাশ করিয়ে বিজেপি তার বহুবিজ্ঞাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু করে, তার মুখাপেক্ষী হয়ে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবার নতুন করে প্রমাণ করতে হবে যে, তাঁরা প্রকৃত বিদেশি এবং ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে তো? প্রশ্নটি বিজেপির পক্ষে অস্বস্তিকর কেন না বিপুলসংখ্যক শরণার্থী, উদ্বাস্তু হিন্দু জনগণ, শুধুমাত্র বিজেপির উপর নির্ভর করেই এনআরসি-কে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট বিল আনার কথা বলে বিজেপি তাদের প্রলুব্ধ করে। মূল অর্থ যাই হোক না কেন, বিজেপির কল্যাণে অনুপ্রবেশকারী মানে দাঁড়িয়েছে মুসলিম, শরণার্থী মানে হিন্দু। এই বিভাজনে ইন্ধন জুগিয়ে যখন ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে— অনুপ্রবেশকারীরা উইপোকার মতো শুধু ধ্বংস করে এবং ভারতবর্ষের প্রতি ইঞ্চি থেকে অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বার করে তাড়ানো হবে, তখন তাঁকে বি গ্রেড বলিউড সিনেমার ভিলেন মনে হয়।

আরও পড়ুন: এনআরসি তালিকায় ‘দেশহীন’ ১৯ লক্ষ মানুষ, খুশি নয় কোনও দলই​

অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীগুলি, ব্যক্তিজন, তাঁদের করুণ অবস্থার কথা আর নাই বা বললাম। শুধুমাত্র টিকে থাকার দায়ে কংগ্রেস, এজিপি, সিপিএম, অন্যান্য ছোটখাটো বামপন্থী দল, এমনকি আসু পর্যন্ত এই অসহায় দ্বিচারিতা সম্প্রসারিত। যে প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে অমানবিকতা দিয়ে, যে প্রক্রিয়া মধ্যবর্তী পর্যায়ে সম্পূর্ণভাবে অমানবিক, এবং যে প্রক্রিয়া তার শেষ পর্যায়ে তার অমানবিকতার ঘরানা অটুট রেখেছে, সেই এনআরসি ত্রুটিমুক্ত হবে এতটা আশা নিশ্চয়ই তাঁরা করেননি। কিন্তু তাদের বলতে হয়েছে ত্রুটিহীন এনআরসি চাই। এনআরসি নিয়ে অসুবিধা ছিল না, শুধু তা নিখুঁত হলেই হল। নীতি নিয়ে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেস বা সিপিএমের ফারাক ছিল না, কৌশল নিয়ে ছিল। অসমের মুসলিমরা একসময় বিপুল সংখ্যায় নিজেদের মাতৃভাষা অসমীয়া লিখিয়েছিলেন, যদিও তাঁরা ছিলেন আদ্যোপান্ত বঙ্গভাষাভাষি। এমনকি একটা সময় বাংলাভাষা আন্দোলনের বিরোধিতাও করেছিলেন তাঁরা। অসমের অধিকাংশ মুসলিম দারিদ্রের মাপকাঠিতে সবচাইতে নীচের স্তরেরও নীচের দিকে। তাঁদের দুর্ভাগ্য যে— তাঁদের ধর্মীয় নেতারা, রাজনৈতিক নেতারা, পথ প্রদর্শকেরা চিরকাল তাঁদের ভুল রাস্তায় নিয়ে গেছেন এবং আজও নিয়ে চলেছেন। অসমীয়া জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে একটাই কথা বলার। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এঁরাই ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন অসমের অদম্য সমর্থক। অথচ আজ তাঁরাই সবচেয়ে বেশি নিজেদের ভারতীয়ত্ব এবং অন্যদের বিদেশি প্রমাণ করতে ব্যস্ত। টু এভরি হাফ অ্যাকশান, দেয়ার ইজ অপোজিট অ্যান্ড ফুল রিঅ্যাকশান।

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন