বলিউড এমন নারী-পুরুষে আড়াআড়ি ভাবে বিভাজিতই বা হয়ে যাবে কেন?
মুক্তচিন্তা বা প্রগতির ভাবনার অন্যতম পরাকাষ্ঠা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করে যে বলিউড, সে কি আপাদমস্তক পুরুষতান্ত্রিক? শুধু খোলসেই প্রগতি, মুখোশেই লিঙ্গসাম্য? যদি তা না হয়, তা হলে তনুশ্রী দত্ত নামে এক অভিনেত্রী নানা পাটেকর নামে এক অভিনেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলতেই পুরুষতন্ত্রের দাপট এমন ভাবে প্রকট হতে শুরু করবে কেন? বলিউড এমন নারী-পুরুষে আড়াআড়ি ভাবে বিভাজিতই বা হয়ে যাবে কেন?
বলিউড এখনও পুরুষতন্ত্রের শাসনে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন তুললাম বটে। কিন্তু বিষয়টা সম্ভবত আর প্রশ্ন তোলার পর্যায়ে নেই। কারণ মুখোশ বা খোলসটাতেও সাম্যের আভাস সব সময় থাকে না, অন্তরের কথা ছেড়েই দেওয়া যাক। বলিউডের চেহারাটা একটু খুঁটিয়ে দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়, পোস্টারে তার পুরুষ, অর্ধ অঙ্গনে নারী।
বলিউড ঠিক কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দিল তনুশ্রীর দত্তর অভিযোগ সামনে আসার পরে? অমিতাভ বচ্চনের মতো ব্যক্তিত্বও জবাব এড়িয়ে গেলেন। বললেন যে, তিনি তনুশ্রীও নন, নানাও নন। আমির খান বিশ্বাসই করতে পারলেন না যে, আদৌ এ রকম হতে পারে। সলমন খান গা বাঁচিয়ে নিলেন। বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত এই কেউকেটারা যখন বিতর্কের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অথবা পরোক্ষে নানা পাটেকরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন শক্তি কপূরও নেমে পড়লেন ময়দানে। বিস্ময় প্রকাশের ঢঙে বললেন, দশ বছর আগে তো তিনি ‘শিশু’ ছিলেন! অর্থাৎ শক্তি কপূর বলতে চাইলেন, তনুশ্রী দত্তর কথায় গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনই নেই, বরং ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দেওয়া উচিত এ সব কথা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে তনুশ্রী যখন দেখলেন যে তিনি ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন, তখন অবশ্য প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, টুইঙ্কল খন্নারা এগিয়ে এলেন অভিযোগকারিণীর সমর্থনে। তনুশ্রীর পক্ষে টুইট করলেন তাঁরা। বলিউড যেন আড়াআড়ি বিভাজনের মুখে পৌঁছে গেল হঠাৎ করে।
আরও পড়ুন
তনুশ্রী দত্তের ঘটনা কি আরও এক বার প্রমাণ করল বলিউড আসলে পুরুষেরই!
এই হল দেশের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চেহারা। কথায়, বার্তায়, বাগাড়ম্বরে প্রত্যেকেই যেন রোল মডেল। কিন্তু সংকটকাল উপস্থিত হলেই অধিকাংশের আসল চেহারাটা ফুটে বেরোয়। বলিউডের ছবি মূলত হিরো কেন্দ্রিক, হিরোইনরা দ্বিতীয় পছন্দের—এমন তত্ত্বও অভিযোগের সুরে বহুবার উঠে এসেছে। তবু কাহিনিতে, চিত্রনাট্যে, সংলাপে হিরোর দাপট বরাবরই হিরোইনের তুলনায় বেশি থেকেছে বলিউডে। অধিকাংশ বলিউডি ছবিতেই হিরো বা নায়ককে রক্ষাকর্তার ভূমিকায় দেখানো হয়েছে, যে চরিত্রটি একাধারে রোম্যান্টিক, বীর, উদার এবং মহান। হিরোইন বা নায়িকাকে বারবারই দেখানো হয়েছে হিরোর উপর নির্ভরশীল চরিত্র হিসেবে। পরবর্তীকালে ছক ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, নায়িকাকেন্দ্রিক ছবিও বলিউড থেকে বেরিয়েছে একের পর এক। সেসব ছবি হাততালিও কুড়িয়েছে। কিন্তু সে হাততালি বলিউডের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে এসেছিল, নাকি পুরুষতন্ত্রের লোক দেখানো বিরোধিতার মাধ্যমে প্রগতিশীলতার গৌরব অর্জনের লক্ষ্যে, তা নিয়ে এখন বিস্তর সংশয় তৈরি হচ্ছে।
ব্যতিক্রমও কি নেই? নিশ্চয়ই রয়েছে। বরুণ ধবন বা ফারহান আখতাররা তনুশ্রী দত্তর বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। তনুশ্রীর সাহসের প্রশংসাই করেছেন বরং। প্রায় আশিরনখ ছদ্মবেশে থাকে যে বলিউডটা, এঁরা বোধহয় এখনও সেই দ্বীপের বাসিন্দা হননি।