সম্পাদক সমীপেষু

কখনও দেখা যায়, আরোহী চলমান মোটর সাইকেলে বসে হেলমেটের ভিতর মোবাইল ফোন ঢুকিয়ে কানের কাছে রেখে কথা বলতে বলতে চলেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১২
Share:

মোবাইল দৃশ্য

Advertisement

মোবাইল ফোনের হুজুগের দরুন কত আশ্চর্য দৃশ্য দেখা যায়, যা কিছু দিন আগে কল্পনাও করা যেত না! চলমান মোটর সাইকেলে এক হাতে এক দিকের হ্যান্ডেল ধরে, অন্য হাতে মোবাইল ফোন কানের কাছে ধরে এক ভদ্রলোক কথা বলতে বলতে চলেছেন। কিংবা, চলমান মোটর সাইকেলে বসে এক ভদ্রলোক কাঁধের কাছে মোবাইল ফোন রেখে ঘাড় বাঁকিয়ে চেপে ধরে কথা বলতে বলতে চলেছেন। দেখলে মনে হবে ভদ্রলোকের ঘাড়টি নিশ্চয় বাঁকা। যাঁরা জানেন না তাঁরা তো ভদ্রলোকের ঘাড়-বাঁকা অবস্থায় মোটর সাইকেল চালানো দেখে ‘আহা, কী কষ্ট!’ বলে বেদনা প্রকাশ করতেই পারেন।

কখনও দেখা যায়, আরোহী চলমান মোটর সাইকেলে বসে হেলমেটের ভিতর মোবাইল ফোন ঢুকিয়ে কানের কাছে রেখে কথা বলতে বলতে চলেছেন। যাঁরা হেলমেটের ভিতর ফোনটির কথা আন্দাজ করতে পারছেন না, তাঁরা ভাববেন, ভদ্রলোকের মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে। একা একা জোরে জোরে কথা বলছেন।

Advertisement

এ ভাবে কথা বলতে বলতে মোটর সাইকেল চালালে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অন্যেরও, নিজেরও। কিন্তু তাতে কী? মোবাইলে কথা বলার চেয়ে তো আর প্রাণের মূল্য বেশি নয়। তা হলে তো লোকে ট্রেনলাইন দিয়ে হাঁটার সময় মোবাইলে কথা বলত না।

সত্যকিংকর প্রতিহার যমুনা, দেশড়া, বাঁকুড়া

ওরা পারে

৯ ডিসেম্বর ২০১৭। গুজরাত ভোটের প্রথম দিন। দিনান্তে বসেছিলাম টেলিভিশনের সামনে, ভোটের খবর শোনার জন্য। সাংবাদিক বলছিলেন, সারা দিনে কোথাও কোনও গন্ডগোলের খবর নেই, একটাও বোমা পড়ার খবর নেই, নেই কোনও প্রাণহানির খবর। তার পর যখন শহরগুলো দেখানো হচ্ছিল, অবাক হয়ে দেখছিলাম, কত পরিচ্ছন্ন শহর, নেই কোনও পোস্টার, কোনও ফেস্টুন। দেওয়ালগুলো কত পরিষ্কার। ভাবছিলাম, আমাদের প্রিয় রাজ্যটাতেও কি এমন ভাবে ভোট হতে পারে না? আমাদের শহরগুলোকেও কি অমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি না? ভোট মানেই তো আমাদের কাছে আতঙ্ক। আর এতটুকু ভালবাসা নেই আমাদের শহরটার প্রতি। চারিদিকে তাকালে শুধু হোর্ডিং আর হোর্ডিং, দেওয়ালগুলো লেখায় লেখায় অপরিচ্ছন্ন। আসুন আর একটু ভাবি।

প্রকাশ সরকার কলকাতা–৪৮

পাচারের কাহন

আমাদের দেশের নারীপাচারকারীদের কথা সংবাদপত্রে অনেক বার পড়েছি। অনেকে ধরা পড়েছে, অনেকে পড়েনি। যারা ধরা পড়েছে, তাদের কেমন শাস্তি হয়েছে? কারণ পাচারকারী দিনকে দিন আরও বেড়ে যাচ্ছে, নারীদের আরও সর্বনাশ হচ্ছে। এটা কি চলতেই থাকবে? গ্রামের অশিক্ষিত গরিব মা-বাবারা দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে অনেক সময় তাদের মেয়েদের বিক্রি করে দেয়। মেয়েরা হয়ে যায় পণ্য। তার পর অত্যাচারিত নির্যাতিত হতে হতে বিভিন্ন হাত ঘুরে তারা এমন জায়গায় পৌঁছয়, যা কল্পনা করলেও গা শিউরে ওঠে।

এমনই এক নাবালিকা, ঢাকার বাসিন্দা। কাজ দেওয়ার নাম করে এক যুবক তাকে যশোরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অন্য একটি চক্র তাকে সীমান্ত পার করে বনগাঁর গোপালনগরে নিয়ে আসে। এখানে কিছু দিন আটকে রেখে তাকে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। মেয়েটি এক যুবকের সঙ্গে হাওড়ায় মিনিবাসে উঠেছিল। ভয়ে এমন কাঁচুমাচু হয়ে বসেছিল,
তা দেখে এক যাত্রীর সন্দেহ হয়। তিনি বাস থামিয়ে পুলিশকে সব জানান। পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করে এবং তার সঙ্গে কথা বলে আরও দুই পাচারকারীর সন্ধান পায়। মেয়েটির কী সৌভাগ্য, সে যাত্রা সে রক্ষা পেয়ে গেল। তাকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হল।

কিন্তু এমনই গাদা গাদা নারী পাচারকারী রয়েছে, যারা গরিব পরিবারের মেয়েদের দেখলে তাদের সোনা গয়না টাকার লোভ দেখিয়ে নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। তার পর নিজেদের ভোগের পর তাদের বিক্রি করে। প্রতি দিন খবরের কাগজে এদের কথা পড়ব? এর কোনও সুরাহা হয় না?

অলি বন্দ্যোপাধ্যায় নদীকূল, নিমতা

বরং অন্য

খবরের কাগজ খুললে এখন এক এক পাতায় তিন-চারটে করে খুনের বিবরণ। কোথাও বন্ধু বন্ধুকে খুন করছে, কোথাও স্ত্রী স্বামীকে খুন করছে (প্রেমিকের সঙ্গে মিলে), কোথাও ছোট ছেলে আরও ছোট বাচ্চাকে খুন করছে কোনও সামান্য ঝগড়ার পরিণামে বা খেলনার লোভে। আর থাকছে ধর্ষণের বিবরণ। যৌন হেনস্তার খবর। যৌন লালসার ক্ষেত্রে খুব ছোট শিশুদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। তাদের খুনও করা হচ্ছে এবং তার পর তাদের প্রতি অত্যাচারের বর্ণনা জেনে শান্ত থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া আছে গণধোলাই। কেউ অন্যায় করছে মনে হলে পুলিশকে খবর দেওয়া নয়, জনতার মত হল, বাঁধো ও মারতে শুরু করো। উলটো দিকে, কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদীকে মস্তানেরা মিলে মারতে মারতে মেরে ফেলছে, নারী হলে তাঁকে নগ্ন করে এলাকায় ঘোরাচ্ছে।

পৃথিবী এমন ভয়ানক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে প্রত্যেক দিনের খবরের কাগজ খোলার আগে নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয়, আজ কোন বীভৎস খবর পড়ব, যাতে মানুষ জাতটাকে আরও ঘেন্না করতে হবে! তার চেয়ে বরং, এ সব ছেড়ে, বিরাট আর অনুষ্কা কোথায় বিয়ে করলেন, কে নিমন্ত্রিত ছিলেন, কত খরচা হল, সেই সব অবান্তর কথা ফলাও করে লেখাই ভাল। আগে ভাবতাম, এই কথাগুলো খবরের কাগজে আদৌ ছাপা হয় কেন। ফিল্মস্টার বা বিখ্যাত তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি জানার যে আগ্রহ, তাকে তৃপ্ত করা কি মর্যাদাপূর্ণ খবরের কাগজের কাজ? সে তো দেবে এমন খবর, যার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনের যোগ আছে। বিরাট কোহালি কত টাকা খরচা করলেন, তা জেনে এক জন কেরানি কী করবেন? আদার ব্যাপারীর জাহাজের খোঁজে কী দরকার?

এখন ভাবি, আদার ব্যাপারী তাঁর চার পাশের ব্যাপারস্যাপার জানলে যে পরিমাণ মুষড়ে পড়বেন এবং মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন, তার চেয়ে বরং জাহাজের অলীক রূপকথা পড়ে তাঁর কিছুটা নির্মল সময় কাটবে এবং প্রতিটি মুহূর্তে শিউরে শিউরে উঠতে হবে না। নিজের সন্তানদের কোন ভয়াবহ পৃথিবীতে রেখে যাব সে কথা না ভেবে, হাবিজাবি রং-চড়ানো গল্প আর ইচ্ছাপূরণের দুনিয়ায় থাকাই ভাল। অর্থাৎ, সোজা কথা, সংবাদপত্রের কাছে এখন রোজ চাই অ-সংবাদপত্রোচিত আচরণ। তাতে খবর কম মিলবে, কিন্তু শান্তি মিলবে অনেক বেশি।

পুলক সেনশর্মা কলকাতা-৩৩

কুকথা

‘কুকথা বন্ধ করো, অনুব্রতকে ধমক মমতার’ শীর্ষক খবর (১২-১২) পড়ে অবাক লাগল। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কি দেরিতে ঘুম ভাঙল? এত দিন পরে মমতার মনে হল কেষ্ট বাজে কথা বলেন? মুখ্য‍মন্ত্রী নাকি শেষ বারের মতো কেষ্টকে সাবধান করেছেন। মানে কী? মমতা কি আগে কোনও দিন, এক বারও অনুব্রতকে সাবধান করেছেন? যে দিন অনুব্রত প্রকাশ্যে পুলিশকে বোম মারার কথা বলেছিলেন, সে দিন‌ই কার্যত পুলিশমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ‍ করেছিলেন। সে দিনও তাঁকে কিচ্ছু বলা হয়নি। তিনি যখন যা খুশি বলে গিয়েছেন, তাঁকে অপার প্রশ্রয়ে বাড়তে দেওয়া হয়েছে। তাই হঠাৎ আজ সেই দলের নেত্রী যখন সৌজন্য আর সুকথার উপর এতটা জোর দিতে শুরু করেন, তখন ধাঁধা লেগে যায়। এ কি সত্য, না এর নেপথ্যে অন্য গল্প আছে, যা আমরা বুঝতে পারছি না!

পবিত্রমোহন বিশ্বাস চরমণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন