সম্পাদক সমীপেষু

বিশুদ্ধ জলের অভাবেই বহু মানুষ পেটের রোগে ভোগেন। সেই সঙ্গে রয়েছে আর্সেনিকের সমস্যা। আজকাল ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে পানীয় জলের ব্যবসা। জারের জল খাওয়া বহু মানুষের ফ্যাশন। পরিষ্কার জল হিসেবে এগুলি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০০:২৪
Share:

খরচ হোক জলের জন্য

Advertisement

সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে পরিষ্কার ও পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব পূরণে সরকার মন দিলে মানুষ উপকৃত হবেন। বিশুদ্ধ জলের অভাবেই বহু মানুষ পেটের রোগে ভোগেন। সেই সঙ্গে রয়েছে আর্সেনিকের সমস্যা। আজকাল ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে পানীয় জলের ব্যবসা। জারের জল খাওয়া বহু মানুষের ফ্যাশন। পরিষ্কার জল হিসেবে এগুলি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেক মানুষের কাছে যাতে পরিষ্কার ও পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছতে পারে, সেটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, মানুষের সুস্থ ও ভাল থাকার জন্য সেটা জরুরি।

সুভাষ ঘোষ হাজরা

Advertisement

পাঁচথুপী, মুর্শিদাবাদ

ভাষার সংঘাত

আজকের পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের ভাষা সমস্যা নিয়ে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জটিলতা ভাবিয়ে তুলল (‘ভাষা চাপিয়ে দেওয়া যায় না’, ২১-৭)। কারণ, ভাষার সঙ্গে ভাষার সংঘাত এখন যথেচ্ছ সচল। নীরবে, সরবেও। এক-একটি বড় ভাষা একদা সামাজিক, ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি কারণে ছড়ি ঘোরানোর (মানে সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের) সুযোগ পেয়েছে। তাই তাদের কর্তৃত্ব বজায় থাকারই কথা। কারণ, ওই ভাষার অনেক নায়কই তো গণতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্রে স্থান পায়।

সম্প্রতি হিন্দিকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ বলে সরকারের জনৈক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। ফলে প্রায় ৭০০-র মতো ভারতীয় ভাষা-উপভাষার সঙ্গে হিন্দির নীরব ও সরব বিরোধ তৈরির প্রেক্ষাপট আরও এক বার প্রকট হল। তা নিয়ে যথেষ্ট শোরগোলও হল বেঙ্গালুরু শহরে, এমনকী কিছু কন্নড়-ভাষী এলাকাতেও। বোঝা গেল সরকারের কোলের ভাষা হিন্দি, তা হলে বাকিগুলো কি পিঠের?

অবশ্য ভারতীয় সংবিধান রাজ্যভিত্তিক কিছু ভাষাকে স্বীকার করেছে বা করছে। তবে এমন ভাষাও অষ্টম তফসিল স্বীকার করেছে, যাদের কোনও রাজ্য নেই। সিন্ধি, সাঁওতালির মতো রাজ্যহীন ভাষাগুলি কি ভারতীয় প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট মূল্য পাচ্ছে? বোধ হয় না। কারণ, এদের নিজস্ব ঘর নেই। পরের ঘরে গুরুত্ব সম্ভব কি? সংবিধান লক্ষ করলে দেখা যায়, অনেক ভাষা নিয়ে এ রকম অসংগঠিত অবস্থা এখনও ভারতে অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। বাংলা ভাষার ঘর পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার মতো এক-আধটি থাকলেও অন্যের ঘরে খবরদারি করতে গিয়ে এখন এর দশায় প্রায় মশা বসার উপক্রম। কারণ, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের এই ভাষার বানান, পরিভাষা ইত্যাদির সঙ্গে ত্রিপুরা, বরাক ভ্যালি, বাংলাদেশের বানান, পরিভাষা ইত্যাদির কোনও মিল প্রায় নেই-ই। তা ছাড়া প্রতিবেশী রাজ্যের ভাষা ওড়িয়া তিন বছর আগে ক্লাসিক ভাষার স্বীকৃতি পেল। অথচ রবীন্দ্রনাথের বাংলা, আন্তর্জাতিক ভাষা বাংলা, সিয়েরা লিওন-এর ‘অফিশিয়াল ভাষা’ বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বা আধুনিক আন্তর্জাতিক গুরুত্ব দেখিয়ে একটা হিল্লে করবার মতো উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি আজও নিতে পারে না!

মনে হয়, অন্যের ঘাড়ে ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার আগে এলাকার ভাষাগত সংখ্যাগুরুদের মত নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে এলাকায় এলাকায় গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। নতুবা চেপে যাওয়া বা চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অশান্তি স্বাভাবিক, যা পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে সংঘটিত হচ্ছে।

ভারতের ভাষা নিয়ে বিরোধ ও রাজনীতি (এমনকী সংবিধানে ভারতীয় ভাষাগুলির হাফ-হার্টেড সমাধান) বহু কাল পুরনো। তা নিয়ে শান্তিপূর্ণ মীমাংসা সম্ভব কি না জানি না, যেহেতু অসংখ্য ভাষার দেশ এই ভারত, এক ভাষীর উপর আর এক ভাষা চাপিয়ে দিলে তা রাজনীতির অংশ হয়ে উঠবেই! তা নিয়ে প্রশস্ত, উদার, জনমুখী ভাবনা গৃহীত না হলে সমস্যা কিন্তু বাড়বে বই কমবে বলে মনে হয় না।

শ্যামলচন্দ্র দাস

তারাবাগ, বর্ধমান

বড়-র পৌষমাস!

স্বাতী ভট্টাচার্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে ব্যাংকের, রাজকোষের বিপুল ক্ষতি করে কৃষিঋণ ছাড় সামান্য সাময়িক স্বস্তি দিলেও আখেরে চাষিদেরই ক্ষতি, কেন না এর সুফল বড় চাষিরাই পকেটে পোরে। ছোট চাষিরা মাত্র পাঁচ শতাংশ পায়। (‘চাষির দাবি বনাম তার স্বার্থ’, ১৩-৬)। পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্টের কল্যাণে এক জনও কি বড় চাষি আছেন? লেখক তামিলনাড়ুর উদাহরণ দিয়েছেন, চার লক্ষ চাষির বকেয়া মকুব হয়েছে দু’হাজার কোটি অর্থাৎ প্রত্যেকের গড়পড়তা পঞ্চাশ হাজার টাকা। এটা কি খুব বেশি, যখন এয়ার ইন্ডিয়াকে ৫০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়? আর যদি ধরেও নিই যে, ধনী চাষিরাই বেশি উপকৃত, তা হলে যখন ডিএ ঘোষণা হয়, তখন তো উচ্চ বেতনভোগীরাও তার সুবিধা পায়। সে জন্য ডিএ বন্ধ থাকে নাকি?

লেখক দেখিয়েছেন, বর্তমানে সত্তর হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। ওই টাকা সত্যিই চাষিরা পায় তো? যদি ধরে নিই পায়, তা হলেও মাথাপিছু টাকা খুব বেশি কি? ভারতের জনসংখ্যার অর্ধেক কৃষিনির্ভর ধরলে ৬০ কোটির প্রত্যেকের ভাগে পড়বে মাথাপিছু ১১৬৬ টাকা।

ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রশ্নে লেখক একই যুক্তি দিয়েছেন, এতে লাভ বড় চাষির। গত বছর সরকার কুইন্টালে ৬০ টাকা সংগ্রহ মূল্য বা়ড়িয়েছিল। ওই বছরই সপ্তম বেতন কমিশনে ন্যূনতম বেতন সাত হাজার থেকে আঠেরো হাজার করা হয়েছে। যত আপত্তি চাষির ঘাম-রক্ত ঝরানো ফসলের মূ্ল্য দিতে হলেই?

মোহন কর

দেবপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

প্রতিবেদকের উত্তর: চাষিরা সরকারি সহায়তার যোগ্য নয়, এমন একটি বক্তব্যকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়েছেন পত্রলেখক। প্রতিবেদনটির কিন্তু প্রশ্ন ছিল, ঋণ মকুব বা সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকার টাকা দিলে কি চাষির, বিশেষত দরিদ্র চাষির সংকট মিটবে? তার উত্তর যদি হয় ‘না’ তা হলে তা অপচয়। অপচয় অসঙ্গত। চাষির জন্য অপচয় হলে তা অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করব কেন?

পত্রলেখক নিজেই বলছেন, ভর্তুকির টাকা চাষি পায় না। যে ভাবে খরচ করলে টাকাটা বাস্তবিক চাষিকে নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি দেবে, সেই উপায়গুলি চিহ্নিত করে তার জন্য সরকারকে খরচ করতে হবে, এই ছিল প্রতিবেদকের বক্তব্য।

অর্থনীতির দৃষ্টিতে সরকারি কর্মীদের ডিএ, কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে দেওয়া ভর্তুকির অংক নির্ণয়ের সঙ্গে চাষে ভর্তুকি বা সহায়ক মূল্যের নির্ধারণের তুলনা চলে না। তবে সামাজিক ন্যায়ের দৃষ্টিতে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করা যায়, শহুরে চাকরিজীবীর তুলনায় গ্রামের কৃষককে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কি না। তবে সেই একই দৃষ্টি থেকে ভাবতে হবে, বড় চাষির তুলনায় ছোট চাষি/ঠিকা চাষিকে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কি না। ‘বড় চাষি’ পশ্চিমবঙ্গে নেই। কিন্তু এখানেও তুলনায় অবস্থাপন্ন চাষিরা ঠিকা চাষি এবং প্রান্তিক চাষিদের উত্তমর্ণ হয়ে বসেছেন। যে নীতি বড় চাষিকে সুরক্ষা দেয়, তা ছোট চাষিকে সুরক্ষা না-ও দিতে পারে, এমনকী আরও বিপন্ন করতে পারে। সরকারি ঋণ, বিমা, ভর্তুকি ও সহায়ক মূল্যের উপর প্রধানত ধনী চাষিই কব্জা করেছে। দরিদ্র চাষির প্রতি সহানুভূতি থেকে ভ্রান্ত নীতি তৈরি করে ধনীদের আরও সুবিধে করে দিলে অন্যায় হবে।

ওঝা, জানগুরু

ওঝা, গুনিন, তান্ত্রিক, জানগুরুরা নিষিদ্ধ ঘোষিত হোক। কারণ, এঁদের হাতে মানুষের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে। বন্ধ হোক মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জ্যোতিষীদের ব্যবসা। সভা-সমিতি বা কাগজে লেখালিখি করলেই হবে না। ঘরে ঘরে সচেতনতা বাড়াবার প্রয়াস চালাতে হবে সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। তার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াতেও এই সম্বন্ধীয় বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অভুক্ত মানুষের সামনে অখাদ্য দিলেও সে খাবে।

শম্পা মান্না

কলকাতা-৩১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন