সম্পাদক সমীপেষু

প্রায় তিন দশক পর পাশ-ফেল ফিরে আসার মূল কারণ শিক্ষার গুণগত মান কমে যাওয়া (‘ফিরছে পাশ-ফেল ব্যবস্থা’, ১০-৩)। এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল বলে পরীক্ষা ব্যবস্থা উঠে যায়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share:

পাশ-ফেল ফেরালেই কাজ শেষ?

Advertisement

প্রায় তিন দশক পর পাশ-ফেল ফিরে আসার মূল কারণ শিক্ষার গুণগত মান কমে যাওয়া (‘ফিরছে পাশ-ফেল ব্যবস্থা’, ১০-৩)। এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছিল বলে পরীক্ষা ব্যবস্থা উঠে যায়নি। বরং সারা বছর ধরে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তা হলে শিক্ষার গুণগত মান কমে গেল কেন? আসলে এই তিন দশকে আমরা পাশ-ফেল মানে কী সেটাই ভুলে গেছি। মাধ্যমিকে প্রতি বিষয়ে পাশ নম্বর ছিল ৩০ এবং এগ্রিগেটে ৩৪ পেতে হত, এখন সেটা নেমে হয়েছে ২০ এবং ২৫। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক পরীক্ষা হয়, নম্বর দেওয়া হয়, ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখানো হয় এবং প্রোগ্রেস রিপোর্টও ছাত্রদের দেওয়া হয়। খুব সহজ করে প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষা চলাকালীন নজরদারির শিথিলতা, উত্তরপত্র মূল্যায়নে উদারতা— সব ক্ষেত্রেই একটা প্রচেষ্টা থাকে যাতে ছাত্ররা সবাই ২৫ নম্বর পেয়ে যায়। এর উপর আছে গ্রেস নম্বর। ফলে ২৫ পেতে অসুবিধা হয় না। পরের শ্রেণিতে উপযুক্ত কি না বিবেচনা করার অবকাশ নেই। ৪৫% প্রশ্ন থাকে এই রকম— হ্যাঁ বা না লেখো, নীচের শব্দগুলি থেকে বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো, একটি বা দুটি শব্দে বা বাক্যে উত্তর দাও, বাঁ দিকের বাক্যাংশের সঙ্গে ডান দিকের বাক্যাংশ মিলিয়ে লেখো। তিন বা পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লিখতে ছাত্ররা উৎসাহ দেখায় না। ৪০%-৫০% নম্বর পেতে কোন অসুবিধা হয় না, একটু পড়াশুনা করলেই ৭০%-৮০%। পরীক্ষা ব্যবস্থা এমন জায়গায় গেছে যে খুব ভাল ছাত্রদের কথা ভাবাই হয় না। এর ফলে এক দিকে সাধারণ মানের ছাত্ররা (যার সংখ্যাই বেশি) উচ্চ প্রাথমিকে এসে ন্যূনতম পাঠ গ্রহণ করতে পারছে না, অন্য দিকে খুব ভাল ছাত্ররা মস্তিষ্ক খাটানোর সুযোগ পাচ্ছে না। বিজ্ঞান শাখায় ছাত্র ভর্তি কমে যাচ্ছে। তাই শুধু পাশ-ফেল ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলেই শিক্ষার মান বাড়বে না। পঞ্চম শ্রেণিতে রাজ্যস্তরে কেন্দ্রীয় ভাবে পরীক্ষা নিতে হবে। তার পর মেধার ভিত্তিতে স্কুলগুলি ছাত্র ভর্তি করবে। তবেই শিক্ষকরা ছাত্রদের গুণগত মান বুঝে পাঠদানে, প্রশ্নপত্র রচনায়, খাতার মূল্যায়নে গুণগত মান বাড়াতে সক্ষম হবেন। পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকারি ও বে-সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠ্য বিষয়, ভর্তির বয়স এক হবে না কেন, ভেবে দেখতে হবে। সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার ক্ষতিই করছে। কোচিং সেন্টারগুলোর নিজস্ব সিলেবাস, রুটিন অনুযায়ী চলে। সাধারণত এক জন শিক্ষক ২০-৩০ জন বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেমেয়ে পড়ান। বেশির ভাগই বিদ্যালয় শিক্ষক নন। ছাত্ররা স্কুলের পাঠ অনুশীলনের সুযোগ পায় না। সাধারণ মানের ছাত্রদের যেটা খুব প্রয়োজন। শিক্ষার মানও খারাপ। অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখ না করে পারছি না— সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থার ফলে বিজ্ঞান শাখার ছাত্ররা বিদ্যালয়েই আসে না। আমার প্রস্তাব— ওই ক্লাসগুলো পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের জন্য রাখা যেতে পারে। এতে মনে হয় শিক্ষকরাও ক্লাস না করার দায় থেকে মুক্ত হয়ে খুশিই হবেন। আর ছাত্র–শিক্ষক অনুপাত ঠিক করতে হবে এবং শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার কাজেই বেশি সময় দিতে পারেন, তা দেখতে হবে।

অসিতকুমার রায় ভদ্রেশ্বর, হুগলি

Advertisement

সংকীর্তন

মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার মরশুমে (অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ও মার্চে) পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর-১ ও রামনগর-২ ব্লকের বহু গ্রামে খোল-করতাল ও অত্যাধুনিক সাউন্ডসিস্টেম সহ নাম সংকীর্তন ও অন্ন-মহোৎসবের আয়োজন হয়। কমপক্ষে একটানা দু’দিন থেকে শুরু করে তিন-চার-পাঁচ, কোথাও কোথাও একটানা সাত দিন পর্যন্ত নাম সংকীর্তন চলে। প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে ‘শব্দবিধি’র বালাই নেই (কোথাও কোথাও হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়)। অন্যান্যদের সঙ্গে শব্দদানবের শিকার হয় ওই সব গ্রামেরই কিছু উজ্জ্বল কিশোরকিশোরীর ভবিষ্যৎ। আমি এখানকারই এক প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে পড়াশোনা করেছি, আমার নিজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলোর কথা মনে পড়লে শিউরে উঠি। গত ছ’বছর এখানকারই একটা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ানোর সুবাদে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা বুঝতে পারি। পরীক্ষার ঠিক আগে যখন পুরো সিলেবাস ঝালিয়ে নেওয়ার সময় তখনই বাদ সাধে তারস্বরে নাম সংকীর্তন! ধর্মভীরু অভিভাবকরা ‘নাম সংকীর্তন’-এর বিরুদ্ধে কিছু বলার কথা ভাবতেই পারেন না, প্রশাসন নির্বিকার। পড়াশোনায় খুব ভাল এক ছাত্রীর সঙ্গে সে দিন দেখা, আক্ষেপের সুরে বলল, ‘কেমিস্ট্রি পড়তে খুব ভাল লাগে। কলেজেও কেমিস্ট্রি নিয়েই পড়ব ভেবে রেখেছি, কিন্তু বাড়ির পাশেই এক সপ্তাহ ধরে মাইক বাজছে, বিক্রিয়াগুলো সব গুলিয়ে যাচ্ছে, কী যে হবে!’ হোক না নাম সংকীর্তন, মাইক না হয় বন্ধই থাক, দেশের ভবিষ্যতেরা উজ্জ্বল হোক, উজ্জ্বল হোক গ্রাম। প্রশাসন কি একটু সজাগ হবে না?

রঞ্জন সাউ রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর

নোবেল ও ঋণ

ঋণগ্রস্ত বাংলাকে দাঁড় করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্য বলে দাবি করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (‘মমতার নোবেল’, ২৬-২)। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অবশ্য রাজ্য বাজেট ভাষণে জানিয়েছিলেন, ‘...পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঋণ ২০১০-১১-এর (তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার সময়) ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে ৩ লক্ষ ৫ হাজার কোটিতে ঠেকেছে, অর্থাৎ বিগত ৬ অর্থবর্ষে ৬৪% বেড়েছে।

এটাই যেখানে বাস্তব, সেখানে অরূপবাবুর মন্তব্য, ‘...আলিমুদ্দিনে মুড়ি খেতে খেতে সিপিএমের নেতারা এই ভেবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন যে, ঋণগ্রস্ত বাংলা মমতার হাতে তুলে দিয়েছেন... মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ঘুরিয়ে দাঁড় করান তাতে তাঁর অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া উচিত...।’ অমিতবাবু বাজেট ভাষণে আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সরকারের ঋণ ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে অনুমিত ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি দাঁড়াবে। অর্থাৎ ঋণের ফাঁদ ক্রমশ অতলস্পর্শী হয়ে কৃষ্ণগহ্বরের চেহারা নিচ্ছে। আগামী ২০২০-২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঋণের এই গহ্বর কোন তল স্পর্শ করে, তা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

মধুসূদন দাশ ঘোষ হরিপাল, হুগলি

থেকেও নেই

ক’দিন আগে মেদিনীপুরের গড়বেতা হয়ে বাঁকুড়ার ভূতশহর, দিকপাড় গ্রাম গিয়েছিলাম। পথে শিলাবতী ও জয়পণ্ডা নদী পেরোলাম। সুখসুবিধা নিয়ে কথা বললাম বহু মানুষের সঙ্গে। দেখলাম চিকিৎসার অভাবে সবাই অসহায়। অনেকে ভূতশহরে তৈরি হওয়া হাসপাতালের পরিকাঠামো পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ার কথা বললেন। বাম আমলের তৈরি এই হাসপাতাল অনেক গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থার কেন্দ্র হতে পারত। চাপ কমত বাঁকুড়া বা মেদিনীপুর হাসপাতালের।

সুদর্শন নন্দী রাঙামাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর

মোদী রহস্য

ইন্দিরা গাঁধীর পরে দাপুটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীজি উঠে এসেছেন। অখিলেশ ও রাহুল গাঁধীর জনসভার ভিড় ভোটে প্রতিফলিত হয়নি, যেটা মোদী করতে পেরেছেন (‘মোদীর উত্তর’, ১২-৩)। এর কয়েকটা কারণ আছে।

প্রথমত, বিজেপির তিন বছরের শাসনে কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়নি, যা জনগণকে প্রভাবিত করেছে।

দ্বিতীয়ত, মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিরোধীদের প্রচার যে অসার, তা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিয়েছে। এটাও ভোটের বাক্সে প্রভাব রেখেছে।

তৃতীয়ত, পুরনো ঘটনা জনগণ ভুলে যায়। গুজরাত ২০০২-এর স্মৃতিও ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে।

অগ্নিমিত্র চৌধুরী কলকাতা-৮৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন