সম্পাদক সমীপেষু

ভাবতে শিহরন জাগে, যদি ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে মাইকেল ডগলাসের বিয়ে হত! লোকে তাঁদের দেখতে পেলেই পুলকিত হয়ে বলত, ওই আসছেন ‘ক্যাট-ডগ’!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৮
Share:

ধড়ে মুড়ো সন্ধি

Advertisement

এই ‘বিরুষ্কা’র ব্যাপারটা কী? সেলেব স্বামী-স্ত্রী হলে তাঁদের নাম দুটো জুড়ে দিয়ে একটা উদ্ভট হাঁসজারু শব্দ তৈরি করে তাঁদের জুটিটাকে ডাকার চল হল কবে থেকে? কে করল? ব্র্যাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এক সঙ্গে থাকা শুরু করার পর গণমাধ্যম ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ জোড়-শব্দটার জন্ম দিল, তার পর থেকে কি এ জিনিস সংক্রামক ব্যাধির মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল? আর তার ঢেউ এসে পৌঁছে গেল অামাদের সইফ আলি খান ও করিনা কপূরের যোগফল ‘সইফিনা’ অবধি?

আগেও তো বিরাট সেলেব্রিটি দম্পতি ছিলেন রিচার্ড বার্টন ও লিজ টেলর, তাঁদের খ্যাতি ছিল বোধহয় এমন দু’তিনটি জুটির সমান, কী তার চেয়েও বেশি। কই, তাঁদের দু’জনকে এক সঙ্গে বোঝাতে কেউ ‘রিটেলর’ বা ‘লিজার্ড’ প্রয়োগ করেছে (বা করার সাহস পেয়েছে) বলে তো শুনিনি। চার্লস আর ডায়নাকে মিলিয়ে ‘চায়না’ বলে ডাকলে তো বোধহয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে টালমাটাল ঘটে যেত। কিন্তু হ্যারি আর মেঘানের মিলেমিশে ‘ম্যারি’ হওয়া কি কেউ আটকাতে পারবে?

Advertisement

ভারতে এর আগেও খুব বিখ্যাত লোকের সঙ্গে খুব বিখ্যাত লোকের বিয়ে হয়েছে। ক্রিকেটের রাজপুত্র ও সিনেমার রাজকন্যার মেলবন্ধনও ঘটেছে। কিন্তু মনসুর আলি খান পটৌডী আর শর্মিলা ঠাকুরকে একযোগে বোঝানোর এমন ভয়ানক তাড়া মিডিয়ার পড়ে যায়নি, যে ‘মনমিলা’ বলে হেডিং হবে। অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি, দিলীপকুমার এবং সায়রা বানুর বিয়ে হয়েছে, সবাই তাঁদের গোটা নাম ধরে ডেকেছে। তখনও শর্টকাটকে সপ্রতিভ ভাবার চল হয়নি বলেই কি? নইলে কি ‘অজয়া’ ও ‘দায়রা’ বলে সংবাদপত্ররা (এবং দেখাদেখি সাধারণ মানুষ) সারাক্ষণ ডাকাডাকি শুরু করত?

ভাবতে শিহরন জাগে, যদি ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে মাইকেল ডগলাসের বিয়ে হত! লোকে তাঁদের দেখতে পেলেই পুলকিত হয়ে বলত, ওই আসছেন ‘ক্যাট-ডগ’!

রাকা কাঞ্জিলাল বজবজ

হোমার পায়রা

‘কাঠবাদাম, পেস্তা, মধুতে উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা’ শীর্ষক (২-১২) লেখাটি স্মৃতির এক মেদুর স্পর্শ দিয়ে গেল। যদিও স্মৃতিটা আমার কাছে সবটা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। এই স্মৃতির যিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তাঁর হয়েই লিখছি। সময়টা দেশ স্বাধীন হবার আগে, তিরিশ-চল্লিশের দশক, উত্তর কলকাতার শহরতলি, বরাহনগর থানার অন্তর্গত আলমবাজারে (বর্তমানে মহারাজা নন্দকুমার রোড নর্থ) অবস্থিত শতাব্দীপ্রাচীন (শুনেছি প্রায় ২৫০ বছরের) তর্কালঙ্কার বাড়ি। এই বাড়ির সঙ্গেই ‘হোমার’ পায়রার কিছু স্মৃতিকথা জড়িয়ে আছে।

ওটা ছিল আমার বাবার মামার বাড়ি। এখন বাবা তিরাশি ছুঁইছুঁই। তর্কালঙ্কার বাড়ির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ছিলেন ‘বিশপ ট্রেডিং কোম্পানি’র কর্ণধার। এখানে বিশপ-এর লেখার কালি তৈরি হত। কোম্পানির মূল অফিসটি ছিল সুদূর ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারে। এই ‘হোমার’ পায়রাগুলি বাড়িতেই থাকত, বাবার নতুনমামা স্বর্গীয় কানাইলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। উনি নিয়মিত খেলাধুলা, শরীরচর্চা, এই সব নিয়ে থাকতেন (উনি শতাব্দীপ্রচীন বরাহনগর রোয়িং ক্লাবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক)। গঙ্গায় ভাসত ওঁর বাইচ খেলার নৌকাগুলি, আর বাড়িতে পায়রা। বিশপ ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবসার কারণেই এই ‘হোমার’ পায়রাগুলিকে কাজে লাগানো হত।

ম্যাঞ্চেস্টার থেকে কোম্পানির আধিকারিকরা এসে এখানকার পায়রা নিয়ে যেতেন, ওখানকার পায়রা দিয়ে যেতেন। পরে ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদানপ্রদান করতে হলে, ছোট চিঠিতে (ওই চিঠিগুলো প্রধানত লিখতেন বাবার মেজমামা স্বর্গীয় অনুকূল বন্দ্যোপাধ্যায়— তৎকালীন বরাহনগর মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান)। তা লিখে একটি টিনের ক্যাপসুলে ভরে ‘সিল’ করে, পায়রার পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দেওয়া হত।

প্রায় তিন মাস পথ পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছত ম্যাঞ্চেস্টারে। আবার তার উত্তর নিয়ে এখানকার পায়রা উড়ে আসত তিন মাসের পথ পেরিয়ে। ছোটবেলায় এই ব্যাপারটা ছিল আমার কাছে খুবই বিস্ময়ের। ছোটবেলায় যখনই আমি তর্কালঙ্কার বাড়িতে যেতাম, খুঁজতাম ‘হোমার’ পায়রাগুলোকে।

আম্রপালি ভট্টাচার্য মুখোপাধ্যায় অবিনাশ ব্যানার্জী লেন, হাওড়া

জোস্‌না

‘তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন রুশ অভিনেত্রী’ (‘পত্রিকা’, ৯-১২) শীর্ষক লেখায় শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিনীত একটি ছবির নাম উল্লেখ করা হয়েছে— ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’। এর পরে লেখাটিতে আরও দু’বার এই ছবির প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে ছবির নায়িকা ‘জ্যোৎস্না’ চরিত্রটির নাম। কিন্তু এই নামে কোনও ছবি বাংলায় আদৌ কখনও হয়েছে কি? ‘বেদের মেয়ে জোস্‌না’ নামে বিখ্যাত একটি ছবি আছে বটে। সে ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রটির নাম ‘জোস্‌না’— কখনওই ‘জ্যোৎস্না’ নয়। আপনারা কি এই লেখায় সেই ছবিটির কথাই বলতে চেয়েছেন? ছবির নাম আর ছবির প্রধান চরিত্রের নাম ‘জোস্‌না’ থেকে পালটে ‘জ্যোৎস্না’ করে দেওয়া আদৌ অভিপ্রেত কি ?

ভাস্কর রায় কলকাতা–৭৭

ভুল ধারণা

আওরঙ্গজেব বহু হিন্দু মন্দির ভেঙেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ধর্মান্ধতার কারণে নয়। কোনও হিন্দু রাজা আনুগত্য না দেখালে তাঁর মন্দির ধ্বংসটাই তখন দস্তুর ছিল। কিন্তু ঘটনা হল, মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আওরঙ্গজেবই সবচেয়ে বেশি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। ইতিহাসবিদ রিচার্ড ইটন তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, এই বাংলাতেই সম্রাট আওরঙ্গজেব অন্য কোনও মুঘল শাসকের তুলনায় বেশি মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কর্মচারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি হিন্দুকে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া, সারা জীবন ধরে হিন্দু চিকিৎসকের পরামর্শই নিয়েছেন এই সম্রাট। গোটা দাক্ষিণাত্য জুড়ে যখন চোল, পল্লবরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য একের পর এক মন্দির ধ্বংস করছিলেন, সে সময়ে আওরঙ্গজেবের এই সব কাজ নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক।

একটি ঘটনার উল্লেখ করলে, আওরঙ্গজেবের একটা আশ্চর্য দিক উন্মোচিত হবে। তিনি তাঁর পুত্রের জন্য এক জন গৃহশিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। এক বৃষ্টির রাতে সেই শিক্ষক রাজপ্রাসাদে এসেছেন পড়াতে। পথে তাঁর পায়ে কাদা লেগে গিয়েছে। তাই তিনি ছাত্রকে বললেন, পা ধোওয়ার জল এনে দিতে। ছাত্রটি দিল। পা ধুতে ধুতে শিক্ষকের মনে হল, স্বয়ং রাজকুমারকে পা ধোওয়ার জল আনতে বলা কি ঠিক হল? এ খবর যদি সম্রাটের কানে যায়, চাকরি তো যাবেই, গর্দানও যেতে পারে। খবর সম্রাটের কানে গেল। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন তিনি। তার পর আওরঙ্গজেব বলেন, আপনি আমার ছেলেকে পা ধোওয়ার জলটুকু আনতে বলে অন্যায় করেছেন। আপনার উচিত ছিল ওকে বলা, যেন ও নিজের হাতে আপনার পায়ের কাদা পরিষ্কার করে দেয়। আমার নির্দেশ, ভবিষ্যতে এটাই করবেন।

আসলে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের পাঠ্যবইগুলো যে ভাবে আমাদের অতীতের ছবি তুলে ধরেছে, আমরা সে ভাবেই ভেবে এসেছি। মনে রাখতে হবে, পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর কৌশলটা শুরু করেছিল ইংরেজরাই। ব্রিটিশ মন্ত্রী জর্জ হ্যামিলটন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনকে বলেন, পাঠ্যবই এমন ভাবে রচনা করতে হবে, যাতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ আরও বেড়ে যায়। লর্ড ডাফরিনকেও বলা হয়েছিল পাঠ্যপুস্তকের উপর নজর রাখতে— যাতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদের আগুন জ্বালিয়ে রাখা যায়। আমরা এখনও সেই ইতিহাসই অনুসরণ করে চলেছি।

সুদীপ বসু শান্তিনগর, রহড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন