প্রতীকী ছবি।
বিশ্বের দুটো প্রান্ত থেকে আসা দুটো খবর কেমন যেন নাড়িয়ে দিল। দুটো খবরেরই কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ধর্ম। ধর্মের দুটো মুখ। এক মুখ শেখাল উদারতার কথা— সে মুখ বিশ্বাসের, মূল্যবোধের। অন্য মুখ দেখাল অত্যাচার— সে মুখ সংস্কারের, সঙ্কীর্ণতার। প্রতিটি প্রাচীন ধর্মই যে প্রত্যেক সংঘাতের পথে এখন চলেছে, সহিষ্ণুতার সঙ্গে সঙ্কীর্ণতার, তারই টুকরো ছবি খবর হয়ে উঠে এল আচমকাই।
ঝাড়খণ্ডের এক মুসলিম নারী কেন যোগশিক্ষা দিচ্ছেন, এই ‘অপরাধে’ স্থানীয় এক মুসলিম ধর্মগুরুর নেতৃত্বে হামলা চলল তাঁর বাড়িতে। যুক্তি-বিচার-মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করেই, যেমনটা হামলা হয় গোরক্ষার নামে। এই ক্ষেত্রে এই ফতোয়া-হামলা-নির্যাতন হল কিন্তু ইসলামের নামে। একই সময়ে, ঠিক ওই ইসলামের নামেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকিতে ছেলের খুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন ৬৬ বছরের এক মুসলিম বৃদ্ধ। বলছেন, ওকে ক্ষমা করলেন তিনি, কারণ ইসলাম ক্ষমার কথাই বলে। নাড়িয়ে দিয়ে যায় এই একটা বাক্য।
আরও পড়ুন
ছেলের খুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা! কেন জানেন?
প্রতিটি ধর্মই তার মূল ধারণায় ইতির কথাই বলে। বলে ধারণ করার কথা। প্রসারিত হাত আর উদার হৃদয়ের যুগলবন্দিতে ধর্মের যে ব্যঞ্জনা, শুভের দ্যোতনা এবং সবার সুরের সম্মিলিত যে মূর্ছনা— ধর্মের আদি বাসস্থান সেইখানেই। সেই স্থান থেকে তাকে চ্যুত করে এনেছি আমরাই। নিজস্ব স্বার্থে তাকে ব্যবহার করার জন্য। অতএব ধর্মের সেই আদি রূপের উপর নানা সময়ে নানা রং চড়েছে, নানা বেশ এসেছে, এবং প্রতি বারেই এটাই আসল ধর্ম বলে প্রচার হয়েছে ঢাকঢোল বাজিয়ে।
ধর্মের নামে তাই হানাহানি, বিভেদ, অসহিষ্ণুতা, হত্যা, এই সব যত হতে থাকে, যত পরাজয় ঘটতে থাকে ইতির, তত লড়াইটা তীব্র হতে থাকে। লড়াইটা আসলে মনুষ্যত্বের। যে মনুষ্যত্ব ধর্মের নামে ফতোয়াকে স্বীকার করে না, অস্বীকার করে গোমাংসের অজুহাতে প্রতিবেশীর নির্যাতনকেও।
এই দীর্ণ সময়ের, কেনটাকির ওই বৃদ্ধ তাঁর মতো করে লড়লেন। লড়লেন ব্যক্তিগত স্তরে। ব্যক্তিগত দুঃখের চূড়ান্ত মুহূর্তে তাঁর লড়াই অধর্মের বিরুদ্ধে।