সম্পাদক সমীপেষু

জয়া মিত্র (‘সারা দেশে একটি নদীও অক্ষত নেই’, ৭-৭) আমাদের দেশের সমস্ত নদী পরিকল্পানাগুলিকে জোরালো ভাষায় আঘাত করেছেন। তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নদীবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে এবং দেশে ও বিদেশে বেশ কয়েকটি নদীর উৎস থেকে মোহনা পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণের সুবাদে জেনেছি, অনেক নদীই আজ তার চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে বা ফেলছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪২
Share:

নদী আর তার বাঁধ

Advertisement

জয়া মিত্র (‘সারা দেশে একটি নদীও অক্ষত নেই’, ৭-৭) আমাদের দেশের সমস্ত নদী পরিকল্পানাগুলিকে জোরালো ভাষায় আঘাত করেছেন। তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নদীবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে এবং দেশে ও বিদেশে বেশ কয়েকটি নদীর উৎস থেকে মোহনা পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণের সুবাদে জেনেছি, অনেক নদীই আজ তার চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে বা ফেলছে। দীর্ঘ গবেষণা থেকে জেনেছি যে, একটি নদী তার চরিত্র হারায় শুধুমাত্র বাঁধ দেওয়া বা পাশবাঁধের জন্য নয়। নদীর পার্শ্ববর্তী জমিতে চাষ, শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনচর্চার জন্য অতিমাত্রায় ভৌমজল তুলে নেওয়াতেও নদীর চরিত্রটি নষ্ট হয়ে যায়।

শ্রীমতী মিত্রের পরিবেশিত তথ্য সম্পর্কে কয়েকটি কথা। ১৯৭৮ সালের অজয় নদের বন্যার কারণ হিসেবে কখনও তিনি লিখেছেন, ‘হিংলো নদীর বাঁধ ভাঙার দরুনই’, আবার তার পরই লিখছেন, ‘বাঁধ খোলা জল ধরার জায়গা ছিল না নদীতে’। নদীবিজ্ঞানে ও নদীপাড়ের অসংখ্য মানুষের কাছে এই দুটি কারণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। এটা খেয়াল রাখা উচিত।

Advertisement

নিবন্ধের এক জায়গায় তিনি লিখছেন, ওই বন্যার ফলে পূর্ব দিকের পাশবাঁধ ভেঙে... গ্রামের পর গ্রাম সমস্ত চাষের মাঠ ৬ থেকে ৮ ফুট বালিকাদার নীচে চাপা প়ড়েছিল। এই বিষয়ে জানাতে চাই যে, ২০০২ সালে গবেষক মল্লনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানান যে, ওই বন্যার ফলে চাষজমির উপর জমা হওয়া বালিকাদার গভীরতা ছিল ১০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত। শ্রীমতী মিত্র অজয় নদ পূর্ব পাশবাঁধের কথা বলেছেন। কিন্তু বীরভূমের অজয় নদ পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত। অতএব অজয়ের কোনও পূর্ব পাশবাঁধ হয় না।

নিবন্ধের আর এক জায়গায় লেখক লিখছেন, ‘দুর্গাপুজোর নবমীর রাত্রে আচমকা এসে পড়া বিপুল জলের ধাক্কায় বোলপুরের কাছে অজয় নদের পাশবাঁধ তেইশ কিলোমিটার ভেঙে যায়’। এই প্রসঙ্গে জানাই যে, বিশ্বভারতীর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা সুতপা মুখোপাধ্যায় ও গবেষক হাসিবুর রহমানের প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। জানা যায় যে, ১৯৭৮ সালে অজয় নদের উত্তর পার্শ্বের পাশবাঁধ বা তটবন্দি মোট ৫.৭৮ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ পার্শ্বের তটবন্দি বা পাশবাঁধ ৩ কিলোমিটার ভেঙে গিয়েছিল। ২৩ কিলোমিটার নয়। উল্লেখিত ওই দিনটি ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। সে দিন দুর্গাপুজোর নবমীর রাত ছিল না।

মলয় মুখোপাধ্যায়। শিক্ষক, ভুগোল বিভাগ, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন

খেজুরি ২

হায়! রসুলপুর তুমি আরও উপেক্ষিত ব্রাত্য হলে। তোমার নামের শেষ চিহ্ন সমুদ্রবন্দরটিও তাজপুরে চলে গেল। তুমি লক্ষাধিক খেজুরি ২ নং ব্লকের তপসিলি জাতির দীর্ঘশ্বাসই বহন করে গেলে। তোমার উপর সেতু হবে সেই স্বাধীনতার পর থেকে আশ্বাস পাচ্ছ। বাম আমলে ছয় বার আশাহত হলে। মা মাটি মানুষের আমলে এক বার। তাও অভিনব ভাবে। তোমার উপর ভাসমান সেতু হবে। তাই হোক, কিন্তু কাজের শেষে দেখলে দু’পাশে দুটি ইংরেজ পরিত্যক্ত জেটিতে পলেস্তরা। এতটা অপমানিত তুমি কোনও দিন হওনি।

সত্যি, হতভাগ্য আমরা, খেজুরি ২ নং ব্লকের বাসিন্দারা। খেজুরির যা কিছু উন্নয়ন ওই খেজুরি ১ নং ব্লকের। ২ নং ছিটেফোঁটাও পায়নি। ২ নং ব্লকের প্রাণকেন্দ্র জনকাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও টিমটিম করছে বহির্বিভাগ নিয়ে। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও উন্নীত হল না। সে কথা থাক রসুলপুর। মহকুমা শহর কাঁথি তথা সভ্যজগতের সঙ্গে যোগাযোগে মান্ধাতা আমলের নৌকায় গরু ছাগল মোটর সাইকেল শিশু প্রসূতি সকলেই তোমার উপর যুগযুগ ভরসা রাখে। আর যাদের পয়সা আছে তারা হেঁড়িয়া ঘুরে আশি কিমি পথ পার হয় কাঁথি যেতে। অথচ সকল বিধায়কই খেজুরি ২ নং ব্লকের। লংকায় যে যায় সেই হয় রাবণ। তোমার জন্য কে গলা ফাটাবে রসুলপুর! দেখলে তো সুবর্ণরেখাকে। দিদি বাংলার দীর্ঘতম জলকন্যা দিলেন। দিদি যদি তোমার কথা ভাবে তবেই ভরসা। মাত্রই তো দেড়শো মিটার সেতু।

সাগর মণ্ডল। জনকা, খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর

সংস্কৃতি ও আবর্জনা

রবীন্দ্রসদন ও নন্দন চত্বরের উত্তর পশ্চিম কোণে যে ভ্যাটটি আছে তা প্রায়ই উপচে পড়ে নোংরা আবর্জনা আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। ফলে, ওখান দিয়ে অ্যাকাডেমি চত্বরে যাওয়াও দুরূহ হয়ে পড়ে। বৃষ্টি হলে তো অবস্থা আরও কঠিন। রবীন্দ্রসদনের টিকিট কাউন্টারটিও ওখানে। ভ্যাটটি বোধ করি প্রতিদিন পরিষ্কারও করা হয় না। প্রায় প্রতিদিনই বহু মানুষ আসেন ওই চত্বরে। ওখানে বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত কোনও না কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা আলোচনা ইত্যাদি হয়। সে জন্য সংস্কৃতিমনস্ক সাধারণ এবং বিশিষ্টজন ও শিল্পী-অতিথিদের আনাগোনা লেগেই থাকে ওই চত্বরে। ওই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বাকি পরিবেশের সঙ্গে ওই দৃশ্য অত্যন্ত বেমানান। এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ একান্ত জরুরি।

রত্না রায়। কলকাতা-৪৭

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন