প্রতীকী ছবি।
সে নাবাহিনী খুবই কড়া, এবং সেইখানে অনুশাসন না মানিলে কঠিন শাস্তি পাইতে হয়, এমন অনুমান কঠিন নহে। কয়েক দিন পূর্বে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হইল: ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পঞ্চাশ জন নূতন সদস্যের মোবাইল ফোন পাথর দিয়া গুঁড়াইয়া ধ্বংস করা হইতেছে, তাহাদের সম্মুখেই। সেনাবাহিনীর তরফ হইতে জানানো হইয়াছে, যাহারা বারংবার মোবাইল-সংক্রান্ত নিষেধ অমান্য করে, এই শাস্তি তাহাদের দিবার রেওয়াজ রহিয়াছে। ভিডিয়োর ঘটনাটি দুই বৎসর পূর্বের, কিন্তু ইহার পরেও কয়েক বার এই ঘটনা ঘটিয়াছে। শারীরশিক্ষা, অস্ত্রশিক্ষা, কুচকাওয়াজ করিবার সময় মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ, যাহারা সেই কাজ করে তাহাদের প্রথমে সতর্ক করা হয়, তাহার পর বেশ কিছু দিন মোবাইল বাজেয়াপ্ত করিয়া রাখা হয়, তাহাতেও ফল না হইলে এই শাস্তির ব্যবস্থা হইয়াছে। কোনও কোনও কেন্দ্রে শিক্ষানবিশদের বলা হয় মোবাইল ফোন সর্বক্ষণই এক হাবিলদারের নিকট জমা রাখিতে হইবে, প্রয়োজনে তাঁহার নিকট হইতে উহা লইয়া, ব্যবহার করিয়া, ফিরাইয়া দিতে হইবে, তাহা ব্যতীত আত্মীয়দের সহিত কথা বলিবার জন্য স্বতন্ত্র এসটিডি ফোনের ব্যবস্থা রহিয়াছে। এক অফিসার বলিয়াছেন, সেনাবাহিনীর মূল নির্যাসটিই হইল শৃঙ্খলা, যদি কেহ বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও মোবাইলের লোভকে শৃঙ্খলার উপরে স্থান দেয়, তাহাকে শাস্তি পাইতেই হইবে।
চিনের টেলিভিশনে এই ভিডিয়োটি দেখানো হইয়াছে, ভারত তাহার সেনাবাহিনীর নূতন সদস্যদের প্রতি কেমন নিষ্ঠুর আচরণ করে ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করে, তাহা বুঝাইতে। সত্যই এই যুগে যে কোনও ব্যক্তির নিকট মোবাইল ফোন তাহার মৌলিক অধিকারের আবশ্যিক অঙ্গ বলিয়া বিবেচিত। ইহা এমনই অপরিহার্য যন্ত্র, সমগ্র দিবসে একটি মুহূর্তও অনেকে মোবাইল ব্যতীত কাটাইতে পারে না, কলঘরেও লইয়া যায়, শয়নকালেও বালিশের পার্শ্বে রাখে। কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর মোবাইলটি অন করিয়া দেখে, কোনও বার্তা আসিল কি না। আসিলে সে শব্দ শুনিতে পাইবে, জানে, তথাপি মুদ্রাদোষটি গজাইয়া উঠিয়াছে। একঘেয়েমি ও নিঃসঙ্গতা হইতে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়া, মোবাইল মানুষের জীবনে এমন জুড়িয়া বসিয়াছে, তাহাকে ছাড়া রাস্তায় বাহির হইলে মনে হয় একটি অঙ্গ ফেলিয়া আসিয়াছি। ইদানীং মোবাইলই মানুষের ক্রীড়াস্থল, প্রেমকুঞ্জ, সাহচর্য যাচনা ও যাপনের স্থান, সংবাদ বা কেচ্ছা জানিবার উৎস, বিনোদনের বৃন্দাবন। তাই কাহারও মোবাইল তাহার সম্মুখে গুঁড়াইয়া দিলে, তাহা প্রায় তাহার জীবনটিই, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পরিসরটিই গুঁড়াইয়া দিবার সমান। এই বৎসরেই, জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার নিকট প্রহরা দিবার সময় এক সৈন্য মোবাইল ব্যবহার করিয়াছিল বলিয়া তাহাকে এক মেজর বকিয়াছিলেন। সৈন্যটি তৎক্ষণাৎ মেজরকে গুলি ছুড়িয়া হত্যা করে।
কিন্তু একটি অভ্যাস, বা বলা ভাল মোহাবেশ, সমগ্র মানবজাতিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতেছে বলিয়াই তাহাকে প্রশ্রয় দিতে হইবে, ইহাও স্বতঃসিদ্ধ নহে। সামরিক বাহিনীতে সাধারণ নাগরিক জীবনযাপনের তুলনায় অধিক শৃৃঙ্খলাবদ্ধ থাকিতে হইবে, ইহা জানিয়াই এক জন সেইখানে যোগ দিতেছে। সাধারণ জীবনেও, বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন, বা কর্মশালায় অধিবেশনকালীন, মোবাইল ব্যবহার নিয়মবিরুদ্ধ। সিনেমা হল বা রেস্তরাঁতেও মোবাইল ব্যবহার লইয়া এটিকেট-জনিত নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে, যদিও বহু মানুষ মোবাইলের আকর্ষণে ক্রমাগত ভদ্রতাকে বহু দূরে পরিহার করিতেছে। তাই বহু দেশে প্রেক্ষাগৃহে ‘জ্যামার’ লাগানো শুরু হইয়াছে। অবশ্য নীতি তো তুচ্ছ, মানুষ মোবাইলের খাতিরে নিজ জীবনকেই অবহেলা করিতেছে, রাস্তা পার হইবার সময় বা রেললাইন ধরিয়া হাঁটিবার সময়ও মোবাইল ব্যবহার করিতেছে, সেলফি তুলিতে গিয়া সেতু হইতে পড়িয়া মরিতেছে। ফলে মোবাইল মহামারি ঠেকাইবার পদ্ধতি সহজ নহে, হয়তো এই প্রবল রোগের অতি তীব্র ঔষধই প্রয়োজন, নিজ মোবাইলের অকালনিধন দেখিয়া যদি সেনাবাহিনীর কিছু নবিশের চৈতন্য ফিরে, তবে ভাল। নহিলে হয়তো দেখা যাইবে, শত্রু গুলি চালাইতেছে, আর আত্মরক্ষা না করিয়া, দেশ রক্ষা না করিয়া, সেনা হোয়াট্সঅ্যাপে ব্যস্ত। তখন সেই ভিডিয়ো দেখাইয়া চিনের টেলিভিশন ঘোষণা করিবে: ইহা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপদার্থতার প্রমাণ!
যৎকিঞ্চিত
চিন-এ এক চিড়িয়াখানায় লোকে পেঙ্গুইন দেখতে গিয়ে দেখল বিশাল বিশাল ফোলানো-পুতুল, পেঙ্গুইনের মতোই দেখতে। আর প্রজাপতির জায়গায় গাদা গাদা প্লাস্টিকের প্রজাপতি। কর্তৃপক্ষ আবার এগুলোকে বিশেষ প্রদর্শনী হিসেবে প্রচার করেছিলেন ও বাড়তি টাকা নিয়েছেন। নালিশ শুনে বলেছেন, কোথাও লেখা ছিল কি, আসল পেঙ্গুইন বা প্রজাপতি দেখানো হবে? দর্শকদের তক্ষুনি খাতার পাতা ছিঁড়ে টাকা এঁকে জমা দিয়ে বলা উচিত ছিল, আসল টাকার কথা তো লেখেননি!