ছবি:সংগৃহীত।
কোনও নতুন যাত্রা শুরু হল, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। সতীদাহ প্রথা রদ, বাল্য বিবাহ প্রথার নিবারণ, বিধবা বিবাহের প্রচলনের মধ্যে দিয়ে যে সুদীর্ঘ যাত্রাপথ আমরা পেরিয়ে এসেছি, তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা মঙ্গলবার অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় সেই যাত্রাপথটাই আর একটা নতুন মাইলফলকে পৌঁছল।
ধর্মের নামে শত শত বছর ধরে কোটি কোটি মহিলাকে চূড়ান্ত অসম্মানজনক, অসম এবং অনিরাপদ দাম্পত্য যাপনে বাধ্য করা হচ্ছিল এ দেশে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক-সহ নানা মুসলিম প্রধান দেশও অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছে তিন তালাকের বদভ্যাসকে কবেই। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত এত দিন পারেনি। এই প্রথা রদ করা যথাযথ হবে তো? মুসলিম সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়বে না তো? এমনই নানা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের দোলাচলে আটকে থেকেছে ভারত, ধর্মীয় নিদানের নিগড়ে নিয়ত পিষে যেতে দিয়েছে মুসলিম নারীর মৌলিক অধিকারকে। স্বাধীনতার ৭১তম বছরে পৌঁছে অবশেষে স্বাধীনতা পেলেন ভারতের মুসলিম নারী। ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সত্যিই মাইলফলক হয়ে থাকবে ২২ অগস্ট তারিখটা।
মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ কিন্তু এই তিন তালাকের নিদান দেয় না। এই নিদান আসলে আসে পুরুষতন্ত্রের সেই আগ্রাসন থেকে, যে আগ্রাসন হিন্দু নারীকে বছরের পর বছর পুড়িয়েছে সতীদাহের আগুনে, হিন্দুর ধর্মীয় শাস্ত্রে সতীদাহের নাম-চিহ্ন না থাকা সত্ত্বেও।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে আরও একটা দৃষ্টিকোণ থেকেও কিন্তু দেখা হচ্ছে। সেই দৃষ্টি বলছে— যে পাঁচ মহিলা তিন তালাকের বিরোধিতায় আইনি লড়াইটা শুরু করেছিলেন, এ জয় শুধু তাঁদের নয়। এ জয় শুধু মুসলিম মহিলাদেরও নয়। এই জয় আসলে সেই নারীর, যাঁকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই কখনও আদায় করে নিতে হয়েছে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার, আইনি লড়াইয়ে গিয়েই আদায় করতে হয়েছে সন্তান লালনের জন্য কর্মস্থল থেকে ছুটি পাওয়ার অধিকার। আরও একটা দীর্ঘ আইনি লড়াই নতুন ভোর এনে দিল বিপুল সংখ্যক ভারতীয় নারীর জীবনে। আরও এক ঐতিহাসিক মাইলফলকে পৌঁছল ভারত।