Durga Puja 2020

প্রাপ্তিরূপেণ

শহর ও রাজ্যের অগণিত আয়োজক পূজার বাজেট কমাইয়া অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য, ত্রাণসামগ্রী লইয়া হাজির হইয়াছেন আমপান-পীড়িত, লকডাউনে কর্মহীন, পরিযায়ী শ্রমিক বা অসহায় মানুষের কাছে। মানবিক প্রাপ্তির ঝুলি কম ভরে নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৯
Share:

ফাইল চিত্র।

কথায় বলে, মানুষ ঠেকিয়া যাহা শিখে, তাহা মনে রাখে আজীবন। এক অতিমারি আসিয়া এই বৎসরে যাহা কিছু শিখাইল, বঙ্গবাসী তাহা বিলক্ষণ মনে রাখিবেন। কোভিডধ্বস্ত সময়ে দুর্গাপূজার ব্যবস্থাপনা দেখিয়া তাহা আরও বেশি অনুভূত হইল। পূজার মুখে হাইকোর্টের রায় উৎসবের উদ্‌যাপনকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করাইয়া দিয়াছিল। জনারণ্য বিনা উৎসব হয় না, আবার মানুষের ভিড় হইলে কোভিডেরও রমরমা, এই অদ্ভুত বৈপরীত্যময় পরিস্থিতিতে পূজা উদ্যোক্তাগণ আতান্তরে পড়িয়াছিলেন। শুধু মণ্ডপে দর্শনার্থীদের অনুপস্থিতিই নহে, করোনা-আবহে পূজা প্রাঙ্গণে চিরাচরিত বিপণি, মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও গুরুতর। সেই দিক দিয়া দেখিলে এই বৎসর অধিকাংশ পূজা কমিটিই লাভের মুখ দেখে নাই।

Advertisement

সর্বার্থে কি ক্ষতিই হইয়াছে? ইতিবাচক কিছুই কি নাই? আদালতের রায় আসিয়াছে পূজার অব্যবহিত পূর্বে— বহু পূজা কমিটি পূর্ব হইতেই অন্য পরিকল্পনা করিয়াছে। কয়েকটি পূজা কমিটি আগেই বলিয়া দিয়াছিল, বাহিরের দর্শকদের সেখানে প্রবেশাধিকার নাই। কয়েকটি পূজা কমিটি এক ধাপ আগাইয়া ‘ভার্চুয়াল পূজা’-র ঘোষণা করিয়াছিল, কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে এখন যে ব্যবস্থা প্রশংসিত হইতেছে। অনেক উদ্যোক্তা মণ্ডপের বাহিরে বড় স্ক্রিন বসাইয়াছেন, দর্শনার্থীরাও তাহাতে পূজা বা আরতি দেখিতেছেন। পূজা কমিটি ও শিল্পীদের সুষ্ঠু পরিকল্পনায় এমন মণ্ডপও তৈরি হইয়াছে যাহাতে দূর হইতেই মণ্ডপের কারুকার্য ও প্রতিমাও দিব্য দেখা যায়। কোভিড-সুরক্ষায় সচেতনতাও কম ছিল না। ছোটবড় প্রায় সমস্ত পূজা উদ্যোক্তাই সামর্থ্য অনুসারে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, জীবাণুনাশক টানেল, এমনকি কোভিড-অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করিয়াছেন। ব্যারিকেডের বাহিরে রাস্তায় ভিড় না হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছেন। প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা কোভিড-বিধি পালন ও ভিড় সামলাইবার দক্ষতার নিরিখে পুরস্কার দিয়াছে। বহু পূজা কমিটি পুষ্পাঞ্জলির উপকরণ, পরে পূজার প্রসাদও বাড়ি বাড়ি পৌঁছাইয়া দিয়াছে। পেন ড্রাইভে বিখ্যাত পূজাগুলির ভিডিয়ো রেকর্ডিং ভরিয়া কলিকাতা পুলিশ ও অনেক সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা অশক্ত একাকী নাগরিকদের দেখাইয়াছে, যাহাতে তাঁহারা পূজার আনন্দবঞ্চিত না হন। শহর ও রাজ্যের অগণিত আয়োজক পূজার বাজেট কমাইয়া অর্থ, বস্ত্র, খাদ্য, ত্রাণসামগ্রী লইয়া হাজির হইয়াছেন আমপান-পীড়িত, লকডাউনে কর্মহীন, পরিযায়ী শ্রমিক বা অসহায় মানুষের কাছে। মানবিক প্রাপ্তির ঝুলি কম ভরে নাই।

অতিমারির ছায়াতেও এই সকল সম্ভব হইল। ইহাতেই প্রমাণ, সদিচ্ছা ও চেষ্টা থাকিলে বিপন্ন সময়েও লক্ষ্য পূরণ হইতে পারে। প্রযুক্তি সহায়ে ভিড় এড়াইয়াও শিল্পসুষমার প্রদর্শন সম্ভব। উপযুক্ত পরিকল্পনায় সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও আনন্দ দুই-ই নিশ্চিত করা যাইতে পারে। কোভিড আসিয়া পূজার রমরমা, বাজেটের বাড়বাড়ন্ত কমাইয়া দিল ঠিকই, কিন্তু ইহাও বুঝাইয়া দিল, বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব আসলে বাহুল্য, দৃষ্টিকটু আতিশয্যে পূর্ণ। কিছু কম হইলেও অসুবিধা নাই, বরং বিপুল আয়োজনের কিয়দংশ বা অনেকাংশে বহু অভাবীর দুর্গতি নাশ হইতে পারে। এই মানবিক শিক্ষাই এই বারের পূজার প্রাপ্তি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন