Newsletter

গণতন্ত্রে নাগরিকের স্বাধীনতাই সর্বোচ্চ গুরুত্বের, ভুললে চলবে না

নিম্ন আদালত মেনে নিয়েছিল। অনেক দিন ধরেই মেনে নিচ্ছিল। তাই বার বার জামিনের আবেদন খারিজ হচ্ছিল। উচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার যুক্তি মানল না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

নিম্ন আদালত মেনে নিয়েছিল। অনেক দিন ধরেই মেনে নিচ্ছিল। তাই বার বার জামিনের আবেদন খারিজ হচ্ছিল। উচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার যুক্তি মানল না। ওড়িশার হাইকোর্ট সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জামিনে মুক্তি দিল। অবধারিত প্রশ্ন ওঠে, এ বার কি তাপস পালের জামিন আসন্ন? তেমনই হওয়ার কথা, বলছে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি।

Advertisement

জিজ্ঞাসাবাদ বা জেরা ফুরিয়ে গিয়েছে, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নতুন কিছু সম্ভবত জানারও নেই সিবিআই-এর। তা-ও জামিনের বিরোধিতা চলছিল নিরন্তর। কারণ? এই সাংসদ অত্যন্ত প্রভাবশালী, জামিন পেলেই মামলা প্রভাবিত হবে, সাক্ষীদের ভয় দেখানো হবে, তথ্য-প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে— আশঙ্কা সিবিআই-এর। হাইকোর্ট কিন্তু আশঙ্কার তত্ত্বে গুরুত্ব দিল না। নাগরিক অধিকারকেই অগ্রাধিকার দিল। কারণ, যে কোনও প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকারই সর্বোচ্চ অধিকার।

আটকে রাখা বা বন্দি রাখার প্রবণতা যেন দিন দিন বাড়ছে এ দেশে। রাষ্ট্র বা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক যাঁরা, তাঁদের বিষনজরে এক বার পড়লেই ঘোর বিপদ অপেক্ষায়। ভারতীয় সংবিধানের মূল ভাবনা বার্তা দেয়— নাগরিকের স্বাধীনতাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় আইনের মূল ভাবনা বলে— অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত জামিনে মুক্ত থাকাই স্বাভাবিক, বন্দি থাকা অস্বাভাবিক। কিন্তু, ভারতীয় রাষ্ট্র আজ উল্টোটাই বলে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হোক বা রাজ্যের পুলিশ, অভিযুক্তের জামিন রুখতে তত্পরতার অন্ত নেই কারওরই। কেউ বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় লুঠতরাজ চালানোয় অভিযুক্ত নেতাকে আটকে রাখতে চায়। কেউ জমি আন্দোলনকারীকে ইউপিএ-তে অভিযুক্ত করে দীর্ঘ সময়ের জন্য কারান্তরালে ঠেলে দেয়।

Advertisement

যে মামলায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবং তাঁর আগে-পরে আরও অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা অর্থনৈতিক অনিয়মের মামলা। এই ধরনের অপরাধের তথ্য-প্রমাণ লিখিত দস্তাবেজে ধরা থাকে এবং সে সব দস্তাবেজ তদন্তকারীদের হাতে পৌঁছেও গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে বলেই রাজনীতির এই রথী-মহারথীদের নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে, আদালতকে সিবিআই তেমনই জানিয়েছে। তাই প্রথম প্রশ্ন হল, তথ্য প্রমাণ যদি সিবিআই-এর হাতে পৌঁছে গিয়েই থাকে, তা হলে সে সব লোপাট হওয়ার প্রশ্ন আর আসছে কোথা থেকে? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিতে সবচেয়ে বড় সাক্ষী যখন তদন্তকারী সংস্থা অর্থাত্ সিবিআই নিজেই, তখন কোনও অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পেলে সাক্ষী প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাই বা তৈরি হচ্ছে কেন? সিবিআই গোয়েন্দারা কি নিজেদের উপরেই ভরসা রাখতে পারছেন না? নিজেরাই প্রভাবিত হয়ে পড়বেন, এমন কোনও আশঙ্কাই কি করছেন? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই।

যে ভাবে এবং যে যুক্তিতে জামিন পেয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ভাবে এবং সেই যুক্তিতেই কিন্তু আরও সহজে জামিন হওয়ার কথা তাপস পালের। ভাঙড়ের জমি আন্দোলন তথা পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আজ যাঁরা জেলে, জামিন হওয়ার কথা তাঁদেরও। হবে কি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আজ এটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন