Newsletter

কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক

সীতাপুর জেলার যাদব ও ব্রাহ্মণবহুল গ্রামে প্রথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মিড ডে মিলের খাবার প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তা রান্না হয়েছে ‘নিম্নবর্ণের’ এক মহিলার হাতে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৭
Share:

মেড ইন ইন্ডিয়ার স্লোগানে দৃঢ়সঙ্কল্প ভারতে ‘অস্পৃশ্যতা’-র রোগে জর্জর এক গ্রামের শিশুরা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে মিড-ডে মিলের খাবার! প্রতীকী ছবি।

১৫৬ বছরের নির্মম জাল ছিঁড়ে রামধনু পতাকাকে যখন মুক্ত করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট, যখন বহু শতাব্দীর সংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে নতুন স্বাধীনতার স্বাদ গায়ে মেখে নিচ্ছিল বিরাট ভারতের একটা বড় অংশ, যখন নেতিসর্বস্ব দৈনন্দিনতায় বড় ধাক্কা দিয়ে জানলাগুলো খুলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম আমরা, ঠিক তখনই উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি উঠে এল সামনে। এক দিকে উন্নয়নের নানা সংখ্যা নিয়ে আঁক-কষাকষি, অন্য দিকে বহু শতাব্দীপ্রাচীন অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রাম— এক তীব্র বৈপরীত্যের আশ্চর্য সহাবস্থান আমার এই প্রিয় দেশে!

Advertisement

সীতাপুর জেলার যাদব ও ব্রাহ্মণবহুল এক গ্রামে প্রথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মিড ডে মিলের খাবার প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ তা রান্না হয়েছে ‘নিম্নবর্ণের’ এক মহিলার হাতে। মেক ইন ইন্ডিয়ার স্লোগানে দৃঢ়সঙ্কল্প ভারতে ‘অস্পৃশ্যতা’-র রোগে জর্জর এক গ্রামের শিশুরা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে মিড-ডে মিলের খাবার! এই একবিংশ শতাব্দীতেও যে রোগটি শত আইনেও নির্মূল করা গেল না, তাতেই প্রমাণ হয় কতটা গভীরে এর শিকড়।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পড়ুয়াদের অভিভাবকরা খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্কুলে, প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ শুনতে হয় এবং অবশেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ সব খাবার বাইরে ফেলে দিয়ে ঘটনার ‘দায়মুক্ত’ হয়। গাঁধীজি থেকে শুরু রবীন্দ্রনাথ, এই দেশের বরেণ্য মানুষদের দীর্ঘ লড়াই, ১৯৫০ সালে ভারতীয় সংবিধানে অস্পৃশ্যতার বিলোপের ঘোষণা, ’৫৫ সালের কঠোর আইন, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তীকালের বহু নির্দেশ— এই সব কিছুকে পিছনে ফেলে শিশুদের প্রত্যাখ্যান, তার সমর্থনে অভিভাবকদের তাণ্ডব এবং সবশেষে অসহায় আত্মসমর্পণে কার্যত এই অপরাধকে স্কুলের মান্যতাদান— ইন্ডিয়া এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের সাক্ষী আমরা এখন।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

তবু আশা রাখি আমরা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও এক বার অঙ্গীকারবদ্ধ হই। এই রোগ নির্মূল করার দায় আমাদের সবার, রাষ্ট্রেরও। বহু দশক এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একটা বড় অংশকে জাতের নামে বজ্জাতিকে প্রশ্রয় দিতে দেখেছি আমরা, মানুষকে সমূহ এবং সমূহকে ভোটব্যাঙ্ক বলে ভাবার মূঢ়তাই যে তার পিছনে চালিকাশক্তি, তাতে সংশয় থাকার কথা নয়।

কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক সীতাপুরের ওই স্কুলে। গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে যাক সেই শাস্তির কথা, যাতে ভবিষ্যতে এই বজ্জাতি করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না কেউ। যদি করা যায়, ফল মিলবেই। দেরি হতে পারে, কিন্তু মিলবেই।

আরও পড়ুন: ‘নিম্নবর্ণের’ রাঁধুনির হাতে রান্না! প্রতিবাদ অভিভাবকদের, মিড-ডে মিল ফেলল উত্তরপ্রদেশের স্কুল

আর যদি না করা যায়? আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মঞ্চে উন্নয়নের সংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষণ চলতে থাকবে, মানসে এই দেশ, আমরা পড়ে থাকব কয়েক শতক পিছনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন