তিনটি নদী মিলে
ক’দিন আগে মেদিনীপুরের নদীগুলি দেখতে বেরিয়েছিলাম। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার রূপবতী নদীগুলি দেখতে গিয়ে মনে হল, দুই জেলার মূল নদী তিনটি নিয়ে একটি ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়া যেতেই পারে। নদীগুলি হল শিলাবতী, কংসাবতী এবং সুবর্ণরেখা। যে জায়গাগুলিতে নদীগুলি যাতায়াতযোগ্য, সেগুলি হল গড়বেতা (শিলাবতী), মেদিনীপুর, ধেড়ুয়া বা লালগড় (কংসাবতী) এবং গোপীবল্লভপুর (সুবর্ণরেখা)।
নদী ছাড়াও ওই স্থানগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারি বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলি ভেবে দেখতে পারে।
সুদর্শন নন্দী রাঙামাটি, মেদিনীপুর শহর
যাঁরা ভাল নেই
বিজয়া উপলক্ষে শুভেচ্ছা আদানপ্রদান এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারকোল নাড়ু, ঢিপ ঢিপ প্রণাম, কোলাকুলির ‘সংকীর্ণ’ গণ্ডি ছাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ঘাড়ে চেপে তা সর্বত্রগামী। ভলিউমও বেশ চড়া। ভাল থাকার আহ্বান রাস্তাঘাট, রেডিয়ো, মোবাইল ও হোর্ডিং-এ। পরিমাণটি এত বেশি যে, মাঝে মাঝে তা কৃত্রিম বলেও বোধহয়। কিছু না ভেবেচিন্তেই যেন আউড়ে যাচ্ছে।
তবুও শুভেচ্ছা আদানপ্রদানের উপকারিতা যথেষ্ট। এর থেকে কোনও সামাজিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। গোল বাধে তাঁদের নিয়ে, যাঁরা শত চেষ্টা করেও নিজেদের ভাল রাখতে পারেন না।
এক জন সাংবাদিক এক নামকরা আধ্যাত্মিক গুরুর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। হাসতে না পারার দায়ে তাঁকে উপস্থিত শিষ্যদের সামনে অপদস্থ হতে হয়। (Source : Mint Lounge dt 07/10/17 – ‘Why happiness is the wrong goal’ by Manu Joseph) আসলে ‘তোমাকে হাসি মুখে দেখতে চাই’য়ের ব্যাপারটাকে আমরা খুব উঁচু জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছি। সবার ভাল থাকাটা বাধ্যতামূলক করে ফেলেছি। ফলে, এই পরিবেশে নানা কারণে যাঁরা অবসাদের শিকার, তাঁরা মন খুলতে ভয় পাচ্ছেন। না ভাল থাকাটাকে নিজেদের চারিত্রিক ত্রুটি বলে ভাবছেন অনেকে। ভাল থাকার আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে আরও তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আত্মহননের পথও নিচ্ছেন কেউ কেউ।
অবসাদ ইচ্ছাকৃত নয়। তাই অবসাদে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের লজ্জার কিছু নেই। আনন্দ, উৎসবের মধ্যেও কিছু মানুষ যে ভাল থাকবেন না, সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তাঁদের কথা শুনতে হবে। অন্যথায়, অবসাদ আরও বড় আকার নেবে।
শেখর বসুমল্লিক কলকাতা-৪২
বেঞ্চ দান
পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে শহর-গ্রামের ধনী-গরিব নির্বিশেষে বহু ছেলেমেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। যাঁদের আয়ের পরিমাণটা একটু কম, সেই মানুষগুলির ছোট ছেলেমেয়েরা এই পড়াশোনার স্বার্থে ঠিক ভাবে দুপুরে একটু খেতে পারছে, শীত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারছে জামা জুতো পরে— এটাও কম কথা নয়।
এ বার সেই প্রাথমিক স্কুলগুলোর জন্য একটা বিশেষ উদ্যোগ নিতে চলেছে সরকার, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে। প্রত্যেক প্রাথমিক স্কুলকে এ বার থেকে বেঞ্চ প্রদান করা হবে। সাধু উদ্যোগ। এতে শিক্ষককুল অনেকটাই সন্তুষ্ট হতে পারবেন বলে মনে হয়। কারণ, বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সে রকম ফান্ড না থাকায় অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় স্কুলের বেঞ্চ তৈরির ক্ষেত্রে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে টাকাটা আসে, তাতে খুব কষ্ট করে বিভিন্ন জিনিস রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। যে এসিআর-এর টাকা আসে, তা দিয়ে স্কুল বিল্ডিংয়ের কিছু অন্যান্য কাজ করতে হয়, আর যে টিএলএম-এর টাকা আসে, তা থেকে টিচিং-লার্নিং মেটেরিয়ালস কিনতে হয় শিক্ষকদের। এমতাবস্থায় স্কুলে পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকলে শিক্ষকদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। তাই বেঞ্চ দান একটি বিশেষ উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ।
শুভজিৎ বসু নকশালবাড়ি, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং
পড়ার ভার
হাওড়া স্টেশনে এসে কোনও নবাগত ধর্মতলা যাওয়ার পাঁচটি পৃথক পথের হদিশ শুনে সহজে গন্তব্যে পৌঁছবেন কি? আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় গণিতের ফোর ফান্ডামেন্টাল অপারেশন শিখতে অনেকগুলি পদ্ধতির অনুশীলনের শিক্ষাদানও এই একই বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। প্রাথমিকের ছাত্রদের গণিতজ্ঞানের মূল্যায়নের পরিসংখ্যানে যার প্রমাণ মেলে।
প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষাদান শ্রেণিতে শিক্ষকের একটি কার্যকর এবং অবশ্যপালনীয় ভূমিকা। সে জন্য পাঠ্যপুস্তককে স্বাস্থ্যবান করে শিশুর স্কন্ধে ভারবৃদ্ধি কি সমীচীন? তার ওপর বিষয়গুলি সম্যক আয়ত্ত করাতে নানা প্রকাশনীর সহায়িকার রমরমা চলছে শিক্ষাবিভাগের জ্ঞাতসারেই। শিক্ষক মহাশয়রাও ওই সহায়িকা থেকেই প্রশ্নপত্র রচনা করছেন। গৃহশিক্ষকতাও চলছে চুটিয়ে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২৮টি গদ্য-পদ্য-গানের সমাহারে অনুশীলনী-সহ বাংলা পাঠ্যক্রম কি কিছুটা হ্রাস করা যায় না? বাংলা ব্যাকরণ তো ভাষাতত্ত্বের আলোচনা! শুধুমাত্র উপসর্গ-অনুসর্গ আয়ত্ত করতে শিশুরা ঘর্মাক্ত হয়ে পড়ে। ওই শ্রেণিতে পাঠ্যপুস্তকগুলির পৃষ্ঠাসংখ্যা মোট ১২৭৫। সকল শ্রেণিরই সমদশা। এ ছাড়া অনেক অত্যধিক কর্তব্যনিষ্ঠ শিক্ষকের অনুশাসনে সব ক’টি পুস্তক-সহ প্রচুর খাতাপত্রও শিশুদের বহন করতে হয়। ফলে জলের বোতল-সহ স্কুলব্যাগের ওজন ৭-৮ কিলোর কম নয়। এই দানবীয় ব্যবস্থা থেকে শিশুদের শরীর ও মন রক্ষার দায়িত্ব কার?
অনিল কিশোর ভট্টাচার্য চুঁচুড়া, হুগলি
জলে বিসর্জন
চিরঞ্জীবের (‘বিসর্জন তো হয়...’, সম্পাদক সমীপেষু, ৬-১০) চিঠিটির প্রসঙ্গে বিসর্জনের ব্যাপারে নানা মুনির নানা মতের মধ্যে একটি মত সম্পর্কে কিছু জানাতে চাই। নবাবি আমলে সম্পন্ন লোকেরা বৈভব দেখাতে খুব ভয় পেতেন। বেশি বৈভব দেখালেই প্রচুর কর ধার্য হয়ে যেত। কেউ কোনও ব্যাপারে জাঁকজমক দেখালেই ধরে নেওয়া হত যে, তাঁর বিশাল ধনসম্পদ আছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ধার্য করের মাত্রাও প্রচুর বেড়ে যেত।
বিশাল নজরকাড়া প্রতিমা তৈরি এবং পাঁচ দিন ধরে চলা দুর্গাপুজো একক ভাবে করার ক্ষমতা তখনও বৈভবশালীদেরই ছিল, এখনও তা-ই আছে। কিন্তু তখন এই পুজো নবাবি শাসনযন্ত্রের নজরে পড়লে প্রচুর কর দিতে হত বৈভব প্রদর্শিত হয়ে যাওয়ার জন্য। শাসকদের নজরের আড়ালে পুজোর পরে প্রতিমা জলে না ভাসিয়ে, এখনকার শীতলা প্রতিমার মতো হাটে-মাঠে-ঘাটে রেখে দিলে, পরে কোনও না কোনও সময় পুজোর কথা বেরিয়ে আসতই, এবং তার জন্য প্রচুর খেসারত দিতে হত বর্ধিত কর হিসাবে। সুতরাং, প্রতিমা জলে বিসর্জন দেওয়াই অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি ছিল। ফলে কালে কালে জলে বিসর্জনই ধর্মীয় রীতিতে পরিণত হয়।
অতনু ভট্টাচার্য কলকাতা-২
এঁরা কী করবেন
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, যে দু’বছরের ডিএলএড-এর প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট থাকতেই হবে। যারা ২০১৪-১৬ সেশনের ডিএলএড ছাত্র ছিলেন, তাঁদের ফলাফল পিছিয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সার্টিফিকেট পাননি। জানা গেছে যে, সার্টিফিকেট পেতে এক বছর সময় লাগবে। ২০১৪-১৬ সেশনে পাশ করেও সার্টিফিকেট পাননি যাঁরা, তাঁরা কি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে পারবেন?
আনসার আলাম গোপীগঞ্জ, পশ্চিম মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়