‘এত অশান্তি! ফর্মে জাত-ধর্ম বাদ দিল সোনালি’ (২-৪) শীর্ষক খবরে অভিভূত হয়েছি। সোনালির (ছবিতে) সাহস ও সদিচ্ছাকে কুর্নিশ করি। আমরা প্রায় ১৮ বছর আগে এই কাজটা শুরু করেছিলাম ‘ভারতের মানবতাবাদী সমিতি’র মধ্য দিয়ে। আমাদের ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে যুগলকৃষ্ণ মজুমদার বলে একটি ছেলে ধর্মের কলামে ‘মানবতা’ লিখেছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছিলেন। ওর ফর্মটি বাতিলও করা হয়। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বিদ্যালয়কে বোঝাই। বাদানুবাদ হয়। শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের যুক্তি মেনে নেয়। সময় বদলেছে। তাই সোনালি হেমব্রমকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ শুনতে হয়নি।
আমাদের গোড়ায় গলদটাকে ধরতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্মে আদৌ কেন ‘রিলিজিয়ন’ বা ‘ধর্ম’ কলাম থাকবে? আবেদনকারী তফসিলি জাতি-জনজাতি বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত কি না, তা লিখতে হবে, কারণ সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে-পড়াদের সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু ধর্ম ছাত্রছাত্রীদের কোন কাজে লাগবে? আমাদের আন্দোলন ছিল ওই ‘কলাম’টা নিয়েই। আশার কথা, লাগাতার আন্দোলনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ধর্ম কলামটাই তুলে দিয়েছে ভর্তির বা অন্যান্য ফর্ম থেকে।
সোফিয়ার রহমান অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
এড়িয়ে গেলেন
‘নিধিরাম বানিয়ে রাখলে হবে?’ (২৬-৪) লেখাটির জন্য কুণাল সরকারকে অভিনন্দন, একটি উত্তপ্ত সামাজিক প্রশ্নকে জনগণের ও সরকারের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য। সরকারের চিকিৎসা পরিকাঠামো, ভাবনার অদূরদর্শিতা ইত্যাদি অনেক সমস্যাকে লেখক সামনে আনার চেষ্টা করেছেন, সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন চিকিৎসকদের ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা।
বিগত কুড়ি বছর ধরে বাবা-মায়েদের একটি ভয়ঙ্করী প্রবণতা দেখা গিয়েছে: ছেলে-মেয়েকে এ দেশে না হোক বিদেশ থেকে ডাক্তার করে আনতে হবে এবং জন্মের পর থেকে তাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে: চিকিৎসা সেবা নয়, পয়সা রোজগারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা। তার ওপর আছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পরিচালন-চাবুকাঘাত, যার দায় নিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকানা নব্বই শতাংশই অচিকিৎসক ধনীদের হাতে, যাঁরা সেবার থেকে টাকার বৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এখানেই বিসর্জিত চিকিৎসকের এথিক্স, চিকিৎসকের প্রতিবাদী ক্ষমতা, অবশ্যই অনেকে ব্যতিক্রমী ও শ্রদ্ধেয়।
বেসরকারি হাসপাতালকে দেখেছি ইনডোর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন রকম ফি নিতে, কিন্তু কেন দামি বেডের রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারদের মস্তিষ্কের ক্ষুরধার বেশি দরকার হয়, অন্যদের ক্ষেত্রে নয়? দেখেছি ভিজিটে না এসে বা ফোনে অ্যাডভাইস দেওয়ার জন্য ফি দাবি করতে, যদিও মেকি কাগজ রেখে, তার প্রধান কারণ চিকিৎসকের ওপর ম্যানেজমেন্টের চাপ আর তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া আর্থিক ‘টার্গেট’। এই টার্গেটের বোঝা টানতে হয় সাধারণকে।
এক জন রোগী বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গেলেই আইসিসিইউ-তে ভর্তি করতে হবে, বিশেষ করে কারও মেডিক্লেম থাকলে, কিন্তু কেন? কমদামি বেড খালি থাকলেও বেশি দামের বেড দেওয়া হয়, যখন জানা যায় রোগী অনেক হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে বেড চার্জের বাইরে রুম ক্লিনিং চার্জ নেওয়া হয়, কিন্তু কেন? রুম ক্লিনিং তো বেড চার্জের মধ্যে ধরা থাকে। অনেকেই নার্স চার্জ নেয়, তারাই আবার রোগীকে ইনহেলারে সাহায্য করার জন্য চার্জ করে, এটা কি আর্থিক অপরাধ নয়?
কুণালবাবু নিশ্চয়ই একমত হবেন, একই ওষুধ বহু কোম্পানির আছে, কারওটা আট টাকা কারওটা ষাট টাকা, চিকিৎসকদের অনেকেই ষাট টাকারটা লেখেন। কিন্তু কেন, ড্রাগ এফিকেসি? আট টাকা দামের ওষুধের এফিকেসি কি ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করিয়েছেন, তবে ষাট টাকা দামের ওষুধে নিশ্চিত হচ্ছেন
কী ভাবে?
আমার মনে হয়, সরকারি ব্যবস্থার ভুলত্রুটিকে উপেক্ষা করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিজেদের অনৈতিক ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করলে অবশ্যই সাধারণের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারবে, তাতে সরকারের চাপ কমবে এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে।
অজয় কুমার হালদার অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিএমও, ভারত সরকার
দিনমজুর?
প্রাইভেট প্র্যাকটিস যাঁরা করেন, কুণাল সরকার তাঁদের দিনমজুর আখ্যা দিয়েছেন। বোঝা গেল না, কেন। ‘দিনমজুর’ শব্দটি, যাঁরা শারীরিক শ্রম দান করেন তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা চলে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে এই শব্দ ব্যবহার করা চলে কি? যাঁরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা রোগীর চিকিৎসা করেন?
আর শ্রীসরকার যদি ওই ডাক্তারদের আর্থিক নিরাপত্তা সম্পর্কে সহানুভূতিশীল হয়ে এই মন্তব্য করে থাকেন, তবে বলব, দিনমজুরদের আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে ডাক্তারদের আর্থিক নিরাপত্তার তুলনা করা চলে কি?
শ্রীসরকার তাঁর নিবন্ধে চিকিৎসাজনিত ব্রেকিং নিউজ এবং ডাক্তারদের হয়রানির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর এই উদ্বেগ সঙ্গত। তবে ইদানীং টিভিতে এবং সংবাদপত্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্রেকিং নিউজ বা সংবাদপত্রে শিরোনাম যা আসছে, সবই তো ডাক্তারদের অবহেলা এবং ভুলের জন্য রোগী মৃত্যুর মর্মান্তিক সব খবর। আর সেই অভিযুক্ত ডাক্তারদের আদালত বা মেডিক্যাল কাউন্সিলের সামনে প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এই সব ভুল চিকিৎসার ফলে রোগীমৃত্যুর সঙ্গে শয্যা এবং পরিকাঠামোর কী সম্পর্ক?
অশেষ দাস ই-মেল মারফত
অন্যায্য
বেশ কয়েক বছর যাবৎ কলকাতা মহানগরীর এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবকটি সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংলগ্ন জায়গায়, ‘ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান’-এ, বাজারের দামের এক-তৃতীয়াংশ দামে প্রায় সব ধরনের জটিল রোগের ওষুধ বিক্রি হয়ে চলেছে। নিম্ন আয়ের বেশ কিছু মানুষের জন্যে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ সত্যিই আশাব্যঞ্জক। অনেক জটিল রোগের দামি দামি ওষুধের বিকল্প এবং সমমানের বলে উল্লিখিত ওষুধ এই সব দোকানে পাওয়া যাওয়ার কথা।
তবে অনেকেই এই সব ওষুধ খেয়ে এখন আর খুব একটা উপকার পাচ্ছেন বলে মনে করছেন না। তাই অনেকের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, এই ওষুধের মান কতটা উন্নত ধরনের। কিছু কিছু চিকিৎসক এবং সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোলারের বিভিন্ন আধিকারিক এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কলকাতার কেন্দ্রীয় ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে, এই ওষুধের অনেকগুলোই বেশ নিম্ন মানের এবং সেগুলো খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। রুগ্ণ অসহায় মানুষের প্রতি এ আর এক রকমের বঞ্চনা হয়ে চলেছে।
বিভাস দে বালি পাঠকপাড়া
হোয়াটসঅ্যাপ
এক বেনজির রায়ে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট, ভাঙড়ের ন’জন প্রার্থীর হোয়াটসঅ্যাপে জমা করা মনোনয়নপত্র বৈধ। কে বলতে পারে, এই প্রক্রিয়ার সুবিধে দেখে, এর পর থেকে হয়তো অনলাইনেই মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। অন্তত ভাবনাটা শুরু হল।
পবিত্রমোহন বিশ্বাস চরমণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়