শিক্ষকদের ঘরটাই শুধু ডিজিট্যাল
প্রায় সাত বছর শিক্ষক হিসেবে মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক এক স্কুলে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে একটা বিবর্তন আমার চোখে অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের বিবর্তন। আগে আমরা দেখেছি ধুতি-পাঞ্জাবি, বা অত্যন্ত রুচিশীল শাড়ি পরিহিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, যাঁরা শুধুমাত্র উপস্থিতি দিয়েই অনেক আচরণগত শিক্ষা দিয়ে যেতেন। তাঁদের জ্ঞানের সাধনা ও পরিধি ছিল চোখে পড়ার মতো, পড়ানোর কৌশলও ছিল মনোমুগ্ধকর! কিন্তু আজ আমরা ক্লাসরুমকে ডিজিট্যাল না বানাতে পারলেও টিচার্স রুমকে ডিজিট্যাল বানিয়ে ফেলেছি! গ্রামের ছাত্ররা যেহেতু শিক্ষার অধিকার বিষয়ে অত সচেতন নয়, ক্লাসরুমে তত প্রশ্নমুখর নয়, তাই শিক্ষকদেরও উত্তরমুখর হয়ে আসতে হবে, এ রূপ বাধ্যবাধকতা থাকে না। তাই স্কুলে এসেই শুরু হয়ে যায় নেট ফেলে মাছ ধরার কাজ, মানে অনলাইন শপিং। মোবাইল ফোনের অনলাইন নিলাম থেকে সস্তার কুর্তি দিয়ে শুরু হয়ে ট্রেন, আইপিএল বা সিনেমার টিকিট— তালিকা বড়ই দীর্ঘ। এই বিবর্তনের মূল ধারক-বাহকরা বেশির ভাগই অল্পবয়সি শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁরা পেশাটির অপার গুরুত্ব অনুভব না করে যে কোনও চাকরির সঙ্গে এটিকে গুলিয়ে ফেলে আর মাস মাইনের দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করে স্কুলকেই আড্ডাখানা-ক্লাব বানিয়ে তুলতে তুমুল তত্পর! সুতরাং ফল হচ্ছে মারাত্মক। ছাত্ররা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দ্রুত হারাচ্ছে। হারাচ্ছে এই দুই শ্রেণির ভেতর সম্পর্ক, পড়াতে না পারি, ন্যূনতম নীতিশিক্ষাটুকুও আমরা দিতে পারছি না! পারছি না আমাদের বেশভূষার (যতই বিতর্ক হোক, এ কথা অনস্বীকার্য যে পোশাক একটা আলাদা গুরুত্ব রাখেই) মাধ্যমেও তাদের ভেতর সম্ভ্রম গড়ে তুলতে। শুধু পেরেছি ‘আসি যাই, মাইনে পাই’ গোছের একটা তকমা নিজেদের পিঠে সেঁটে নিতে।
কুন্তল চাকী বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
ধর্ম নয়, ধর্মতন্ত্র
চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের (‘সিংহ খাবে পনির পকোড়া’, ২৮-৩) রচনাটি অনবদ্য। তবে ‘ধর্ম কী? অভিধানবাজ বলবেন, যা ধারণ করে। কাঁচকলা। ধর্ম তা-ই, যা বারণ করে’— বিষয়টিকে কি এ রকম একটা তির্যক উপমা প্রয়োগ করে ধর্মকে দায়বদ্ধ করা যায়?
ধর্ম নয়, পুরো দোষটা কদাকার ধর্মতন্ত্রের। রবীন্দ্রনাথের প্রাঞ্জল ব্যাখ্যায় এর উত্তরটি এ ক্ষেত্রে স্মর্তব্য, ‘মনে রাখা দরকার, ধর্ম আর ধর্মতন্ত্র এক জিনিস নয়। ও যেন আগুন আর ছাই। ধর্মতন্ত্রের কাছে ধর্ম যখন খাটো হয় তখন নদীর বালি নদীর জলের উপর মোড়লি করিতে থাকে। তখন স্রোত চলে না, মরুভূমি ধু-ধু করে। তার উপরে, সেই অচলতাটাকে লইয়াই মানুষ যখন বুক ফোলায় তখন গণ্ডস্যোপরি বিস্ফোটকং।... মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতন্ত্র।’ (কর্তার ইচ্ছায় কর্ম)। এর সারমর্ম থেকে উপলব্ধি করা যায় ধর্মের অসীম ব্যাপ্তি। ধর্ম-ব্যবসায়ীরা ধর্মান্ধতার কুৎসিত পুঁজি ব্যবহার করে আবহমানকাল ধরে চালিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদের বিষাক্ত সংক্রমণ।
পৃথ্বীশ মজুমদার কোন্নগর, হুগলি
তথ্যের ত্রুটি
‘যোগ্যতা ছাড়াই রয়েছেন অধ্যক্ষ’, (৫-৫) সংবাদটির তথ্যগত ত্রুটি অত্যন্ত আপত্তিকর ও মানহানিকর। প্রথমত, শ্যামলকুমার মুখোপাধ্যায় ক্যালকাটা হোমিয়োপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নয়, ডি এন দে হোমিয়োপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। সেই কারণেই তাঁর নাম ক্যালকাটা হোমিয়োপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থী তালিকায় নথিভুক্ত নেই। দ্বিতীয়ত, ডা. মুখোপাধ্যায় ২০০৪ সালে হোমিয়োপ্যাথিতে এমডি করেন। তৃতীয়ত, সিসিএইচ, ওয়েস্ট বেঙ্গল হোমিয়োপ্যাথিক এডুকেশন সার্ভিসেস (২০১৫) এবং প্রকাশিত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, হোমিয়োপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষের যোগ্যতা, অর্থাৎ ১) এমডি ডিগ্রি (২০০৪ সাল); ২) অধ্যাপক পদে (২০১২ সাল থেকে) ন্যূনতম দু’বছরের অভিজ্ঞতা, ডা. মুখোপাধ্যায়ের আছে। চতুর্থত, ডিএমএস পাঠ্যক্রমে ডা. মুখোপাধ্যায় যোগ দেন ১৯৭৯ সালে, অর্থাৎ ১৯৮৩-র আগে।
বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় সাধারণ সম্পাদক, এনআইএইচ প্রাক্তনী অ্যাসোসিয়েশন
তথ্য সংযোজন
সরকারি-অসরকারি কলেজ নির্বিশেষে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতামানের বিষয়টি ঠিক করে দেশের হোমিয়োপ্যাথি শিক্ষার সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব হোমিয়োপ্যাথি’ (সিসিএইচ)। সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং অসরকারি কলেজগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ‘লোকাল ম্যানেজিং কমিটি’ তা মেনে শিক্ষক পদে নিয়োগ, প্রমোশন এবং অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিষয়টি কার্যকর করে। সিসিএইচ আইন মোতাবেক ডিপ্লোমা পাশ চিকিৎসকদের স্নাতক হিসেবে স্বীকার করে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মহামান্য পটনা হাইকোর্ট ২৩/৭/২০০৮-এ এক মামলার রায়ে জানিয়েছেন, ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের স্নাতকতুল্য মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রেও স্নাতক চিকিৎসকের সমান বেতন ও প্রমোশন দিতে হবে। প্রসঙ্গত, শ্যামলবাবু কিন্তু
১৯৮৩-র ব্যাচে ডিএমএস পাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রকাশিত ‘হোমিয়োপ্যাথিক মেডিক্যাল এডুকেশন রিক্রুটমেন্ট রুল সার্ভিস ২০১৫ (সংশোধনী)’ থেকে জানা যাচ্ছে, অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতা এমডি এবং প্রফেসর পদে ন্যূনতম দু’বছরের অভিজ্ঞতা। ২০১৬ সালে প্রকাশিত রাজ্যের চারটি সরকারি হোমিয়োপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞাপনেও একই যোগ্যতামান চাওয়া হয়েছে। তার পর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গঠিত ইন্টারভিউ বোর্ড সব কিছু যাচাই করার পর চারটি কলেজের অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
মিহির সেন কলকাতা-১
প্রতিবেদকের উত্তর: ডি এন দে হোমিয়োপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত শ্যামল মুখোপাধ্যায় ১৯৮৩ সালে নয়, ১৯৮৬ সালে পাশ করেছেন। সে তথ্য-সম্পর্কিত নথি ও প্রমাণ দেখেই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। এমনকী খোদ শ্যামলবাবু যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে তিনি নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি এটাও জানাই, খোদ স্বাস্থ্য দফতরের হোমিয়ো বিভাগের অধিকর্তার কাছে তৎকালীন ডি এন দে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রশাসক চিকিৎসক অখিলেশ খান যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন, তাতেও বলা ছিল, শ্যামলবাবু বিএইচএমএস নন। কারণ, ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব হোমিয়োপ্যাথি’ (সিসিএইচ)-র নিয়মানুযায়ী, (ইন এডুকেশন অ্যান্ড সার্ভিস) বিএইচএমএস হিসাবে তাঁকেই ডিগ্রি দেওয়া হয় যিনি এক বছরের রোটেটিং কমপালসারি ইন্টার্নশিপ’ করেছেন। পরিশেষে বলি, সমস্ত রকম তথ্য-প্রমাণ নিয়েই সংবাদটি লেখা হয়েছে।
ভ্রম সংশোধন
‘রাষ্ট্রপতি কে, আজ বৈঠকে বিরোধীরা’ (২৬-৫, পৃ ৮) প্রতিবেদনে গোপালকৃষ্ণ গাঁধীকে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রপৌত্র লেখা হয়েছে। তিনি গাঁধীজির পৌত্র— দেবদাস গাঁধীর পুত্র। এ দিনই পুলিশের জ্বলন্ত গাড়ির ছবিতে চিত্রগ্রাহকের নাম বিশ্বনাথ বণিক লেখা হয়েছিল (পৃ ১)। ছবিটি তুলেছিলেন শৌভিক দে। অনিচ্ছাকৃত এই দুটি ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in