বিন্দুতে সিন্ধু
প্রেমিকাকে নিয়ে বাইকে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন বা স্ত্রীকে নিয়ে। দিব্যি খোশমেজাজে গল্প করতে করতে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গোছের স্টাইলে। হঠাৎ প্রেমিক বা স্বামী বাইক থামিয়ে দিল একটু ফাঁকা জায়গা দেখে— ‘এই প্লিজ একটু দাঁড়াও না, আসছি’ বলে কয়েক কদম দূরে গিয়ে প্যান্টের চেন খুলে... আহ্! ভারমুক্ত হয়ে যেন কিছুই হয়নি এমন মুখ করে প্রিয়তমাকে বাইকে বসিয়ে আবার ধাঁ।
এমন ঘটনা পরিচিত। কিন্তু এই ছোট্ট সময়টুকু পুরুষটির প্রিয়তমার কী ভাবে কাটল, তার খোঁজ আমরা কেউ রাখি না। হতেও তো পারে, তারও খুব হালকা হওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু লজ্জায় সে বলতে পারেনি। হয়তো এই ভয়েই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রচণ্ড তেষ্টা পাওয়া সত্ত্বেও স্রেফ গলাটুকু ভিজিয়েই সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। সঙ্গীর হালকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারও যে হালকা হওয়ার বাসনা কত কষ্ট করে চাপা দিয়ে রেখেছে, কে বলতে পারে! চতুর্দিকে ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযান। কিন্তু একটু চোখ খোলা রাখলেই চতুর্দিকে এই দৃশ্য আমাদের চোখে পড়বে। এমনকী ‘পে-ইউরিন্যাল’ থাকা সত্ত্বেও সামান্য ২ টাকার জন্য সম্মান বিসর্জন দিয়ে রাস্তার পাশেই... এত ফাঁকা জায়গা থাকতে আবার দু’টাকা খরচ! পুরুষরা হয়তো ভাবি, আমি তো একাই করছি, তাতে আর কতটুকু পরিবেশ দূষণ হবে? কিন্তু আমাদের পুরুষদের মানসিকতা না বদলালে বিন্দু থেকেই সিন্ধু হবে। হয়ে চলেছে।
নিরঞ্জন পাল কালেক্টরি মোড়, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
মসিহাই বটে
আওয়াজটা উঠেছিল ইউপিএ আমলেই। বিজেপি সরকার সেটাই ঘোষণা করে দিল। রান্নার গ্যাসের সামান্য ভরতুকিটুকুও বন্ধ করে দিল বিজেপি সরকার। এটাই যদি প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ হয়, তবে গ্যাস নিয়ে এত নাটক করার দরকার কী ছিল? সরকারে বসেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রান্নার গ্যাসের ভরতুকি সরাসরি গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। তখনই তো তিনি জানতেন যে, সরকার শেষ পর্যন্ত ভরতুকি বন্ধ করে দেবে। তা হলে এই তিনটে বছর ধরে মানুষকে এত হয়রানির মধ্যে ফেললেন কেন?
শুধু তো গ্যাসের দাম বাড়ানো নয়, সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের পরিমাণ কমিয়ে দিল বিজেপি সরকার। বহু সাধারণ মানুষ তো বটেই, তার সঙ্গে যে কয়েক কোটি প্রবীণ মানুষ জীবনের সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে কোনও ক্রমে জীবনধারণ করে চলছিলেন, তাঁদের সকলের উপরই এক মারাত্মক আক্রমণ হিসাবে নেমে এল সরকারের এই সিদ্ধান্ত।
সরকারে বসার আগে দেশের মানুষকে কত প্রতিশ্রুতিই না দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতারা! বাক্পটু প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় সে দিন অনেকে মোহিত হয়েছিলেন। বিশ্বাস করেছিলেন তাঁকে। ভেবেছিলেন, নিশ্চয়ই গরিবের কোনও মসিহা নেমে এসেছেন এই দারিদ্রক্লিষ্ট ধরাধামে। তিন বছরেই সেই মোহ ভেঙে ছত্রখান। মানুষ দেখছে, কালো টাকা উদ্ধার হল না। এমনকী সরকার কালো টাকার কারবারিদের নামটুকুও প্রকাশ করতে রাজি হল না। নোট বাতিল করে সরকার ঘোষণা করল, এ বার আর কোনও কালো টাকার মালিক ছাড় পাবে না। সমস্ত কালো টাকা উদ্ধার করে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগানো হবে। এ বারও কালো টাকার মালিকরা বহাল তবিয়তে থাকল। সাধারণ মানুষ ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাজেহাল হল, শতাধিক মানুষের প্রাণ গেল। ছোট সংস্থা, ছোট ব্যবসায়ী, অসংগঠিত শ্রমজীবীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল। নোট বাতিলের ফলে ব্যাংকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্ছিত হল, তা ব্যাংকগুলিতে জমে গেল। কারণ, ব্যাংক থেকে ঋণের চাহিদা কম। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অভাবে বাজারে শিল্প-পণ্যের চাহিদা একেবারে তলানিতে। ফলে নতুন কলকারখানা হচ্ছে না, পুরনোগুলো বন্ধ হচ্ছে, ছাঁটাই হচ্ছে। এই অবস্থায় ঋণের সুদ আরও কমিয়ে পুঁজিপতিদের সুবিধা দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকার বলির পাঁঠা করল গরিব-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদেরই।
স্বাধীনতার সাত দশকে কেন্দ্রে-রাজ্যে একের পর এক সরকার পালটেছে। জনগণের উপর শোষণ-লুণ্ঠনের পরিবর্তন হয়নি। ‘সংস্কার’, ‘উদার অর্থনীতি’ প্রভৃতি গালভরা নামের আড়ালে সব সরকারেরই লক্ষ্য হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই বোঝা চাপানো। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস বিজেপিতে কোনও ফারাক নেই। না হলে সাধারণ মানুষের নিত্যব্যবহার্য রান্নার গ্যাসে এতটুকু ভরতুকি দিতে চায় না যে সরকারগুলি, তারাই পুঁজিপতিদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়, ভরতুকি দিয়ে চলেছে। বড় বড় পুঁজিপতিদের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকা। পুঁজিপতিরা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলি ধুঁকছে। সরকার তাঁদের টিকিটিও ছোঁয় না। জনগণের সম্পত্তি তেল-গ্যাস আত্মসাতের অভিযোগ বারে বারে উঠেছে অতিকায় কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে। সব সরকারই বোবা-কালা সেজে রয়েছে। আর জনসাধারণ রান্নার গ্যাসে সামান্য ভরতুকি চাইলে তা হয়ে যাচ্ছে ‘অন্যায় আবদার’, তাদের বলা হচ্ছে ‘সুবিধাভোগী’। পেট্রোলিয়ম ক্ষেত্র থেকে সরকার কর বাবদ এক বছরে (২০১৪-১৫) আদায় করেছে ৯৯,১৮৪ কোটি টাকা। এ তো জনগণের থেকেই আদায় করা। তা হলে তার ছিটেফোঁটা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে গায়ে এত জ্বালা কেন?
সমর মিত্র কলকাতা-১৩
উৎপাত
সকাল সাতটা কুড়ির মেট্রো ধরার জন্য প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। মাইকে ঘোষণা হল। কী ঘোষণা হল, বুঝলাম না। শুধু বুঝলাম ট্রেন দেরিতে আসছে। ঘোষণাটা ঠিক শুনতে না পাওয়ার কারণ, প্ল্যাটফর্মে হঠাৎ টিভি চালু হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে তারস্বরে হিন্দি গান। সমস্যাটা নতুন নয়। মাঝে মাঝেই হয়। তবে প্রায় প্রতি দিনই সাতটা থেকে সাতটা কুড়ির মধ্যে প্ল্যাটফর্মে নতুন হিন্দি ছবির গান বাজে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের শহরে কি হিন্দির বদলে অন্য কিছু বাজানো যেত না সাতসকালের গান হিসেবে? ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যাওয়ার জন্য ওই সময় প্ল্যাটফর্মে জড়ো হয়। ওরা কী শিখছে?
অঞ্জয় মাঝি শিক্ষক, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
দুটি ভুল
‘এলেম মেঘের দেশে’ শীর্ষক (পত্রিকা, ৮-৭) ভ্রমণকাহিনিতে দুটি তথ্যগত ত্রুটি নজরে এল। প্রথমটি হল, শিলঙে ‘পোলো ক্লাব’ বলে কোনও ক্লাব নেই। যা আছে, তা হল ‘গল্ফ ক্লাব’। আর দ্বিতীয়টি, লেখা হয়েছে ‘মেঘালয়ে কোনও রেলপথ নেই’। কিন্তু আসল ঘটনা হল, বেশ ক’বছর আগেই মেঘালয় ভারতের রেল মানচিত্রতে ঢুকে পড়েছে। মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের মেন্দিপাথার অবধি এখন রেল যায়।
ননীগোপাল ঘোষ শিলং, পুলিশ বাজার, মেঘালয়
ঘনাদার ছবি
‘কল্পনা যেন বাঁধ না মানে’ লেখায় (পত্রিকা, ৮-৭) চিরঞ্জিত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’ চরিত্রটির প্রচলিত প্রতিকৃতিটি তাঁর পিতৃদেব প্রখ্যাত শিল্পী শৈল চক্রবর্তীর আঁকা।
যত দূর জানি, প্রচলিত এই প্রতিকৃতিটি ১৯৫৬ সালে প্রয়াত শিল্পী অজিত গুপ্ত মহাশয়ের আঁকা এবং লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র অনুমোদিত। তবে এ চরিত্রটি লেখকের মৃত্যুর আগে এবং পরে অনেক প্রখ্যাত শিল্পীরা রূপ দিয়েছেন— প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন বল, বলাই বন্ধু রায়, অহিভূষণ মালিক, নরেন্দ্র দত্ত, অলোক ধর, সুবোধ দাশগুপ্ত, সুধীর মৈত্র, সমীর সরকার এবং অবশ্যই শৈল চক্রবর্তী ও এ কালের শিল্পীরা।
আর একটি কথা। প্রতুলচন্দ্র লাহিড়ী নয়, প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী অর্থাৎ কাফি খাঁ। মনে হয় এটি মুদ্রণপ্রমাদ।
প্রণবেশ মাইতি কলকাতা-৪০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়