Accident

এ ভাবে আর কত দিন নিজেদেরই অপরিণামদর্শিতার বলি হব?

কীসের বলি? পথের বলি? না, শুধুমাত্র ‘পথের বলি’ আখ্যা আর দেওয়া যাচ্ছে না এই ঘটনাগুলোকে। পথ আসলে কোনও বলিদান নিচ্ছে না। একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতায়, ছুটন্ত অপরিণামদর্শিতায়!

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
Share:

কীসের বলি? পথের বলি? না, শুধুমাত্র ‘পথের বলি’ আখ্যা আর দেওয়া যাচ্ছে না এই ঘটনাগুলোকে। পথ আসলে কোনও বলিদান নিচ্ছে না। একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতায়, ছুটন্ত অপরিণামদর্শিতায়!

Advertisement

স্বামীর বাইকে চেপে অফিসে যাচ্ছিলেন তরুণী। পিছন থেকে কালান্তক যমের মতো এল বাস, ধাক্কা দিল বাইকে, ছিটকে পড়া তরুণীর মাথা পিছনের চাকায় পিষে বেরিয়ে গেল।

মর্মান্তিক! ভয়ঙ্কর! বীভৎস!

Advertisement

কিন্তু ভিআইপি রোডের উপরে শুক্রবার সকালে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এখন আর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আজ ভিআইপি, কাল বাইপাস, পরশু রেড রোড তো রয়েছেই। মহানগরের সীমানা ছাড়িয়ে জেলায় জেলায়ও রোজ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় সড়ক, প্রায় রোজই পথচলতি কারও না কারও প্রাণহানির খবর উঠে আসে কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে।

সড়ক দুর্ঘটনা বা পথচলতি প্রাণহানিকে কি ক্রমশ ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিচ্ছি আমরা? ‘এ রকম তো হয়েই থাকে’ গোছের দৃষ্টিভঙ্গিতে কি দেখতে শুরু করেছি জীবনের এই অকারণ অপচয়কে? যদি তা না হয়, তা হলে এত বেপরোয়া গতি আসে কীসের তাড়নায়? মুহূর্তের ভগ্নাংশে মৃত্যু নেমে আসতে পারে, অনেক সাজানো বাগান ধ্বংস হতে পারে, অনেক জীবন তছনছ হয়ে যেতে পারে চিরতরে— এই ভাবনা কি এক বারও মাথায় আসে না?

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এমন কথা বলা এখন কঠিন। মহানগরের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়ে অনেক আধুনিক হয়েছে, রাজ্য জুড়ে পুলিশি নজরদারি বেড়েছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন, গোটা বাংলায় ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ স্লোগান উঠেছে, পথচলতি যানবাহন এবং মানুষকে পই-পই করে নিরাপত্তার পাঠ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু দিনের শেষে আবার একটা বা দুটো বা ততোধিক পথ দুর্ঘটনার খবর আসছে আর সব প্রচার, সব সতর্কতা, সব স্লোগানকে বৃথা মনে হচ্ছে।

প্রায় প্রত্যেকটা দুর্ঘটনার কারণ হয় রেষারেষি, না হয় বেপরোয়া গতি অথবা ট্র্যাফিক বিধি লঙ্ঘন। একে তা হলে পথের বলি আর বলব কী ভাবে? আবার বলছি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর অপরিণামদর্শিতারই বলি হচ্ছি আমরা। রোজ।

আর কত দিন এই মারাত্মক প্রবণতার সামনে অসহায় হয়ে থাকব আমরা? আজ আমার বেপরোয়া গতির বলি অন্য কেউ। কাল অন্য কারও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বলি আমি বা আপনি। এ ভাবেই পথ চলব আমরা?

সভ্যতার কিছু নির্দিষ্ট রীতি রয়েছে। সভ্যতার প্রসাদ পেতে হলে বা সুফল ভোগ করতে হলে সেই রীতিগুলোর কথা খেয়াল রাখতে হয়। আমরা প্রমাণ করছি, আমরা সে কথা খেয়াল রাখতে পারি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন