ধাপা সঙ্কট

দেশের সকল প্রধান শহরে জঞ্জালের জন্য বিপন্ন নাগরিক। মুম্বইয়ের দেওনার, দিল্লির গাজিপুরের খাদানগুলিও বহু বৎসর পূর্বে পূর্ণ হইয়াছে, তাহাদের অতিব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করিতেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

ধাপার মাঠ অগ্নিগর্ভ। বহু বৎসরের সঞ্চিত জৈব আবর্জনার পচনে জঞ্জালস্তূপের অভ্যন্তরে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হইতেছে। ওই গ্যাস অতিশয় দাহ্য প্রকৃতির। কয়েক দশকের সঞ্চিত গ্যাসে আগুন ধরিলে যে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড ঘটিতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করিয়াছেন। এত দিন পুরকর্তারা তাহা কানে তোলেন নাই। তাঁহারা কর্তব্যপালনে তৎপর হইলে বহু পূর্বেই ধাপার বিকল্প লইয়া চিন্তা করিতেন, কারণ ২০০১ সালেই ধাপার মাঠ ‘ভর্তি’ বলিয়া ঘোষিত হইয়াছিল। অতঃপর সতেরো বৎসরে কলিকাতা চার জন মেয়র দেখিয়াছে, কিন্তু ধাপার উন্মুক্ত মাঠে গোটা শহরের জঞ্জাল ফেলিবার কুৎসিত রীতি বদলাইতে দেখে নাই। ধাপার পঁয়ত্রিশ হেক্টর এলাকায় প্রতি দিন সাড়ে চার হাজার টন জঞ্জাল ফেলিবার কার্যসূচি অব্যাহত। গত কয়েক বৎসরে শহরে একাশিটি ‘কমপ্যাক্টর’ যন্ত্র বসিয়াছে বটে, কিন্তু জঞ্জালের পরিমাণ সেগুলি কতটা কমাইয়াছে? কেন্দ্র ২০১৬ সালে কঠিন বর্জ্য সম্পর্কে কর্তব্যের রূপরেখা প্রকাশ করিয়াছে। পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করিয়া জঞ্জাল বর্জনের সেই সকল বিধি এই রাজ্যে উপেক্ষিত। পচনশীল বর্জ্য হইতে সার বা গ্যাস উৎপাদন, মানববর্জ্যযুক্ত জঞ্জালের জন্য পৃথক খাদান, পুনর্ব্যবহারের যোগ্য বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ, কিছুই হয় নাই। ফলে অবাধে দূষণ ছড়াইতেছে। বিবিধ ধাতু, রাসায়নিক, প্লাস্টিক হইতে নির্গত ক্ষতিকারক অণু জলকে দূষিত করিতেছে। জঞ্জালের পাহাড় হইতে রোগের জীবাণু ছড়াইতেছে।

Advertisement

এই সঙ্কট কেবল কলিকাতার নহে। দেশের সকল প্রধান শহরে জঞ্জালের জন্য বিপন্ন নাগরিক। মুম্বইয়ের দেওনার, দিল্লির গাজিপুরের খাদানগুলিও বহু বৎসর পূর্বে পূর্ণ হইয়াছে, তাহাদের অতিব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করিতেছে। উন্নত দেশগুলিতে জঞ্জাল বর্জনের পূর্বে তাহার প্রক্রিয়াকরণ হয়। ভারত জঞ্জাল উৎপাদনের পরিমাণে উন্নত দেশগুলির সমান, কিন্তু প্রক্রিয়াকরণে তাহার স্থান লজ্জাজনক। এই দেশের সত্তর শতাংশ কঠিন বর্জ্যই কোনও সংস্কার না হইয়া নিক্ষিপ্ত হয়। আক্ষেপ, ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পটি শৌচাগার নির্মাণকে যত গুরুত্ব দিয়াছে, জঞ্জাল বর্জনের সুষ্ঠু পদ্ধতি নিশ্চিত করিতে তাহার সামান্যও দেয় নাই। তাহার ফলে শহরগুলির রাস্তা হইতে যদি বা জঞ্জাল সরিয়াছে, তাহা পর্বতাকারে জড়ো হইয়াছে জাতীয় সড়কগুলির ধারে। মোদীর ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে যত জোর দিয়াছে, জঞ্জাল অপসারণে তত দেয় নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলিকাতায় ‘সৌন্দর্যায়ন’ প্রকল্পে প্রাধান্য পাইয়াছে আলো, উদ্যান, ভাস্কর্য। পরিচ্ছন্নতা উপেক্ষিত।

অতএব নূতন চিন্তা প্রয়োজন। বিকল্প ‘ধাপা’ অনুসন্ধান নহে, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য স্তূপ করিবার অবৈজ্ঞানিক ও অস্বাস্থ্যকর রীতি ত্যাগ করিতে হইবে। তাহার জন্য প্রয়োজন অর্থবরাদ্দ এবং ব্যয়ের নকশায় পরিবর্তন। বর্তমানে জঞ্জালের জন্য পুরসভা একশো টাকা ব্যয় করিলে পঁচাত্তর টাকা জঞ্জাল সংগ্রহে, পনেরো টাকা পরিবহণে, অবশিষ্ট প্রক্রিয়াকরণে ব্যয় হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু জঞ্জালবর্জনের ব্যবস্থায় অর্ধেক টাকা প্রক্রিয়াকরণে ব্যয় হইবার কথা। এই বার তাহাতে মন দিতে হইবে কলিকাতার নূতন মেয়রকে, বিশেষত তিনি যখন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও বটে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন