এই মন্তব্য কি ইচ্ছাকৃতই করা হল? তেমনটা হলে, অত্যন্ত বিপজ্জনক খেলা খেলছেন আদিত্যনাথরা। ফাইল চিত্র।
বিতর্কিত মন্তব্য করতে তিনি অনভ্যস্ত নন। আগে অনেক বার যোগী আদিত্যনাথ এমন মন্তব্য করেছেন, যা গোটা দেশে বিতর্ক তৈরি করেছে। কিন্তু একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন দেশের সর্বোচ্চ বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে যে মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথ করলেন, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
রাম জন্মভূমি মামলা নিয়ে এ বার বিস্ফোরক ভঙ্গিতে মন্তব্য করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সুপ্রিম কোর্ট যদি এই মামলার নিষ্পত্তি ঘটাতে না পারে, তা হলে তাদের হাতে ছেড়ে দিক, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই মামলার নিষ্পত্তি তিনি ঘটিয়ে দেবেন। এমনই মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। এই মন্তব্য ভারতীয় রাষ্ট্রের কাঠামোর পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে এই রকম মন্তব্য মানায় না।
রাম জন্মভূমি বা বাবরি মসজিদ মামলা কতটা সংবেদনশীল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের পর দিন বা বছরের পর বছর নয়। দশকের পর দশক ধরে অযোধ্যা সংক্রান্ত টানাপড়েনটা চলছে। আমরা সম্ভবত টানাপড়েনের শেষ প্রান্তটায় এসে পৌঁছেছি। চূড়ান্ত বিচার এবং রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মুখে। যে ভাবে শুনানি শুরুর তারিখ বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে, যে ভাবে একের পর এক শীর্ষস্থানীয় বিচারপতি এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন, তাতে অযোধ্যা মামলার সংবেদনশীলতা তথা স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে প্রায় প্রত্যেকেই ওয়াকিবহাল। এমন এক পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথ দাবি করলেন যে, রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার নিষ্পত্তি ঘটাতে তাঁর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। এই মন্তব্য যেমন বিপজ্জনক, তেমনই অগ্রহণযোগ্য। এত সংবেদনশীল একটা বিষয়ে তিনি মন্তব্য করছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় মন্তব্য করছেন— সে কথা আদিত্যনাথের মনে রাখা উচিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় তিনি যে মন্তব্যটা করছেন, তা দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়কে অপারগ হিসেবে চিহ্নিত করছে— এ কথাও আদিত্যনাথের মনে রাখা উচিত ছিল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
সুপ্রিম কোর্টের কার্যপদ্ধতি নিয়ে সম্ভবত প্রশ্ন তুলে দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। এমন একটা সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্যে আদিত্যনাথ এই মন্তব্য করলেন যে, সাধারণ জনপরিসরেও বিভ্রান্তি ছড়ানোর যথেষ্ট অবকাশ থাকছে। সুতরাং আদিত্যনাথের এই মন্তব্যকে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারছি না। এক দিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে মন্তব্যটা। অন্য দিকে, এই মন্তব্যে প্ররোচনার উপাদানও যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় একটা সংবেদনশীল বিষয়ে এত বিপ্পজনক মন্তব্য কোনও ব্যক্তি কী ভাবে করতে পারেন!
এই মন্তব্য কি ইচ্ছাকৃতই করা হল? তেমনটা হলে, অত্যন্ত বিপজ্জনক খেলা খেলছেন আদিত্যনাথরা।
এই মন্তব্য কি অসতর্ক ভাবে করলেন যোগী? তেমনটা হলে, দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তর থেকে সতর্কবার্তা আসা উচিত। তা কিন্তু এখনও আসেনি।
আরও পড়ুন: ‘রাম জন্মভূমি মামলা ২৪ ঘণ্টায় মিটিয়ে দেব’, সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন যোগী