সম্পাদক সমীপেষু

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোম্বাই-যাত্রা নিয়ে গৌতম চক্রবর্তীর রচনায় (রবিবাসরীয়, ১৮-১২) একটু তথ্যগত ফাঁক থেকে গেছে। এ বিষয়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কী জানিয়েছেন (‘আমার সাহিত্যজীবন’ গ্রন্থে) দেখা যাক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

শরদিন্দু, তারাশঙ্কর ও অন্যান্য

Advertisement

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোম্বাই-যাত্রা নিয়ে গৌতম চক্রবর্তীর রচনায় (রবিবাসরীয়, ১৮-১২) একটু তথ্যগত ফাঁক থেকে গেছে। এ বিষয়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কী জানিয়েছেন (‘আমার সাহিত্যজীবন’ গ্রন্থে) দেখা যাক। ১৯৩৮ সালে এক দিন দীনেশচন্দ্র সেন তারাশঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন খুবই জরুরি ভিত্তিতে। ফোন করেন ‘আনন্দবাজার’ ও ‘শনিবারের চিঠি’র অফিসে। তারাশঙ্কর বেহালায় দীনেশচন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সেখানে তখন বসে আছেন সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। দীনেশচন্দ্র সৌরীন্দ্রমোহনকে একটু অপেক্ষা করতে অনুরোধ করে তারাশঙ্করকে নিয়ে যান ভিতরের ঘরে। জানান, তাঁর শ্যালকপুত্র বোম্বে টকিজের হিমাংশু রায় (যিনি আবার ড. সুরেন দাশগুপ্তের শ্যালকও) এক জন বাঙালি গল্পলেখক চায়। ‘‘আপনার লেখা পড়ে ভাল লেগেছে। আপনাকে চায় সে। আবার সুরেনকে তার-ও করেছে। আপনি চলে যান সেখানে।’’ তিন বছরের চুক্তি। প্রথম বছর মাসে ৩৫০ টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৪৫০ এবং তৃতীয় বছরে ৫৫০ টাকা।

তারাশঙ্কর তো হতবাক! তখন তাঁর নিয়মিত মাসিক উপার্জন ৪০ টাকাও নয়। তবু সাহিত্য সাধনা ছেড়ে ওই কাজে যেতে মন সায় দিল না। সজনীকান্ত দাসের মতো শুভাকাঙ্ক্ষীও পরামর্শ দিলেন বোম্বাই চলে যেতে। কিন্তু মা ও স্ত্রী সমর্থন করলেন তারাশঙ্করের সিদ্ধান্তকে। দীনেশচন্দ্র প্রথমে অবাক হলেও শেষ পর্যন্ত এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তারাশঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে আত্মীয়-পরিজনদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জানিয়ে এসেছিলেন তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা। কিছু দিন পরে লোক পাঠালেন সুরেন দাশগুপ্ত। গেলেন গজেন্দ্র মিত্র। এ বার মাসিক বেতন ১০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব। তবু ‘হ্যাঁ’ বলতে রাজি হলেন না তারাশঙ্কর। এর দিন তিনেক বাদে আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড়ে শরদিন্দুর সঙ্গে দেখা তারাশঙ্করের। শরদিন্দু বললেন, ‘‘আপনি নিলেন না, আমি নিয়ে নিলাম ও কাজ। বম্বে যাচ্ছি আমি।’’

Advertisement

এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন। শব্দটা কি ‘অন্তাক্ষরী’ না ‘অন্ত্যাক্ষরী’? শরদিন্দু যদি শব্দটির স্রষ্টা হন, তবে তিনি ‘অন্তাক্ষরী’ লিখেছিলেন বলে মনে হয় না।

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। সল্টলেক

প্রতিবেদকের জবাব: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫১ সালে তাঁর স্মৃতিচারণমূলক লেখা ‘মন কণিকা’য় জানাচ্ছেন, ‘১৯৩৮-এর মাঝামাঝি একখানি চিঠি পাইলাম। লিখিয়াছেন কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ড. সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। তাঁহার শ্যালক হিমাংশু রায় তখন বম্বে টকীজ নামক চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তা। আমি বোম্বাই গিয়া এই চিত্র প্রতিষ্ঠানে গল্পলেখক রূপে চাকরি লইব কি না তাহাই ড. দাশগুপ্ত জানিতে চাহিয়াছেন।!’ সাহিত্য অকাদেমি থেকে সম্প্রতি বাংলায় শরদিন্দুকে নিয়ে শ্রাবণী পাল যে বই লিখেছেন, সেখানেও এই তথ্যটিই রয়েছে।

উপরন্তু ‘বঙ্গশ্রী’, ‘প্রবাসী’ ইত্যাদি পত্রিকার দৌলতে তারাশঙ্কর তত দিনে বেশ পরিচিত নাম। ১৯৩৮ সালে তাঁর ‘ধাত্রীদেবতা’ লেখার কাজ শেষ পর্যায়ে, ‘চৈতালী ঘূর্ণি’, ‘রাইকমল’-এর মতো উপন্যাস বই হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের ডাকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসছেন। অন্য দিকে শরদিন্দুর এই রাজনীতি-যোগ নেই। প্রযোজক দু’তিন জন লেখককে সিনেমার কাহিনিকার হওয়ার প্রস্তাব দিতেই পারেন, কে তা গ্রহণ করেছিলেন, সেটিই আসল কথা।

আইন ও নৈতিকতা

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। (‘রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই নোট বাতিল’, ১১-০১) তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে, রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে নেওয়া হয়েছে, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতস্বরূপ।

মুদ্রা বাতিল করার প্রয়োজন পড়লে কী প্রক্রিয়ায় তা করতে হবে, সে কথা ‘ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক আইন ১৯৩৪’-এ অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ওই আইনের ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সেন্ট্রাল বোর্ডের (রিজার্ভ ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক) সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার বাজারে নোট না ছাড়ার বা বাজার-চলতি নোট বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ অর্থাৎ, দেশের আইন বলছে, নোট বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। সেন্ট্রাল বোর্ড তথা রিজার্ভ ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আইন এবং নৈতিকতার বোধ সব সময় এক বিন্দুতে মেলে না। নৈতিকতার প্রশ্নে হয়তো সরকারকে কেউ আক্রমণ করতে পারেন। কিন্তু সরকার সাংবিধানিক কাঠামোয় আঘাত করেছে, এমনটা এ ক্ষেত্রে বলা যাচ্ছে না। নোট বাতিলের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তাতে আইনি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বা পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি নেই।

অরুণাভ ঘোষ। আইনজীবী, কলকাতা হাইকোর্ট

এবং বিষ্ণু দে

গৌতম চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘...ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্য থেকে বছরের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি বেছে নেওয়ার জন্য ১৯৬২ সালে দিল্লিতে জ্ঞানপীঠ কমিটির যে প্রথম বৈঠক বসেছিল, সেখানে সদস্য ছিলেন নীহাররঞ্জন। সে যাত্রায় কাজি নজরুল ইসলাম সম্মানদৌড়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রথম জ্ঞানপীঠ পেয়েছিলেন মলয়ালম লেখক জে কুরুপ।...’’ (‘সম্মানিত শঙ্খ ঘোষ’, ২৪-১২) প্রশ্ন হল, ১৯৬২ সালে জ্ঞানপীঠ কমিটির প্রথম বৈঠকের দু’বছর পরে কি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছিল? গৌতমবাবুর লেখায় স্পষ্ট হয়নি। কারণ, জে শঙ্কর কুরুপ জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৬৫ সালে। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে পেয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটিতে বাংলা সাহিত্যে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রাপক অন্য চার জনের কথা থাকলেও কবি বিষ্ণু দে-র নাম নেই। ১৯৭১ সালে ‘স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি জ্ঞানপীঠ পেয়েছিলেন।

স্বপনকুমার দে। কল্যাণী, নদিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন