Editorial News

সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার, আসল-নকলের তফাত বোঝার

ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ— সব পর্যায়ে ‘নাটক’-এর একটা সূত্র যেন তৈরি হল বা হচ্ছে কোথাও। আর তখনই তৈরি হয় প্রতিরোধের সময়। নাটক আর না-নাটকের মধ্যে তফাতের শিক্ষাও তৈরি হয় এই প্রতিরোধ-মুহূর্তে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

এই বিপুল বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে আমরা প্রত্যেকেই শুধুমাত্র ক্ষণিকের আগন্তুক এবং নিজের মতো করে অভিনয় করে চলেছি ক্রমাগত, মহামতি মনীষীর এ হেন আর্ষবাক্যও কি আমাদের এই নটজীবন সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে সচেতন রাখে? সম্ভবত না। তবু এক একটা দিন আসে, যখন আশ্চর্য সমাপতনের মতো অনেকগুলো খণ্ডদৃশ্য সামনে এসে পড়ে এবং মনে হয়, এ সবই অভিনয়! কী আশ্চর্য!

Advertisement

আনন্দবাজার ডিজিটালে শনিবার বিকেলের দিকে চোখ বোলাতে গিয়ে এ রকমই এক হঠাৎ আলোর ঝলকানির মুহূর্ত হাজির হল। হাওড়ার দাশনগরের ক্লাস নাইনে ফেল করা এক কিশোর গত দেড় বছর ধরে অভিনয় করে আসছে। সকালে ইউনিফর্ম পরে স্কুলের উদ্দেশে বেরিয়েছে, এবং সব শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে প্রতি দিন— সবটাই নাটক, অভিভাবকরা যাতে না জানেন বাস্তব চিত্রটা। ধরা পড়ে গেল মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্রে, বাবা-মা জানলেন, এত দিনের সব অভিনয় ভেস্তে গেল এক নিমেষে। কিশোর চেয়েছিল, তার বাবা-মা কষ্ট না পান, ভয় পেয়েছিল সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ায়, তাই এই অভিনয়।

সেই সময়টাতেই অন্য অভিনয় চলছিল বর্ধমান থেকে কলকাতা ছুটতে থাকা এক অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে, আসলে গোটা পরিসরটা জুড়েই। এক মুমূর্ষু কিশোরের সঙ্গী হিসাবে এক ‘ডাক্তার’-কে রাখা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সে, সে আসলে এক জন মেকানিক মাত্র, ডাক্তার সাজিয়ে পাঠানো হয়েছিল, বিনিময়ে রোগীর বাড়ির কাছ থেকে চার্জ করা হয়েছিল অতিরিক্ত টাকা— রাস্তাতেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের। অত্যন্ত কদর্য এক নাটকের বিনিময়ে হারাতে হল একটা প্রাণ। সেটাও একটা নাটক।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সমসময়েই বিজয় মাল্য নামের বিশাল নাট্য-পর্বে নতুন একটা মোড় দেখা দিল। ব্রিটিশ আদালত বলল, মাল্যকাণ্ডে দায়ী ভারতের ব্যাঙ্কগুলো। মুহূর্তে ভেসে উঠল নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীর মতো কয়েকটা নাম। ভারতীয় রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ-ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা জুড়ে বিরাট এক রঙ্গমঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো আরও একটা নাম, যারা এখন পলাতক, এবং তাদের ধরার চেষ্টা চলছে— আম আদমি শুধু জানেন না, কোনটা অভিনয় আর কোনটা অভিনয় নয়।

আরও পড়ুন
ছাত্রের মৃত্যু: ডাক্তার নয়, মিস্ত্রি হাজির অ্যাম্বুল্যান্সে

এখানেই শেষ নয়। আনন্দবাজার ডিজিটাল জানাচ্ছে, সেই সময়টাতেই বিরোধী নেত্রীর মুখ থেকেও ভেসে আসছে ‘ড্রামা’-র কথা। শাসকের বিরুদ্ধে উঠছে ‘ড্রামাবাজির’ অভিযোগ। সনিয়া গাঁধী বলছেন, কালো টাকা বা দুর্নীতি দমনের নামে ড্রামাবাজি করছে সরকার।

ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ— সব পর্যায়ে ‘নাটক’-এর একটা সূত্র যেন তৈরি হল বা হচ্ছে কোথাও। আর তখনই তৈরি হয় প্রতিরোধের সময়। নাটক আর না-নাটকের মধ্যে তফাতের শিক্ষাও তৈরি হয় এই প্রতিরোধ-মুহূর্তে। সেই কাজটা করেন এই আম আদমি, যাঁদের দর্শক বানিয়ে অভিনয়টা চলতে থাকে।

মুহূর্ত সমাগত। সাধু সাবধান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন