সম্পাদক সমীপেষু

বারাসত এখন কলকাতার কাছেই। মহানগরের গা ঘেঁষা জেলা সদর শহরটার পিন কোড কবেই সাত লক্ষ একশো চব্বিশ পঁচিশ ছাব্বিশ হয়ে গেছে। এখন আর জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা না লিখে শহরবাসী কলকাতা ১২৪ ১২৫ ১২৬ লিখতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০০:২৯
Share:

ছবি: সমর দাস

শুধু স্মৃতিবেদনায় ঐতিহ্য বাঁচে না

Advertisement

বারাসত এখন কলকাতার কাছেই। মহানগরের গা ঘেঁষা জেলা সদর শহরটার পিন কোড কবেই সাত লক্ষ একশো চব্বিশ পঁচিশ ছাব্বিশ হয়ে গেছে। এখন আর জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা না লিখে শহরবাসী কলকাতা ১২৪ ১২৫ ১২৬ লিখতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হয়তো অবচেতন মনে একটু শ্লাঘাও বোধ করেন। অবশ্য চাকুরিজীবী ব্যবসায়ী পড়ুয়ারা তো অধিকাংশই কলকাতার দৈনিকযাত্রী। আর কত বাস কলকাতা এবং এই শহরের মধ্যে যাতায়াত করে!

আমার বারাসত শহরের অবস্থিতিকাল কমবেশি একুশ বছর। এই শহরের প্রাণকেন্দ্র চাঁপাডালি মোড়। দু’কদম হাঁটলেই বিজয়া সিনেমা হল। প্রেক্ষাগৃহটির প্রাচীনত্ব বা ঐতিহ্য বিষয়ে প্রবীণতর বাসিন্দারা তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন। লক্ষ করেছি, বিজয়াতে বাংলা ছবি বেশি চলে। হালে একাধিক ঝাঁ-চকচকে মাল্টিপ্লেক্সের দৌলতে একটা শ্রেণির দর্শক কেনই বা এই হলগুলোতে বই দেখতে যাবেন? এই ভাবনার টানে একটা ভিন্ন চিন্তা উঠে এল মনে, একটা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার সূত্রে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘শঙ্খচিল’ ছবিটি দেখতে দ্বিতীয় সপ্তাহের চতুর্থ দিন চারটের শোতে বিজয়াতে গিয়েছিলাম। প্রথম পদার্পণ। তীব্র দাবদাহে তখন শহর জ্বলছে। প্রেক্ষাগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ছাড়ছে অজস্র বাস ট্রেকার। তিনটে বেজে চল্লিশ। ম্যাটিনি শো শেষ হয়ে গেছে। অথচ কিন্তু হলের সামনে জনমানবহীন শূন্য ময়দান। মনে হল, ছবিটা কি উঠে গেল। টিকিট ঘর কোথায়? হা ঈশ্বর, দু-তিনটে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘুলঘুলি। এগিয়ে গেলাম। ইভনিং শোয়ের টিকিট আছে কি না জানতে চাওয়ায় ভেতর থেকে উত্তর ভেসে এল: কত টাকার দেব— ত্রিশ না চল্লিশ? মাল্টিপ্লেক্সের, নন্দন প্রিয়ার নিয়মিত না হলেও অনিয়মিত দর্শক। টিকিটের হার চমকে দিল তাই।
বহু দিন বাদে শুনলাম সেই ছবি শুরুর আগে দর্শকের চেতনা জাগিয়ে জোরালো বেল। কিন্তু ওপরে বা নীচে দর্শক কোথায়? লাইটম্যানকে জিজ্ঞেস করতে হাহুতাশ করলেন। সাকুল্যে পঞ্চাশ জন দর্শকও যদি প্রতি শোতে আসতেন, কথা ছিল। বললেন, দেব জিৎ প্রমুখদের ছবি হলে তাও হয়তো কয়েকটা সপ্তাহ। নইলে... তাঁর আশঙ্কা, এ ভাবে চললে...

Advertisement


উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলের বিনোদন দুনিয়ার বর্তমান হাল হকিকত সবারই জানা। সব হারানো ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রেক্ষাগৃহগুলো অতীতের স্মৃতিকেও বোধহয় উসকে দেয় না, কারণ তারা ঝকঝকে শপিং মলে রূপান্তরিত। সম্ভবত, ঘুরে দাঁড়িয়েছে মিত্রা আধুনিকতায় ভোল পাল্টে। এটাই বাঞ্ছনীয়।
ঠিক এ জায়গা থেকে ফিরে আসি বক্তব্যে। দর্শককে হলমুখী করতে হলে আমূল পরিবর্তন করতে হবে পরিকাঠামো। বিজয়ার মতো একদা অভিজাত প্রেক্ষাগৃহ এখন অচল। ব্যালকনির ভ্যাপসা প্যাচপেচে আবহে, অতি সাধারণ চেয়ারে শরীরকে কষ্ট দিয়ে অনুভূত হচ্ছিল, ছবির নান্দনিক বিষয় ফটোগ্রাফি অভিনয় গান তখনই উপভোগ্য হয় যখন প্রেক্ষাগৃহটি ছবি দেখার মতো আরামদায়ক হয়। বিজয়ার সাউন্ড সিস্টেম উন্নত মনে হল। কিন্তু দুর্বিষহ মালিন্য নিয়ে হতদরিদ্র বহিরঙ্গ মেনে নিয়ে দর্শক কেন আসবেন? সিনেমা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ দর্শকের কাছে বিনোদন মাত্র।
সীমিত সংখ্যক আসন, ঠান্ডার আমেজ, শরীর এলিয়ে দেওয়া আসনের আনন্দ সব মিলেমিশে মাল্টিপ্লেক্সগুলো তো চলছে রমরমিয়ে। আরও জরুরি কথা, এখন ত্রিশ চল্লিশ টাকা বিনিময় মূল্যে হল চালানো দুষ্কর।
এখন দুটি প্রতিবেশী দেশ যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করছে। উদ্দেশ্য, যাতে উভয় দেশে ভাল ব্যবসা হয়। যাতে চলচ্চিত্র শিল্প মৃতপ্রায় না হয়ে যায়।
এই শুভ মুহূর্তে প্রযোজক পরিচালক সংবেদনশীল অভিনেতা অভিনেত্রীরা ভাবুন প্রেক্ষাগৃহগুলোর উন্নতির ব্যাপারে। সদুপদেশ দিন হলমালিকদের। বন্ধ হয় যাওয়া হলমালিকদের কোনও দায়দায়িত্ব থাকার কথা নয়। তাঁরা তো সব নস্টালজিয়া বেচে দিয়ে ব্যবসা করছেন। ছবি নির্মাতারা বাণিজ্যিক বা অন্য ধারার ছবি নিয়ে ভাবুন। মাল্টিপ্লেক্স কালচারকে রোখা যাবে না। অভিপ্রেতও নয়। কিন্তু এখনও তো ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহগুলো টিমটিম করে বেঁচে আছে। সেগুলোর উন্নতিকল্পে হলমালিকরা সচেতন হোন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে হোঁচট খেতেই হবে। নীড় ছোট হোক ক্ষতি নেই, ঝ়ড়ে যেন ধূলিসাৎ না হয়ে পড়ে সে দিকে একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় কৃত সিনেমাওয়ালার গল্প কোন দিকে মোড় নেবে ছবি না দেখে বলা যাবে না। কিন্তু ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে বা অর্থাভাবে সংস্কার করতে না পেরে জাস্ট চালানোর জন্য হল চালালে হতাশা ছাড়া গত্যন্তর নেই। মহানগরীর সব-খোয়ানো বিনোদন স্বর্গ হাতিবাগান চবুতরা এ সত্যকেই তো প্রমাণিত করে।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫

ফরাসি তো নন

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (‘ওকাকুরা’, ১-৪) জোসেফিন ম্যাকলাউডকে ফরাসি মহিলা বলে উল্লেখ করেছেন। তথ্যটি ঠিক নয়। তাঁদের আদি নিবাস ছিল স্কটল্যান্ডে। তাঁর পিতামহ ডোনাল্ড ম্যাকলাউড সপ্তদশ শতাব্দীর ‘পিলগ্রিম ফাদার’দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমেরিকা চলে যান। জোসেফিনের জন্ম (১৮৫৮) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়-এর এলগিন-এ। (সূত্র: প্রব্রাজিকা প্রবুদ্ধপ্রাণা প্রণীত Tantine: The Life of Josephine MacLeod)
বিমলেন্দু ঘোষ। কলকাতা-৬০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন