‘বাংলাদেশের পরীক্ষাটা কঠিন’

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে কলকাতায় কথা বললেন সে দেশের ইতিহাসবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী মুনতাসীর মামুনবাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে কলকাতায় কথা বললেন সে দেশের ইতিহাসবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী মুনতাসীর মামুন

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:১০
Share:

প্রশ্ন: বাংলাদেশের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ শামসুল আরেফিন দাবি করেছেন যে সে দেশের সুশীল সমাজ অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিপন্থী। এই সমাজ শেখ হাসিনার পক্ষে এবং নির্বাচকদের ২০ শতাংশ এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। আপনার মত?

Advertisement

মুনতাসীর মামুন: এ প্রসঙ্গে আমি বলব যে বৃহত্তর সুশীল সমাজের একাংশ অনেক সময়েই কিন্তু নীরব থেকেছেন, এমনকী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও তাঁরা মুখ খোলেননি। হয়তো তাঁরা আওয়ামি লিগকেই ভোট দেবেন, কিন্তু বাংলাদেশের উত্তেজনাময়, বিস্ফোরক রাজনীতির আবহে এঁদের নীরবতা বিস্ময়কর ও অনভিপ্রেত। আমরা এঁদের সুদৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থান প্রত্যাশা করি।

প্র: কিন্তু শিল্পী-সাহিত্যিক বিদ্বজ্জন তো নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ সর্বদাই স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছে...

Advertisement

উ: আপনি ঠিকই বলেছেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, সুশীল সমাজের এই বিশেষ অংশটি তাঁদের গানে কবিতায় সৃষ্টিতে বিশ্লেষণে আওয়ামি লিগকেই সমর্থন জানিয়েছেন। আওয়ামি লিগের প্রতিটি পদক্ষেপ হয়তো বা তাঁরা সমর্থন করেননি, কিন্তু বেসিক সাপোর্ট বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু তাঁরা দিয়ে এসেছেন। এই সার্বিক আনুগত্য, এমনকী অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে প্রশ্নাতীত। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনে এঁদের ভূমিকা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এই সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের অকাট্য প্রমাণ।

প্র: আওয়ামি লিগের রেকর্ডও কি ত্রুটিমুক্ত? এ বারে ঢাকায় গিয়ে দেখেছি, বেশ কিছু নাগরিক তাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। আত্মঅহমিকার অভিযোগ আছে, আছে দুর্নীতির অভিযোগও। সুশীল সমাজের পূর্ণ সমর্থন কি পাওয়া যাবে?

উ: আপনি ভুল বলেননি। এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেকেই এক ধরনের আত্মঅহমিকা এবং আত্মসন্তুষ্টির শিকার। এই মনোভাব অতি শীঘ্র বর্জন করতে হবে। দুর্নীতির ফাঁসেও জড়িয়ে পড়েছেন বেশ কিছু ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ। তবে, আপনি একটা কথা বলুন, উন্নয়নশীল বিশ্বে কোন দেশ বা দল দুর্নীতিক্লিষ্ট নয়?

আসলে, আমাদের সামগ্রিক ছবিটি দেখতে হবে— সামগ্রিক উন্নয়নের ছবিটি। এবং এতে কোনও সন্দেহ নেই যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে শাসনরত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রপদক্ষেপ করেছে। এই সার্বিক উন্নয়ন সাধনের সঙ্গেই নির্বাচনী সংগ্রামকে যুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। হতদরিদ্রের আনুপাতিক সংখ্যা কমেছে— ২০০৫-এ এই সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ, এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ হল ১৬,৩৫০ মেগাওয়াট, এবং এই বৃদ্ধি ও প্রসারের ফলেই জনগণের ৮৩ শতাংশের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সর্বমোট অঙ্ক হল ৩ লক্ষ কোটি ডলার। উপরন্তু দেশ জুড়ে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলি জোর দিয়েছে রফতানির উপর। গত বছরেই সামগ্রিক রফতানিমূল্য পৌঁছয় ৩৪.৮৫ লক্ষ কোটি টাকায়। ডিজিটাল বিশ্বেও যাকে বলে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এই মুহূর্তে ৮ কোটি নাগরিক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আর ১৩ কোটি সিম কার্ড বাজারে চালু। আমরা এই ব্যাপক, বহুস্তরী প্রগতি ও উন্নয়নের সঙ্গে নির্বাচনকে যুক্ত করতে চাই। এই উন্নয়নের সত্যই আমরা জোর গলায় প্রচার করব।

শেষ কথা, এই দশকেই বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও সমাজের লক্ষণীয় উত্থান ঘটেছে এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছিল সামরিক বাহিনী, আওয়ামি লিগ নয়। আওয়ামি লিগ শুধু বলেছে, আইন তার নিজের পথে চলুক। আমরা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণে রেখে এগিয়ে যেতে চাই।

প্র: একটা প্রশ্ন করতেই হবে। খালেদা জিয়াকে কারাবাসে পাঠানোর পরে বিএনপির বিক্ষোভ এতটা স্তিমিত কেন?

উ: প্রথমত, এ বারে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, অতীতের ধ্বংসলীলা মানুষকে বিএনপির প্রতি বিমুখ করেছে। তৃতীয়ত, জামাত জঙ্গিরা এ বার সহযোগিতা করেনি। শেষ কারণ, সুশীল সমাজের গুরুত্ব ও মনোভাব মনে রেখেই খালেদা জিয়া কর্মীদের বলেছিলেন লাগামছাড়া না হতে।

সাক্ষাৎকার: শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন