সম্পাদক সমীপেষু

ধান ভানতে শিবের গীতের মতো উগ্র হিন্দুত্বের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ রায় (‘মিলিটারি রামের কবলে’, ৯-৪) হঠাৎ কেন কমিউনিস্টদের নিয়ে পড়লেন, বোঝা দুষ্কর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৪
Share:

উৎপল দত্ত এবং মার্ক্সবাদ

Advertisement

ধান ভানতে শিবের গীতের মতো উগ্র হিন্দুত্বের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ রায় (‘মিলিটারি রামের কবলে’, ৯-৪) হঠাৎ কেন কমিউনিস্টদের নিয়ে পড়লেন, বোঝা দুষ্কর। এ প্রসঙ্গে উৎপল দত্তের রচনা থেকে আংশিক উদ্ধৃতি বিষয়টিকে নিঃসন্দেহে জটিল করে তুলেছে। যেমন, উৎপল দত্তের ‘রবি ঠাকুরের মূর্তি’ প্রবন্ধ থেকে তিনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘বিবেকানন্দ রামমোহনকে সঙ্গে নিতে পারিস না... তোরা সর্বনাশ করছিস।’ কিন্তু যে অংশ উদ্ধৃত হল না, সেখানে জপেনদা নকশালপন্থী তরুণ রাজেনকে বলেন, ‘কমিউনিস্টরা হঠাৎ গজানো কোনও আগাছা নয়, তাদের শিকড় থাকে জনজীবনের গভীরে। তারা এক দীর্ঘ ঐতিহ্যের নূতন বাহক, তারা অবিচ্ছিন্ন এক ধারার সর্বোত্তম ও সর্বকনিষ্ঠ ধাপ। আঠারো শতকে এ দেশের মানুষ যে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী লড়াই শুরু করেছেন, সেটাই চলছে— এখন তারাই উন্নততম ধাপ। তোরা এক বিরাট ঐতিহ্যের বাহক। তোরা শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক।’ অর্থাৎ, উৎপল দত্ত নকশাল আন্দোলনকে দেখেন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম হিসাবে।

নিবন্ধকার লিখেছেন ‘রামকৃষ্ণ ভক্ত নাটককার গিরিশচন্দ্রকে নিয়ে গোটা একটা বই লিখেছিলেন উৎপল দত্ত। উদ্দেশ্য ছিল সহজ-সরল ভক্তি কী ভাবে মিশে আছে জনমানসে, তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করা।’ সবিনয়ে জানাই, উৎপল দত্তের ‘গিরিশ মানস’ মার্ক্সবাদের আলোয় ঐতিহ্যের পুনর্বিচারের সার্থক উদাহরণ, জনমানসে ভক্তি কী ভাবে মিশে আছে তার স্বরূপ ব্যাখ্যা নয়। যে কাজ তলস্তয় সম্পর্কে করেছিলেন লেনিন বা লু সুন সম্পর্কে মাও সে তুং, গিরিশ সম্পর্কে তা-ই করেছেন উৎপল। গ্রন্থের শেষ ভাগে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এতক্ষণ যা বলেছি তার অর্থ যদি কারওর কাছে এই দাঁড়ায় যে সমগ্র গিরিশ, তাঁর ধর্মচেতনা সমেত, আমাদের নমস্য, তবে তা বিষম ভুল হবে। মার্ক্সবাদ শুধু বস্তুর চিন্তা নয়, চিন্তারও চিন্তা। দ্বৈত বিচারে অতীতের সব সাহিত্যকে আমাদের দেখতে হবে। প্রথমত, অতীতের শ্রেণিসংগ্রামে সে সাহিত্যের স্থান কী ছিল? দ্বিতীয়ত, আজকের শ্রেণিসংগ্রামে তার মূল্য কী?’ অর্থাৎ, যুগযন্ত্রণা কী ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে গিরিশের নাটকে এবং আজকের যুগে সমাজবিপ্লবে কী ভাবে তাকে আয়ুধ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, সেটাই গবেষণার বিষয়।

Advertisement

ওই গ্রন্থেই তিনি আরও লিখেছেন ‘রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের দর্শন সে যুগে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করলেও আজ হয়তো প্রয়োজন মানুষকে নাস্তিকতায় দীক্ষিত করা, ঈশ্বর নামক কুসংস্কারটির মূলোচ্ছেদ করা।’ তিনি চেয়েছিলেন গিরিশ রচনাবলির ‘দায়িত্বপূর্ণ সম্পাদনা’ যাতে আমরা ঐতিহ্য থেকে বিয়োজিত না হই। একই সঙ্গে বলেন গিরিশকে যাঁরা স্রেফ রামকৃষ্ণের শিষ্য হিসাবে দেখাতে চান, তাঁরাও ‘আত্মঘাতী ক্রীড়ায়’ মেতেছেন, কারণ ‘মানুষকে ওভাবে লেবেল মেরে দেওয়া যায় না।’

নিঃসন্দেহে হিন্দুত্বের (এই কথাটি বিবেকানন্দ বা অরবিন্দের লেখায় নেই, এটি সাভারকরের উদ্ভাবন) উত্থানের কারণ বামপন্থী আন্দোলনের দুর্বলতা। যে দেশে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত, সেখানে বিপ্লব না হলে ফ্যাসিবাদের পদসঞ্চার অনিবার্য। উদাহরণ, গ্রামশির ইতালিতে মুসোলিনির এবং রোজা লুক্সেমবুর্গের জার্মানিতে হিটলারের উত্থান।

শিবাজী ভাদুড়ী সাঁতরাগাছি, হাওড়া

বিপজ্জনক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড়ের মানুষের ইচ্ছে-অনিচ্ছের উপর একটি প্রকল্পের কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন (‘গ্রামের মানুষ চাইলে...’, ৯-২)। এটা বাংলার পক্ষে বিপজ্জনক, কারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কয়েকটি জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে। ভাঙরে এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা এই পাওয়ার গ্রিড চান। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে একটি কথা বুঝতে হবে, শুধু উৎসব দিয়ে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। উৎসবের প্রয়োজন আছে, সেই সঙ্গে অন্য কাজগুলিও দরকার। শীতের মরশুমে অনেক পুরসভায় ‘পিঠে-পুলি’ উৎসব হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনেক জায়গায় খোলা নর্দমাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার হয়নি।

রানাজী বসু নিউব্যারাকপুর

রাজা ছিলেন না

গৌতম চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘গোরক্ষনাথের ভক্ত মুসলিম যোগীরা কোরান ও রামায়ণ পাঠ করেন এবং সারেঙ্গি বাজিয়ে গোপীচাঁদের গান গাইতে থাকেন। বাংলার ময়মনসিংহ রাজা গোপীচাঁদ ও তার মা ময়নামতী গোরক্ষনাথের শিষ্য ছিলেন।’ (‘হিংলাজ তো পাকিস্তানে, আদিত্যনাথ কবে যাবেন’, ১-৪)।

গোপীচাঁদ বা গোবিন্দচন্দ্র সিলেটের রাজা ছিলেন। পিতার নাম মানিকচন্দ্র আর মায়ের নাম ময়নামতী। ময়নামতীর পিতার নাম ছিল তিলকচন্দ্র। সম্ভবত মানিকচন্দ্র ‘চন্দ্র’ বংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্রের কনিষ্ঠ ভাই ছিলেন। ময়নামতীর পিতা তিলকচন্দ্র আদি ত্রিপুরা (পার্বত্য) রাজ্যের মেহের কুলের রাজা ছিলেন। গোপীচাঁদ গোরক্ষনাথের শিষ্য ছিলেন কি না, জানা যায় না।

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে দক্ষিণ সিলেটের, বর্তমান মৌলবী বাজার জেলার রাজনগর থানার অন্তর্গত পাঁচগাও-এর পশ্চিম ভাগে, রাজা শ্রীচন্দ্রের ভূমি দানের তাম্রলিপিতে দেখা যায় চন্দ্র বংশীয় রাজারা ‘বৌদ্ধ’ ধর্মাশ্রিত ছিলেন।

দশম শতাব্দীর প্রথম ভাগে বিহারের রোটাস্গড়ে আফগানিস্থানের কাবুল আগত বৌদ্ধ রাজা পূর্ণচন্দ্র রাজত্ব করেন। তার পর দিনাজপুরের ‘বানানাগড়’ দখল করে ঢাকার ‘রামপাল’ রাজত্ব দখল করার পর আদি ত্রিপুরার পার্বত্য অঞ্চলে কুমিল্লায়ও রাজত্ব করেছিলেন। পরবর্তী কালে রাজা শ্রীচন্দ্রের রাজত্বের সীমা ছিল দক্ষিণ ও উত্তর সিলেট ও কামরূপের উত্তর গৌহাটী পর্যন্ত, তাম্রলিপিতে বলা হয়েছে।

ময়নামতী গোরক্ষনাথের শিষ্যা ছিলেন। তিনি গোরক্ষনাথের শিষ্য হাঁড়ি সিদ্ধার সঙ্গে ব্যভিচারে মত্ত হয়ে দুজনেই উধাও হয়ে যান। তথ্য সূত্রে এ সব জানা যায়।

আমার পিতা হারান চন্দ্র দাশ (জন্ম ১৯০১ সাল) তাঁর জন্মস্থান, পাঁচগাও গ্রামে থেকেই বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। গ্রামের বাড়িতে, তাঁর পিতা প্রয়াত উকিল হরকিংকর দাশ সংগৃহীত বিশাল লাইব্রেরিতে বসেই প্রবন্ধ লিখতেন। ১৯৪০ সালের ২ নভেম্বর তারিখে আনন্দবাজার সংস্থার ‘দেশ’, পাক্ষিক ৭ম বর্ষের সংখ্যায় ‘শ্রীহট্টের রাজা গোবিন্দ চন্দ্র’ বিষয়ে বা নামে ঐতিহাসিক তথ্য-সহ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে জানা যায়, মীন নাথ, কানেকানাথ প্রভৃতি যোগীদের বা নাথ সম্প্রদায়ের আখড়া ছিল সিলেট শহরের অদূরে মীন নাথের টিলা, যাকে পরবর্তী কালে বলা হত মনা রায়ের টিলা। সিলেটে যে নাথ যোগী সম্প্রদায়ের আদি প্রভাব ছিল, ‘দেশ’ পাক্ষিকে আমার পিতার প্রকাশিত লেখার মধ্যে তার যথেষ্ট ইঙ্গিত আছে।

সহজেই বলা যায় গোপীচাঁদ ময়মনসিংহের রাজা ছিলেন না। আরও তথ্য, গোপীচাঁদ বা গোবিন্দচন্দ্র ঢাকা ময়মনসিংহের অন্তর্গত ‘সাভার’-এর রাজার কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন।

অর্ধেন্দু শেখর দাশ কলকাতা-৪৬

সম্ভব কি?

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ‘গোহ পালোয়ান’ (পত্রিকা, ২৫-২) শীর্ষক লেখায় এক জায়গায় লিখেছেন, ‘... গোবর লাহোর রওনা হলেন রহিম ওস্তাদ ও গামা পালোয়ানের তিন নম্বর মোলাকাত দেখার জন্যে।
সেটা ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।’ কিন্তু গোবর গুহ মারা যান ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ। তা হলে ১৯৯০ সালে তাঁর পক্ষে লাহোর যাওয়া কী করে সম্ভব?

একটু তথ্য সংযোজন করি। গোবর গুহ-র বাবা ছিলেন রামচরণ গুহ। ভারত বিখ্যাত পালোয়ান খোলসা চোরে বমনির কাছে গোবর গুহ কুস্তির তালিম নিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত আখড়ার সম্মান রেখেছিলেন তাঁর পুত্র মানিক এবং শিষ্য বনমালি।

সুবীর ভট্টাচার্য কলকাতা-৬৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন