সম্পাদক সমীপেষু

সেই সময় ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকর্তাকে একটি চিঠি লেখা হয়। সেখানে স্বাক্ষর ছিল পেলে, মাত্যাঁ, দেলাঁদ নামধারী তিন জনের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

ইতিহাসের চন্দননগর

Advertisement

২১ নভেম্বর, ১৬৯৬। ফরাসি নথিতে প্রথম চন্দননগরের নাম নজরে আসে। সেই সময় ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকর্তাকে একটি চিঠি লেখা হয়। সেখানে স্বাক্ষর ছিল পেলে, মাত্যাঁ, দেলাঁদ নামধারী তিন জনের। ওই চিঠিতেই চন্দননগরের উল্লেখ আছে। সেই সময় ভারত মহাসাগরের বাণিজ্য পথ ধরে এসেছে ব্যান্ডেলে পর্তুগিজ, চুঁচুড়ায় ডাচ, শ্রীরামপুরে ড্যানিশ, চন্দননগরে ফরাসিরা। কলকাতার মতো (সুতানটি, গোবিন্দপুর, কলকাতা) চন্দননগরও জন্ম নিয়েছিল খলিসানি, বোড়োকিষেনপুর আর গোন্দলপাড়াকে বুকে ধরে। একমাত্র ২১ নভেম্বরের চিঠিটি ছাড়া ‘চন্দননগর’ নাম কোথা থেকে এল, ইতিহাস আজও সে বিষয়ে নীরব। প্রাচীন এই জনপদে গণভোট (১৯ জুন, ১৯৪৯) হয় ভারত স্বাধীন হওয়ার পর। চন্দননগরের ভারতভুক্তি ১৯৫২ সালের জুন মাসে, পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার তারিখ ২ অক্টোবর, ১৯৫৪। চন্দননগরের বুকে ব্রিটিশ-ফরাসি যুদ্ধ হয়েছে। চন্দননগর লুটের টাকায় পলাশির যুদ্ধ হয়েছে। মিনি ফরাসি বিপ্লবের স্মৃতি ধরে আজও রয়েছে চন্দননগরের গৌরহাটি, ফরাসি স্থাপত্য, স্বদেশি স্মৃতির কদর। বর্তমান প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক জনপদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানে না। জানে না, কেন এখনও প্রবেশদ্বারে লেখা লিবার্তে, ইগালিতে, ফ্রাতার্নিতে। পুদুচেরির মতন চন্দননগরের ভারতভুক্তি পালন করা যায় না? (ছবি: গিরিদূত আর্কাইভের সৌজন্যে)

কল্যাণ চক্রবর্তী সম্পাদক, চন্দননগর হেরিটেজ

Advertisement

সর্দার পটেল

জহর সরকারের ‘পটেল এবং অন্যান্যরা’ (৫-১১) প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু বলার তাগিদ অনুভব করছি। গুজরাতের বরদোলি কৃষক সত্যাগ্রহের সময় (১৯২৮) কৃষক রমণীরা বল্লভভাইকে ‘সর্দারজি’ নামে সম্বোধন করতেন, তার পর থেকেই তিনি সর্দার পটেল নামে পরিচিত হন। পটেল গাঁধী বা নেহরুর মতো চিন্তাবিদ ছিলেন না। পটেলের সঙ্গে এঁদের বহু বার মতবিরোধ ঘটেছে— গাঁধীজিকে পটেল ‘বদ্ধ উন্মাদ’, ‘খামখেয়ালি’ বলেও বর্ণনা করেছেন, যদিও আমৃত্যু তিনি ছিলেন গাঁধীভক্ত।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় যখন বহু রাজনৈতিক নেতা, নেত্রী ও কর্মী কারাবন্দি, তখন আন্দোলনকে সংগঠিত করা ও তার নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সর্দার পটেল (যদিও এই আন্দোলনের শুরুর দিকে আদর্শগত কারণে নেহরুর মধ্যে একটি ইতস্তত ভাব ছিল)। সর্দার পটেলের সততা ছিল প্রশ্নাতীত। ‘ভারতবর্ষ: স্বাধীনতার পরে ১৯৪৭-২০০০’ বইটিতে বিপানচন্দ্র, মৃদুলা ও আদিত্য মুখোপাধ্যায় লিখছেন, ‘বল্লভভাই যখন ধনীদের থেকে কংগ্রেসের জন্য টাকা আদায়ের অপ্রীতিকর দায়িত্বটি পালন করতেন, তখন তাঁর সম্বন্ধে কেউ একটা খারাপ কথা বলবার সুযোগ পেত না।’

ইংরেজরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে ভারতের মধ্যে ৫৬০টি স্বাধীন ছোটবড় রাজ্য ছিল। সেগুলিকে ভারতরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা খুব সহজ কাজ ছিল না। ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, পটেলের সবচেয়ে বড় অবদান ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করা। সর্দার পটেল অবশ্য সব সময়েই যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পেরেছিলেন, তা বলা যায় না। যদিও আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু এক সময়ে তিনি হিন্দুমহাসভাকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অশীন দাশগুপ্তের লেখায় জানা যায় যে গাঁধীজির মতো পটেলও চেয়েছিলেন স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে, যদিও নেহরু প্রমুখ নেতারা রাজি ছিলেন না।

শান্তভানু সেন শ্রীপল্লি, শান্তিনিকেতন

সুন্দর গ্রাম

পত্রলেখকের প্রশ্নটি অযৌক্তিক নয় (‘আর অন্যরা?’ সম্পাদক সমীপেষু, ১১-১১)। তবে এ কথাও বলব, কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যান্য শহর সাজালেও সমগ্র রাজ্যের রূপ বিকশিত হবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ শুধু শহর দিয়ে গড়া কোনও রাজ্য নয়। গ্রামের কথাও মনে রাখা দরকার। সুন্দর গ্রাম আর সুন্দর শহরই হল রাজ্যের সৌন্দর্যের মাপকাঠি।

গ্রামের মানুষের এমন কিছু চাহিদা আছে, যা পূরণ হওয়া খুবই দরকার। যেমন দেখা গেল সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় যুব ফুটবল দলের এক খেলোয়াড় মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঢুকছেন জুতো হাতে করে জলকাদা মাখা রাস্তার উপর দিয়ে! গ্রামের মানুষ সর্বত্র পাকা রাস্তা চান না। কিন্তু যাতে একটু আরামে যাতায়াত করা যায়, এমন রাস্তা তো দরকার। রাস্তাঘাটের যে উন্নতি হয়নি, এমন নয়। তবে এখনও এমন অনেক রাস্তা আছে যা চলাচলের অযোগ্য। এ ছাড়া এখনও এমন সব গ্রামও আছে, যেখানে গ্রামের মানুষকে খাল বা নদী পারাপারের জন্য বাঁশ বা কাঠের তৈরি নড়বড়ে সাঁকোর উপর নির্ভর করতে হয়। গ্রামীণ এলাকার মানুষের যাতায়াতের সমস্যা যদি না থাকে, তা হলে গ্রাম তো সুন্দর হবেই, সঙ্গে সেখানকার মানুষের জীবনও সুন্দর হয়ে উঠবে

সত্যকিংকর প্রতিহার যমুনা, দেশড়া, বাঁকুড়া

খাঁদারানি লেক

ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতে অবস্থিত খাঁদারানি লেক সম্পর্কে কয়েকটি কথা। গত দু’বছরে অন্তত চার বার বেলপাহাড়ি ও খাঁদারানি লেক ভ্রমণ করেছি। খাঁদারানিতে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপার্থিব। জায়গাটির উন্নয়নের জন্য মূল সড়ক থেকে দোমহনি হয়ে যে রাস্তাটি জঙ্গলে ঢুকেছে, সেটিকে মোরামের করা যেতে পারে। কিন্তু অ্যাসফল্টের করলে জঙ্গলের পরিবেশ কতটা রক্ষিত হবে সন্দেহ আছে। ওই পথটুকুতে একাধিক আদিবাসী গ্রাম। ভিড়ের সময় তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার কথাও ভাবা দরকার।

খাঁদারানি লেকের আশপাশে কোনও কংক্রিটের স্থাপত্য তৈরি করা একেবারেই উচিত নয়। অতিথি আবাস নির্মাণ করলেও তা কাঠের হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মাইক বাজানো বন্ধ করতে কড়া আইন দরকার। না হলে পরিযায়ী পাখির দল ওই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। সর্বোপরি আমার মনে হয়, খাঁদারানিতে পিকনিক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।

সুরথ রায় ভদ্রকালী, হুগলি

হাহুতাশ কেন

সোনালী দত্ত তাঁর লেখাটিতে মহিলাদের আশানুরূপ ভাবে নেতৃত্বে উঠে আসতে না পারার জন্য হাহুতাশ করেছেন (‘কমরেড দিদি...’, ১৬-১১)। এবং এ জন্য মেয়েদের ব্রাত্য করে রাখার ‘পৌরুষ’কেই দায়ী করেছেন। সত্যিই কি তাই?

নেতৃত্বে মহিলা সংকটের রোগ সব দলেই কমবেশি রয়েছে। অন্যান্য দেশেও রয়েছে। নেতৃত্বে সবাই আসতে পারেন না। তার জন্য কিছু গুণের প্রয়োজন। শুধু পুরুষদের অনুগ্রহভাজন হয়ে নেতৃত্বে উঠে আসা যায় না। আসল কথা, অন্যদের ছাপিয়ে যাও। বড় উদাহরণ অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সনিয়া গাঁধী, বেনজির ভুট্টো, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার মতো কোনও পারিবারিক প্রভাব ওঁর ছিল না। সম্পূর্ণ একক চেষ্টায় অনেক লড়াই-আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আজকের মমতা। হাতের সামনে এত বড় উদাহরণ থাকতে মহিলাদের নেতৃত্বে উঠে আসা নিয়ে কেন এত হাহুতাশ?

সংসারে মহিলাদের নেতৃত্বগুণ কিন্তু পুরুষরাও স্বীকার করতে বাধ্য। বাড়ির বাইরেও আজ তাঁরা সফল। এ জন্য তাঁদের যোগ্যতাকেই কুর্নিশ করতে হয়। রাজনীতিতে সফল হতে হলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে। পুরুষদের কাজ, তাঁদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া। পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা, মন্ত্রিসভায় আরও বেশি নারী প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন। সে জন্য সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তার আগে নারীকে তার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

শম্পা দেবনাথ ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন