Editorial news

রাজনৈতিক শিক্ষার নিতান্তই অভাব

মায়াবতী ‘মহিলা না পুরুষ বোঝা মুশকিল, নারী জাতির কলঙ্ক, ক্ষমতার জন্য সম্মান-সম্ভ্রম সব বিকিয়েছেন’— এমনই নানা মন্তব্য করেছেন সাধনা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

আর কত নীচে নামবে রাজনীতির ভাষা? আর কত রকম ভাবে অবক্ষয়ের মুখ দেখতে হবে রাজনীতিকে? কোনও সাধারণ নাগরিক নন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যে ভাষার প্রয়োগ করলেন উত্তরপ্রদেশে, তাতে এই সব নেতা-নেত্রীর রাজনৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাইয়ের বিজেপি বিধায়ক সাধনা সিংহ অর্গলহীন হলেন, শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর আক্রমণ করলেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বসপা সুপ্রিমো মায়াবতীকে। যে সব কথা প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে মায়াবতী সম্পর্কে বললেন সাধনা সিংহ, সে সব কথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সীমারেখার মধ্যে তো স্থান পায়না, সামাজিকতা বা সুস্থ রুচির গন্ডিতেও কোথাও ঠাঁই নেই ওই ধরনের মন্তব্যের।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে টক্কর দিতে আসন সমঝোতা ঘোষণা করেছে সপা ও বসপা। এক সভা মঞ্চ থেকে সপা-বসপার সেই ঐক্যকে আক্রমণ করছিলেন বিজেপি বিধায়ক। আক্রমণ করতে গিয়ে কী বললেন তিনি? মায়াবতী একজন মহিলা, না পুরুষ, তা নাকি বোঝা যায় না— মন্তব্য বিধায়কের। ক্ষমতায় আসার মোহে মায়াবতী নিজের শ্লীলতাহানির কথাও ভুলে গিয়েছেন— এমনও মন্তব্য করলেন বিধায়ক।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকলে কেউ এ ধরনের মন্তব্য যে করতে পারেন না, সে তো বলাই বাহুল্য। মায়াবতী সম্পর্কে বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যগুলো বলে দিচ্ছে, ন্যূনতম রাজনৈতিক শিক্ষাদীক্ষারও অভাব রয়েছে ওই বিজেপি নেত্রীর।

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একদলের সঙ্গে অন্যদলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। একদল অন্যদলকে আক্রমণ করবে, এও অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু আক্রমণটাতো হবে রাজনৈতিক, সমালোচনাটা তো হবে নীতির প্রশ্নে, রুচি বহির্ভূত ভাবে কারওকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কেন করা হবে!

আরও পড়ুন: ‘মহিলা না পুরুষ বোঝা যায় না’, মায়াবতীকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য বিজেপি বিধায়কের

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একদলের সঙ্গে অন্যদলের লড়াই আসলে নীতির সঙ্গে নীতির লড়াই। নীতির প্রশ্নে মতবিরোধ, বিতণ্ডা, সংঘাত চরমে পৌঁছনো কোনও অস্বাভাবিক ঘটনাই নয়। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-অখিলেশের জোটকে কোনও বিজেপি নেতা বা নেত্রী যে পছন্দ করবেন না, তাও খুব সহজে অনুমেয়। কিন্তু তা বলে মায়াবতীকে ব্যক্তিগতভাবে যে রুচিহীন ও অসংসদীয় ভাষায় আক্রমণ করা হল গণতন্ত্রে সে সবের কোনও স্থান নেই।

মায়াবতীকে এক বিজেপি বিধায়কের এই আক্রমণ কোনও অচেনা ঘটনা অবশ্য নয় রাজনীতিতে। আজ বিজেপি নেত্রীর একটা মন্তব্য নিয়ে হইচই হচ্ছে। গতকাল কংগ্রেসের কোনও সাংসদ বা তৃণমূলের কোনও নেতা বা সিপিএমের কোনও পরিচিত মুখকে এই একই ধরনের মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে কোনও না কোনও প্রতিপক্ষের নামে। বারবার সমালোচিত এবং নিন্দিত হয়েও যে কুকথার স্রোত থামতে চায় না রাজনীতিতে, সেটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক শিক্ষার অভাব বাড়ছে বলেই যে এই সব অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে তা বুঝতে হবে। রাজনৈতিক শিক্ষা যাঁদের নেই, দায়িত্বশীল ভূমিকাগুলো থেকে তাঁদের দূরে রাখতে হবে। না হলে এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থামার নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন