রথযাত্রা ও যাত্রা
আমি খুব যাত্রাপাগল ছিলাম। রথযাত্রার দিন অনেক বাংলা খবরের কাগজ কিনতাম। তাতে থাকত বিভিন্ন যাত্রাদলের বড় বড় বিজ্ঞাপন। লক্ষ্য থাকত শেখর গঙ্গোপাধ্যায়, দেবগোপাল, ইন্দ্র লাহিড়ী, বেলা সরকার, বীণা দাশগুপ্ত— এঁদের যাত্রার নাম। কে কোন দলে এবং যাত্রার নাম মুখস্থ হয়ে যেত। যত্ন করে রাখতাম সেই সব কাগজগুলি। জ্যোৎস্না দত্ত-গুরুদাস ধাড়ার ‘সোনাই দিঘি’ খুব ভাল লেগেছিল। যেখানেই শুনতাম ‘মীরার বঁধুয়া’ হবে, ছুটে যেতাম। চির দিন মনে থাকবে ‘গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম’ যাত্রায় শেখর গঙ্গোপাধ্যায় ও বেলা সরকারের অভিনয়। লতা দেশাই, ইন্দ্র লাহিড়ীর ‘বিল্বমঙ্গল ঠাকুর’ এক অসাধারণ যাত্রাপালা। বীণা দাশগুপ্তর কথা আমাদের মতো যাত্রাপ্রেমীরা সকলেই স্মরণ করে। অনেকের ভাল লাগত শিবদাস চট্টোপাধ্যায় কিংবা রাখাল সিংহকে। বছর বছর রথযাত্রা আসে কিন্তু যাত্রাদলের সেই ছবি-সহ বিজ্ঞাপনগুলি আর আসে না। তাদের প্রাণ ঢালা অভিনয় এখনও কানে বাজে। কিন্তু যাত্রার সুরপার্টির কনসার্ট, ঘণ্টার আওয়াজ আর শোনা যায় না। সেই সব মহান শিল্পীরা কেমন আছেন জানা নেই। এখনও একটা-দুটো দল টিমটিম করছে। মাখনলাল নট্ট বেঁচে আছেন কি না জানা নেই। ভীষ্মের শরশয্যার ইচ্ছামৃত্যু নিয়ে হয়তো দেখতেন সব।
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
বীরভূম
অনীহা কেন
অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক অতনু পুরকায়স্থ এ রাজ্যের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আইএএস-কে পেশা হিসেবে বেছে নিতে অনেক যুক্তি এবং তথ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন (১৬-৬, ১৭-৬)। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন আইএএস, আইপিএস না হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে।
এক) আইএএস হতে গেলে দীর্ঘ অনুশীলন এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষা শেষ করে চাকরির জন্য একনিষ্ঠ ভাবে প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে।
দুই) তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কোনও রকমে চার বছরে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলেই নিশ্চিত চাকরি। সেখানে বেতনও বছর বছর ঊর্ধ্বমুখী, আবার বিদেশ যাত্রার সুযোগ, তারা কেন আইএএস, আইপিএস-এর কঠোর অনুশীলনে যাবে? তবে পোস্ট-ট্রাম্প পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই ক্ষেত্রে কাজ কমে যাওয়ায় পরবর্তী কালে কী হয় দেখা যাক।
তিন) বর্তমানে আইএএস, আইপিএস-দের সেই সম্মান কোথায়! রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষ সকলের কাছেই তাঁদের হেনস্তা হতে হয়। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়লেও সম্মান আর উচ্চাসনে নেই, ক্রমশই নিম্নমুখী। রাজনীতির বেশির ভাগ অশিক্ষিত লোকজন এখন এক জন জেলাশাসককে অসম্মান করছে, তার নীচের ধাপের আধিকারিকরা জনগণের রোষের শিকার হচ্ছেন— সংবাদমাধ্যমে হামেশাই দেখা যায়। এগুলিও এই সব পদের প্রতি অনীহার কারণ। এই চিত্র মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির চোখে আইএএস, আইপিএস হওয়ার মোহ ভেঙে দেয়। তাই মেধাবী ছাত্ররা চেষ্টা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, গবেষক হতে কিংবা আই আই টি বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরও বড় পেশায় যেতে। এ ছাড়া বেতন বৃদ্ধির ফলে স্কুল শিক্ষকদের ভদ্রস্থ মাইনে, নির্ঝঞ্ঝাট জীবন পেশা হিসেবে নির্দ্বিধায় বেছে নিতে ছেলেমেয়েরা আগ্রহী হচ্ছে। এই প্রজন্মের মনে হয়েছে, পেশার মধ্যে অন্যের অঙ্গুলিলেহন এবং সর্ব ক্ষণ একটা দুশ্চিন্তার টানাপড়েন জীবনচর্চার মধ্যে ঢুকে পড়ে, যার ফল ভোগ করে পরিবারও। তাই দেখা যায় অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস-রা চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতায় ক্লিষ্ট হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে মন্ত্রী হয়ে প্রকৃত ক্ষমতাশালী হতে চাইছেন।
চার) বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উচ্চ মেধার ছেলেমেয়েদের প্রশাসনের কাজে আগ্রহী করে না, অন্য দিকে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, পারিবারিক অনাগ্রহ, সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা, মধ্যমেধার ছেলেমেয়েদের ধৈর্যহীনতা এই সরকারি পদগুলির প্রতি আকৃষ্ট করে না। রবীন্দ্রনাথের মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম বাঙালি আইসিএস, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পুত্র রথীন্দ্রনাথকে আইসিএস বা ব্যারিস্টার না করে কৃষিবিজ্ঞান পড়তে পাঠিয়ে ছিলেন।
ত্রিদিব মিশ্র
শান্তিনিকেতন
আধার-প্রশ্ন
আমার পরিবারের চার জন সদস্যের প্রত্যেকেরই আধার কার্ড আছে। মাস দুয়েক আগে আধার কার্ডে ঠিকানা বদল করার জন্য স্থানীয় এনরোলমেন্ট সেন্টারে গিয়েছিলাম। ফর্ম পূরণ করে তার সঙ্গে সব প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার পর একে একে আমাদের চার জনকে ডাকা হয় কম্পিউটারে সব তথ্য ঠিকঠাক ইনপুট করা হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য। আমার বাবাকে বলা হয় যে তাঁর আর নতুন করে বায়োমেট্রিক আপডেট করতে হবে না। কিন্তু আমার, মায়ের ও ভাইয়ের করতে হবে। কারণটা ঠিক বুঝলাম না। আমরা চার জন একসঙ্গে একই সময়ে প্রথম বার আধার কার্ড পেয়েছিলাম। তাও তিন জন আপডেট করালাম। মায়ের ও ভাইয়েরটা হলেও আমারটা হল না। কারণ হিসেবে বলা হল, আমার হাতের আঙুলের চামড়া নাকি পাতলা হয়ে গেছে তাই স্ক্যান করা যাচ্ছে না। আমাকে এক মাস বাদে আবার নাকি যেতে হবে। অথচ দিন পনেরো পর খোঁজ নিতে গিয়ে আমার ও ভাইয়ের কার্ড পাওয়া গেল, মা ও বাবারটা শুনলাম ক্যানসেল হয়ে গেছে। তাঁদের দু’জনকে আবার যেতে হবে। যা-ই হোক, দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় সেগুলোও হয়েছে এবং এ বার বাবাকেও আপডেট করাতে ও মাকেও দ্বিতীয় বার আপডেট করাতে হয়েছে। আমার জিজ্ঞাস্য হল: ১. একই সঙ্গে সবাই কার্ড পেলেও এক-এক জনের জন্য এক-এক রকম নিয়ম কেন?
২. ঠিকানা বদলের জন্য কি বায়োমেট্রিক আপডেট আবশ্যক?
৩. যদি আমার মতো ঘটনা কারওর সঙ্গে ঘটে অথবা যদি কোনও দুর্ঘটনাবশত কারও দুটি হাতই খোয়া যায়, তা হলে এই বায়োমেট্রিক আপডেট কী ভাবে হবে? তিনি কি আধার কার্ড পাবেনই না বা দুর্ঘটনার আগে পেয়ে থাকলেও পরবর্তীতে আপডেট করতে না পারলে কার্ড বাতিল হবে? নাকি শুধু মুখ ও চোখের স্ক্যান হবে? আর যদি সে দুটিও কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
৪. সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন: আধার কার্ড করতে হলে ‘বায়োমেট্রিক আপডেট’ কি কম্পালসরি?
সোনালী বাড়ৈ
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
টেনিদা ট্রেজারি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের শতবর্ষ (কলকাতার কড়চা, ১৯-৬)। তাঁর অমর সৃষ্টি টেনিদা নিঃশব্দে পেরিয়ে গেলেন সাত দশক। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয় টেনিদা-সিরিজের প্রথম গল্প ‘খট্টাঙ্গ ও পলান্ন’। এ-খবর বোধ হয় অনেকেরই অজানা। এই উপলক্ষে অন্তর্জালে সাজানো হয়েছে ‘টেনিদা ট্রেজারি’। ব্লগটি প্রধানত অলংকরণ আর্কাইভ। দুষ্প্রাপ্য বার্ষিকী ও পত্রিকায় লুকনো টেনি-কাহিনির প্রথম প্রকাশিত চিত্রগুচ্ছ এখানে কালানুক্রমিক ভাবে সংরক্ষিত। সঙ্গে তাঁর গ্রন্থের নানা প্রচ্ছদ এবং ছবি। প্রচারের অভাবে এই সচিত্র অনলাইন প্রদর্শনী হয়তো সবার নজরে আসেনি। ‘টেনিদা ট্রেজারি’ ব্লগ: https://tenida-treasury.blogspot.in/
সৌরভ দত্ত
কলকাতা-১৯
বন্ধ পার্ক
শকুন্তলা পার্কে জল প্রকল্পের কাজের জন্য বাচ্চাদের বিকালবেলার বিনোদন ও খেলার একমাত্র পার্কের জায়গাটি এখন পুরোপুরি বন্ধ। পার্কটি আবার কবে চালু হবে বা আদৌ চালু হবে কি না, কেউ বলতে পারছেন না। অনুরোধ, বাচ্চাদের খেলার জায়গাটি আবার যাতে তাড়াতাড়ি খুলে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিন।
অরুণাভ বাগ
বেহালা, শকুন্তলা পার্ক
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়