স্বাধীনতার পূর্বকালে এমনকী স্বাধীনতা-উত্তর অনেক সময় জুড়ে রাজনীতিকদের একটা বড় অংশ ছিল যাঁদের দিকে মাথা উঁচু করে তাকাতে হয়। এতটাই বিশাল ছিলেন তাঁরা। সেই উচ্চতা তৈরি করেছিল, তাঁদের শিক্ষা, রুচি, হৃদয়ের ব্যাপ্তি, চিন্তার সৌকর্ষ।
সেই রাম এবং অযোধ্যা একই সঙ্গে বিগত হয়েছে। এখনকার রাজনীতিকদের ভাষা মাথা উঁচুর বদলে হেঁট করে দেয়। ডানে-বামে, গেরুয়া-তেরঙায় সেখানে কোনও ফারাক নেই। নরেন্দ্র মোদী যদি মনমোহন সিংহের উদ্দেশে বলেন, রাহুল গাঁধী পাল্টা ছোড়েন মোদীর দিকে। অনিল বসু, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে অনুব্রত-দুধকুমাররা ভাষার যে কুস্তি দেখিয়েছেন, সেই আখড়ায় ভদ্রজনের প্রবেশ নিষেধ। মতের বিরোধিতায় যুক্তি যখল দুর্বল হয়, বিচার বোধ যখন পিছনের সারিতে যায়, স্বর তখনই উচ্চনাদে যায়। এবং ভাষা হতে থাকে অশ্লীল। দোষটা শুধু তাদেরই দেওয়া চলবে না। কারণ যে ময়দানে অশ্লীলতার এই ফোয়ারা ছোটে, সে ময়দানেই তুমুল হর্ষধ্বনিতে আরও উৎসাহ যোগায়। অন্যায় প্রশ্রয় পায় আমাদেরই কাছে।
ভারত তথা বঙ্গ রাজনীতির এই প্রবণতাটি বেশ ভালই রপ্ত করে নিয়েছেন তুলনামূলক ভাবে আনকোরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর সাম্প্রতিক কিছু কথা-বার্তা এবং আচরণ দেখে পদ্মবনে মত্ত হস্তির দাপাদাপির কথাই মনে পড়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে অমর্ত্য সেনকে যে কুরুচিকর ভাষায় তিনি আক্রমণ করেছেন তার বর্ণনা অথবা নিন্দা করার মতো শব্দ বাংলা অভিধানে এখনও তৈরি হয়নি। এ এখন বেশ পরিচিত দৃশ্য। মুশকিলটা হয় যখন প্রত্যুত্তরের স্বরটা অপরিচিত ঠেকে। অমর্ত্য সেন যেভাবে বিষয়টাকে হেলায় দূরে সরালেন তা থেকে প্রাচীন এক শিক্ষার কথা মনে পড়ে গেল। ক্ষুদ্র হয়ে বৃহতের উদ্দেশে যদি আস্ফালন করতে হয় তাতেও মুখটা আকাশের দিকেই করতে হয়। আর পুরনো সেই কথাটা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আকাশের দিকে ছোড়া থুতু আকাশ স্পর্শ করে না। কাকে স্পর্শ করে ভুক্তভোগীরা জানেন।
রাজনীতিকরা কি শিক্ষা নেবে এর থেকে?