National news

শিকড়েই বিষের বিনাশ জরুরি, না হলে সমূহ বিপদ

রাজসমন্দের ক্ষত এখনও শুকোয়নি ঠিক মতো। বাংলা থেকে রাজস্থানে মজুরি খাটতে যাওয়া আফরাজুলকে কী বীভৎস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সে স্মৃতি এখনও দগদগে। তার মধ্যেই কট্টরবাদের বিষ ফের প্রাণ নিয়েছে রাজস্থানে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০০:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

এত ঘৃণা, এত বিদ্বেষ, এত হিংসা! কারণটা কী? কোথাও একটা গুরুতর গলদ ঘটে গিয়েছে নিশ্চয়ই। না হলে ক্রমশ এ ভাবে অসহিষ্ণুতার রাজধানীতে কেন পরিণত হবে রাজস্থান?

Advertisement

রাজসমন্দের ক্ষত এখনও শুকোয়নি ঠিক মতো। বাংলা থেকে রাজস্থানে মজুরি খাটতে যাওয়া আফরাজুলকে কী বীভৎস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সে স্মৃতি এখনও দগদগে। তার মধ্যেই কট্টরবাদের বিষ ফের প্রাণ নিয়েছে রাজস্থানে। অলওয়ারে রাকবর রহমান নামে এক যুবককে গণপ্রহারের শিকার বানিয়েছে স্বঘোষিত গোরক্ষকরা। রক্তাপ্লুত রাকবর তার পরে ঘটনাস্থলেই পড়ে থেকেছে দীর্ঘক্ষণ। অনতিদূরে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও নিয়ে যাওয়া হয়নি সময় মতো। অভিযোগ অন্তত তেমনই। অভিযোগের তির পুলিশের দিকেও।

পর পর ঘটে চলেছে ঘটনাগুলো। আফরাজুল বা রাকবরে সীমাবদ্ধ নেই। গত এক-দেড় বছরে স্বঘোষিত গোরক্ষকদের গণপ্রহার বা প্রভাবশালী পুরোহিতের নিদান বা রহস্যময় পুলিশি এনকাউন্টার প্রাণ নিয়েছে আরও অনেকের। পেহলু খান, তালিম হুসেন, আহমদ খান— তালিকা খুব সহজে ফুরনোর নয়।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

রাজস্থানে এই বিদ্বেষ শুধু সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে নয়, দলিতের বিরুদ্ধেও, অনগ্রসরের বিরুদ্ধেও। সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসরের উপরে নিপীড়নের একের পর এক ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় সময়ের রেখা ধরে খানিক পিছন দিকে হাঁটলেই।

অসহিষ্ণুতার আরও নানা রূপ। জয়পুর সাহিত্য উৎসবের আসরে নিজের মতামত ব্যক্ত করার জন্য কখনও আক্রান্ত হতে হয় আশিস নন্দীকে। কখনও আবার ওই একই আসরে তসলিমা নাসরিনের আমন্ত্রিত হওয়ার খবর ছড়াতেই হিংসাত্মক হয়ে ওঠে কট্টরবাদী সংখ্যালঘু সংগঠন। কখনও রানি পদ্মিনীর আখ্যান নিয়ে ছবি তৈরি করতে গিয়ে করণী সেনার হাতে নিগৃহীত হতে হয় চলচ্চিত্রকারকে।

আরও পড়ুন: অলওয়ারে গণপিটুনির ঘটনায় এবার নাম জড়াল বিজেপি বিধায়কের

বিস্মিত হতে হয়! সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, অপার ঐতিহ্য, সুপ্রাচীন পরম্পরা, রাজকীয় গৌরব— কী নেই রাজস্থানের! এমন অতুল ঐশ্বর্যের ভূমিতে সামাজিক সঙ্কীর্ণতার এমন উল্লাস কেন? কেন এত বিদ্বেষ বিষ? কেন এমন হিংসাত্মক হয়ে ওঠা বার বার?

আবার বলতে হয়— গুরুতর গলদ রয়ে গিয়েছে নিশ্চয়ই কোথাও। তার শিকড়ে পৌঁছনো অত্যন্ত জরুরি। শিকড় থেকে নিরাময় জরুরি। আজও যদি নিরাময়ে উদ্যোগী না হই সবাই মিলে, পরিস্থিতির তাৎপর্য যদি আজও না বুঝি, তা হলে বিপদ প্রগাঢ় হতে পারে আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে। সিঁদুরে মেঘটা সুদূর পশ্চিমে রয়েছে, বাকিদের বিপদ নেই অতএব— এমনটা ভাবার অবকাশ আর নেই। বিষম এ বিষ, ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে না বিস্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন