জোটের পথ

এই ‘আধা-জোট’-এর কল্যাণেই দুই দলের ঝুলিতে মোট ৬০ শতাংশের বেশি আসন। এই পুর নির্বাচনে বিজেপির ফলকে খারাপ বলা চলিবে না। ইতিপূর্বে কর্নাটকে কোনও পুর নির্বাচনে বিজেপি এতগুলি আসন পায় নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

আনুষ্ঠানিক জোট হয় নাই। তবে, দৃশ্যত, বোঝাপড়া ছিল। কর্নাটকের পুর নির্বাচনে কংগ্রেস এবং জেডি(এস) আলাদা ভাবে লড়াই করিলেও ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জানাইয়া দিয়াছে যে, সুযোগ থাকিলেই তাহারা সমবেত ভাবে পুরবোর্ড গড়িবে। এই ‘আধা-জোট’-এর কল্যাণেই দুই দলের ঝুলিতে মোট ৬০ শতাংশের বেশি আসন। এই পুর নির্বাচনে বিজেপির ফলকে খারাপ বলা চলিবে না। ইতিপূর্বে কর্নাটকে কোনও পুর নির্বাচনে বিজেপি এতগুলি আসন পায় নাই। কিন্তু কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর নির্বাচন-পরবর্তী বোঝাপড়া তাহাদের অধিকাংশ পুরসভার চালকের আসন হইতে দূরে রাখিবে। অনুমান করা যায়, স্বতন্ত্র ভাবে লড়িয়া কংগ্রেস ও জেডি(এস) আপন শক্তি যাচাই করিতে চাহিয়াছে। বুঝিতে অসুবিধা নাই, সেই পরীক্ষায় না গিয়া প্রাক-নির্বাচনী জোট গড়িয়া লড়িলে ফল তাহাদের পক্ষে আরও অনেকখানি ঝুঁকিত। বিধানসভায় কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর নির্বাচন-পরবর্তী জোটের স্থায়িত্ব লইয়া প্রশ্ন উঠা বন্ধ হয় নাই। তাহারই মধ্যে পুর নির্বাচনের ফল বার্তা দিল যে, বিজেপির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান লইয়া জোট গড়া প্রয়োজনীয়। ২০১৯-এ বিজেপিকে ঠেকাইতে হইলে জোটই যে শ্রেষ্ঠ পন্থা, আরও এক বার তাহার প্রমাণ মিলিল।

Advertisement

নির্বাচন কি শুধুই বিজেপি-বিরোধিতার অক্ষে হইয়াছে? তাহা নহে। মহীশূর সংলগ্ন অঞ্চলে জেডি(এস) ভাল ফল করিয়াছে, কংগ্রেসও তাহার সনাতন অঞ্চলগুলি ধরিয়া রাখিতে পারিয়াছে। অর্থাৎ, রাজ্য রাজনীতিতে যে স্রোতগুলি বহমান ছিল, সেগুলি পূর্ববৎ রহিয়াছে। কিন্তু, আনুষ্ঠানিক জোট না হইলেও, কাজ করিয়াছে আসন বণ্টনের কৌশল। যে জোটসঙ্গীর জোর যে অঞ্চলে, তাহাকে সেখানে প্রাধান্য দেওয়ার রীতি ফলপ্রসূ হইয়াছে। অর্থাৎ, বোঝাপড়ার রাজনীতির বহুপরীক্ষিত নিয়মগুলি যে কার্যকর, কর্নাটকের পুর নির্বাচনে তাহা আরও এক বার প্রমাণিত। অতঃপর প্রশ্ন, পুর নির্বাচনের এই শিক্ষাটিকে সংশ্লিষ্ট দলগুলি লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বে প্রয়োগ করিতে পারে কি না। প্রশ্নটি স্পষ্টতই শুধু কর্নাটকের নহে। একক শক্তিতে কংগ্রেসের পক্ষে যে এখন সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠা সম্ভব নহে, তাহা নেতারা বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু তাহার অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইল, বিজেপি-বিরোধী ভোটব্যাঙ্ক ভাগ হইয়া গেলে তৃণমূল কংগ্রেসের ন্যায় দুই একটি বিরল ব্যতিক্রম বাদে কোনও দলের পক্ষেই কি বিজেপির অগ্রগতি প্রতিহত করা সম্ভব? উত্তরটি হাওয়ায় ভাসিতেছে। পাশাপাশি যে কথাটি স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে, তাহা হইল, জোট গড়িতে চাহিলে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় শক্তিকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হইবে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ের ন্যায় যে রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস একক শক্তিতেই বিজেপির বিরোধিতা করিতে পারে, সেখানেও জমি ছাড়িতে হইবে। আবার, উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের ন্যায় রাজ্যে মূল ভাগ ছাড়িতে হইবে অখিলেশ যাদব-মায়াবতী বা লালুপ্রসাদ যাদবদের। পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যে, যেখানে কংগ্রেসের অস্তিত্ব আর নামমাত্রও নহে, সেখানে প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে মান্যতা দেওয়াই বিধেয়। অন্য দিকে, আঞ্চলিক শক্তিগুলিকেও বুঝিতে হইবে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সংগঠিত হইবার প্রয়োজন আছে। জোটধর্ম কেবল পাটিগণিতের হিসাব নহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন