ফুটপাত আছে কি
গত দুর্গাপুজোর কয়েক দিন আগে কলকাতা গিয়েছিলাম। রাজ্য পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের সামনে দিয়ে হেঁটে আসার সময় দেখলাম, মূল ফটকের সামনে পথচারীদের উদ্দেশ্যে একটা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন না। দয়া করে ফুটপাত ব্যবহার করুন। ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলা করুন।
এই রকম একটা বিজ্ঞপ্তি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। আমার জিজ্ঞাসা, সত্যিই কি শহর কলকাতায় ফুটপাত বলে কিছু আছে? যেখানেই যান না কেন, বেহালা থেকে বরাহনগর কিংবা হাওড়া থেকে শিয়ালদহ— সব জায়গায় একই অবস্থা। বিশেষ করে, লালবাজারের উলটো দিকে যে ফুটপাতটা রয়েছে, সেখানে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত সমস্ত রকমের খাবারের দোকান রমরম করে চলছে, ফুটপাতে বসা টাইপরাইটারে সব সময় চিঠিপত্র ছাপা হচ্ছে। তার একটু পাশেই একটা বিরাট চা কোম্পানির দোকান রয়েছে, সেখানে সকাল ৮টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ লাইন দিয়ে চা-পাতা কিনছেন।
এই সমস্ত ব্যাপার কি আপনাদের চোখে পড়েনি? জনগণের কর দেওয়া পয়সা খরচ করে এমন হেঁয়ালি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার তো মনে হয় না। আগে বরং ফুটপাতটাকে হকারমুক্ত করে তার পর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ওই বিজ্ঞপ্তি দিন।
স্বপনকুমার আঢ্য
ভাণ্ডারহাটি, হুগলি
‘ষষ্ঠী’ থেকে নয়
জহর সরকারের (‘ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বাইরে’, ২৬-১০) লেখা প্রসঙ্গে বলতে চাই, ছট পুজোর ‘সংস্কৃতায়নের কিছু চেষ্টা হচ্ছে’ নয়, প্রায় হয়েই গেছে। পৃথিবীর আদি দেবতা সূর্যই এর মূল। যা কিছু সব সূর্যকে উদ্দেশ্য করে।
বর্ধমান শহরে বাঁকা নালার উপর নব ব্রিজের ধারে পাকাপোক্ত মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে এবং মন্দিরে সাতটি অশ্বে টানা রথে সূর্যদেবের মূর্তি ব্রাহ্মণ দ্বারা পূজিত হন। ছটের সপ্তমীতে সদরঘাটে দামোদর নদের বালির উপর লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটে। সেখানে অস্থায়ী ভাবে ওই একই মূর্তি দেখা যায়। হুগলি জেলার চাঁপদানিতে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী মূর্তি এই সময় পূজা পান। তবে ‘ষষ্ঠী’ থেকে ছট নয়। কারও মতে, ষষ্ঠী সূর্যের বোন। লোকায়ত ভাবনায় সন্তান কামনা, শিশুর জন্ম ও পালনের দেবতারূপে তিনি বাংলায় পূজা পান। কখনও তার নাম নীল ষষ্ঠী, কখনও ঘেঁটো ষষ্ঠী, গোয়ালা ষষ্ঠী, গাড়সে ষষ্ঠী।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ধর্মমঙ্গল কাব্যের ধর্মঠাকুরের সঙ্গে ছটের একটা যোগ দেখা যায়। আচার্য সুকুমার সেন লিখেছেন, ‘বিহারে ধর্মপূজার চিহ্নাবশেষ ‘ছটপরব’। ছটে কৃষিজ ফসলকে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। এখানে আবার মিশরীয় দেবতা ‘রা’-এর সঙ্গে মিল আছে। মানত করে, কামনা পূরণে নারীরা যে দণ্ডি খাটে, তার সঙ্গেও ধর্মঠাকুর আরাধনার মিল আছে।
ধর্মপূজার বিধানে বলা হয়েছে, ‘শূন্য মার্গে স্থিতং নিত্যং শূন্যদেব দিবাকরম্।’ তিনি শূন্যদেবতা। তাঁর আশীর্বাদে কুষ্ঠরোগ সারে, সে ক্ষেত্রে রোগীকে সূর্যের আলোতে থাকতে হয়। ধর্মমঙ্গল কাব্যে রঞ্জাবতী পুত্রকামনায় সূর্যকে অর্ঘ্য দান (সূর্য-অর্ঘ্য দেন রঞ্জাবতী ব্রতদাসী) করেন। তাই অভিমুখের বদল ঘটলেও ‘ছট’ আদি থেকে লোকায়ত— একটা পরম্পরা রক্ষা করে চলেছে।
রমজান আলি
বর্ধমান
আর শব্দতাণ্ডব?
জহর সরকারের ছট সম্পর্কিত রচনাটি পড়ে ঋদ্ধ হলাম। কিন্তু তাঁর পরিবেশ-বান্ধব ছট প্রশস্তির সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। উপকরণ যতই পচনশীল হোক, জল ও বায়ু দূষণে তাদের সুবিদিত ভূমিকার বিরুদ্ধেই তো পরিবেশবিদরা সরব। তা ছাড়া, সুন্দর উৎসবকে কদাচারে পরিণত করে নানাবিধ গানবাজনার চিৎকার ক্রমশ বাড়ছে। ছটের সঙ্গে পটকাসহ শব্দবাজির রমরমা
সম্পর্কে লেখক কিছু লেখেননি। কোনও কোনও অঞ্চলে শব্দতাণ্ডবে ছট তো অন্যান্য ‘বাজি উৎসব’কে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে।
এইচ ভট্টাচার্য
ডানকুনি, হুগলি
বিশ্ববিদ্যালয়হীন
ইতিহাসপ্রসিদ্ধ জেলা, এক সময়ের বাংলা-বিহার-ওডিশার রাজধানী মুর্শিদাবাদ এখনও বিশ্ববিদ্যালয়হীন জেলা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মানচিত্রে অতি ধূসর রূপে দৃষ্ট হচ্ছে। ইতিহাসের ঐতিহ্য রয়েছে, আছে দেশভাগ পরবর্তী আর্থ-সামাজিক অবস্থায় পিছিয়ে থাকার কাহিনিও। দেশ-কালের সঙ্গে এই জেলাও গুটি গুটি এগিয়ে চলেছে। কিন্তু, শিক্ষার গরিমা আনয়নে রাজ্যের অন্যতম জনবহুল, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনও বিকল্প হয় না।
জেলার একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত আহিরনের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেউ কেউ ‘মুর্শিদাবাদের বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে বুঝিয়ে থাকেন! অথচ, এটি একটি ক্যাম্পাসমাত্র। নামমাত্র কয়েকটি কোর্সে মুষ্টিমেয় কিছু আসনে অতি স্বল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারে। তাও বেশির ভাগ আসনই জেলার বাইরের শিক্ষার্থীরাই পূরণ করে ফেলেন। এই ক্যাম্পাসকে একটি ‘শিক্ষাকেন্দ্র’ বলা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নয়।
জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে, বিশেষ করে, মেয়েদের উচ্চশিক্ষার হার খুবই উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। ইতিমধ্যে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী প্রকল্প, বৃত্তিপ্রদান প্রভৃতি সরকারি কর্মসূচির কারণে মুর্শিদাবাদে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরা বর্তমানে কলেজ শিক্ষার আওতায়। কলেজ পাশ করার পর এদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অপরিহার্য। আর, গবেষণায় উৎসাহী মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কাছেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আলাদা তাৎপর্য বহন করে।
এই জেলার সদর শহর বহরমপুরেই রয়েছে প্রাচীন কৃষ্ণনাথ কলেজ, যা ‘বাংলার অক্সফোর্ড’ হিসেবে পরিচিত। কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাবির চাঁদ
রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
পথদিশা
সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতর ‘পথদিশা’ নামে একটি অ্যাপ প্রকাশ করেছে, যা পথচারীকে সরকারি বাসের অবস্থান জানিয়ে দেবে বা গন্তব্যে পৌঁছতে কোন কোন রুট আছে তাও জানাবে। এর জন্য দরকার সকল সরকারি বাসে জিপিএস চালু থাকা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সমস্ত বাসে জিপিএস-এর সুযোগ নেই বা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করা, যার ফলে পথচারীরা ঠিক ভাবে অ্যাপটির সুবিধা নিতে পারছে না। অবিলম্বে সব ক’টি বাসে জিপিএস-এর ব্যবস্থা করা হোক। সঙ্গে এই অ্যাপে সকল সরকারি বাসের সময়সূচিও জানানো হোক। এই পরিষেবা বেসরকারি বাসেও চালু করার প্রস্তাব রাখছি।
অনির্বাণ সেনগুপ্ত
কলকাতা-৩৪
কিছু সমস্যা
আমাদের এলাকাটি হাওড়া জেলার বালি জগাছা ব্লক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল নতুন পুরসভা গঠন করা হবে। কিন্তু এখনও হয়নি। পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। জলের লাইন বসানোর কাজ চলছে, জল কবে পাওয়া যাবে জানি না। ড্রেন আছে, কিন্তু পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেই। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে একমাত্র বেলুড় শ্রমজীবী ও উত্তরপাড়া জেনারেল হাসপাতালই ভরসা।
বালি স্টেশন থেকে বালিহল্ট স্টেশন পর্যন্ত রাস্তাতে সারা ক্ষণ ভিড় লেগেই আছে। এর দু’ধারে দোকান। এই রাস্তা দিয়েই টোটো, গাড়ি, রিকশা চলাচল করে। অবিলম্বে রাস্তাটি চওড়া করা প্রয়োজন।
অভিজিৎ দাস
বালি ঘোষপাড়া, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়