আবার কি জাগছে সেই লাল মহাসড়ক?

বিভীষিকা জাগল ফের ছত্তীসগঢ়ের বুকে। ভয়ঙ্কর মাওবাদী হানায় রক্তাক্ত সুকমার মাটি। বেশ কিছুটা বিরতির পর আবার যেন মাথা তুলছে নকশাল আতঙ্ক। জঘন্য এই হামলার নিন্দার জন্য উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

নিহত জওয়ানদের স্মরণে। ছবি: পিটিআই।

বিভীষিকা জাগল ফের ছত্তীসগঢ়ের বুকে। ভয়ঙ্কর মাওবাদী হানায় রক্তাক্ত সুকমার মাটি। বেশ কিছুটা বিরতির পর আবার যেন মাথা তুলছে নকশাল আতঙ্ক। জঘন্য এই হামলার নিন্দার জন্য উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু এক সময়ে রেড করিডর নামে পরিচিত হয়ে ওঠা যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে সন্ত্রাসের লাল রং ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করেছিল, সেখানে আবার আতঙ্ক উজাগর কেন? বিশ্লেষণের দরকার এই মুহূর্তে।

Advertisement

বাংলার জঙ্গলমহল থেকে মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া বিস্তীর্ণ মাওবাদী মুক্তাঞ্চল এক সময় গোটা ভারতীয় রাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। তবে পরবর্তী কয়েক বছরে রাষ্ট্র তার মোকাবিলাও করেছে সক্ষমতার সঙ্গেই। গড়চিরৌলি হোক বা বান্দোয়ান, দন্তেওয়াড়া হোক বা মালকানগিরি— দীর্ঘ দিন লাল সন্ত্রাস প্রায় স্তব্ধই ছিল। রাষ্ট্র তার কাঙ্ক্ষিত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এক সময়ের মাওবাদী মুক্তাঞ্চলে— মনে হচ্ছিল এমনই। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম চারটে মাসের মধ্যেই পর পর দু’বার ভয়াবহ হিংসার মুখ দেখল সুকমা। তবে কি কাল হয়ে উঠল আত্মতুষ্টি? প্রশ্ন উঠছে এ বার।

মাওবাদী হোক বা অন্য কোনও গেরিলা শক্তি— যুদ্ধের কৌশল কিন্তু তাদের এই রকমই। প্রতিপক্ষের পরাক্রমের সামনে যখন দাঁড়াতে পারে না এই শক্তিগুলো, তখন পিছু হঠে যায়। বিধ্বস্ত হতে হতে যখন পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে, তখন নাশকতার কারবার স্তব্ধ করে দেয়, আত্মগোপন করে, যেন বাতাসে মিশে যায়। প্রতিপক্ষ স্বস্তি বোধ করতে শুরু করে যখনই, তখনই এক দিন অতর্কিতে ফিরে আসে শক্তি সঞ্চয় করে, হিংসার উল্লাসে মাতে। সেই কৌশলেই কি পুনরুত্থানের পথে মাওবাদীরা? তা হলে কি শুধু সুকমা নয়? মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, বাংলা, ওড়িশা, তেলঙ্গানা জুড়ে সেই সুদীর্ঘ রেড করিডর কি ফের জাগছে? তেমন হলে কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মাওবাদী হিংসা ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর, তা আমাদের অনেকেরই অজানা নয়। বছর পাঁচেক আগেও পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের অবস্থাটা ঠিক কতটা থমথমে ছিল, তা এত তাড়াতাড়ি স্মৃতি থেকে উবে যাওয়ার কথা নয়। অতএব কেন্দ্রীয় প্রশাসন তো বটেই, স্থানীয় প্রশাসনকেও সজাগ হতে হবে। যে কোনও উপায়ে সেই আতঙ্কের প্রত্যাবর্তন রুখতে হবে।

Advertisement

কেন জমি পাচ্ছে মাওবাদীরা, প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসা সংগঠন কেন ফের মাথা তুলছে, কী খামতি রয়েছে রাষ্ট্রের? এমন অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু কোনও প্রশ্নের উত্তরই এই জঘন্য হিংসাকে বৈধতা দিতে পারে না। কঠোর এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে ভারত সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, এই বলিদান বৃথা যাবে না। কিন্তু এই বলিদান আর কখনও দিতে হবে না— এমন অঙ্গীকার কি করতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী? সরকারের কাছ থেকে আজ সেই প্রতিশ্রুতিটাই সর্বাগ্রে আদায় করে নেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন