সম্পাদক সমীপেষু:আগেই নয় কেন?

কলকাতায় উপস্থিত থাকলে এই সব চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারতাম। তাতে কোনও সুরাহা হত এমন অদ্ভুত কথা আমি ভাবছি না। কিন্তু আমার বিবেক হয়তো শান্তি পেত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share:

আমি এক মাসের ওপর দিল্লিতে আছি। ঠিক দিল্লিতেও নয়। দিল্লির বাইরে জাতীয় রাজধানীর মধ্যে, উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদ অঞ্চলে। এখানে বেশি টাকা দিলেও কোনও বাংলা কাগজ পাওয়া যায় না। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের খবরের জন্য একমাত্র নির্ভর টেলিভিশনের একটি চ্যানেলের ওপর।

Advertisement

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ১৪ দিন অনশনে রইল। এর মধ্যে কলকাতায় অনশন প্রত্যাহারের জন্য কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট হতে অনেকে আবেদন জানিয়েছিলেন, ছাত্রদের দাবির সপক্ষে মিছিলও বার হয়েছিল। কলকাতায় উপস্থিত থাকলে এই সব চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারতাম। তাতে কোনও সুরাহা হত এমন অদ্ভুত কথা আমি ভাবছি না। কিন্তু আমার বিবেক হয়তো শান্তি পেত।

যেটুকু খবর পেয়েছি, তাতে ছাত্রদের একটি দাবিও অসঙ্গত ছিল না। আমি জানি না— ছাত্রদের কারা নিজেদের প্রতিপক্ষ ভাবছিলেন? মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ, না কি পশ্চিমবঙ্গ সরকার? টিভিতে হস্টেলের যে ছবি দেখলাম, তাতে তো কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত, এ সন্দেহ করাও সম্ভব!

Advertisement

অনশন উঠে গিয়েছে। তবু আমার একটি বিনীত প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষ যিনিই বা যাঁরাই হোন, আমাদের এই যন্ত্রণা থেকে তাঁরা অনেক আগেই মুক্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তবু দিলেন না কেন? এই সব কিশোর-নবযুবা ছেলেরা না-খেয়ে থাকল প্রায় দুই সপ্তাহ— শেষ দিকে চোখের পাতাটুকুও তারা তুলতে পারছিল না। সরকারের কাছে প্রশ্ন— এই সব অল্পবয়সি ছেলেদের স্বাস্থ্যের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আগেই কেন তাদের দাবি মেনে নিয়ে অনশন প্রত্যাহার করানো গেল না?

দেবেশ রায়

গাজ়িয়াবাদ, দিল্লি

র‌্যাগিং বিষয়ে

অনশন উঠল, কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতেই হবে। অনেকে মেডিক্যাল কলেজের পুরনো ছাত্রদের এই আন্দোলনকে ‘নতুন ছাত্রদের র‌্যাগিং করতে দেওয়ার আন্দোলন’ বলে অপপ্রচার করছিলেন। তাঁরা সম্ভবত ‘র‌্যাগিং’ সংক্রান্ত বিষয়ে কিচ্ছু জানেন না। নিজে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশাসনিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছি। বেশ কয়েক বছর হতে চলল একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রে র‌্যাগিং সংক্রান্ত বেশ কয়েকটা ঘটনায় খুব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। আমার পরামর্শ মেনে অনেক কলেজ শুধু র‌্যাগিংয়ের সমস্যা থেকে মুক্ত হয়নি; এনএএসি, এনবিএ ইত্যাদির পর্যবেক্ষণে সেগুলি উচ্চপ্রশংসিত হয়েছে।

যাঁরা ছাত্রদের আন্দোলনকে র‌্যাগিংয়ের মতো অতি স্পর্শকাতর একটি বিষয়ের সঙ্গে জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্ট করছিলেন, তাঁরা কি র‌্যাগিং বন্ধ করার জন্য যে নির্দেশিকা, নিয়মনীতি, গাইডলাইন, আইন, বিধি ইত্যাদি আছে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট-সহ একাধিক হাইকোর্টের, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক-সহ দেশের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির, বিভিন্ন রাজ্যের— সেগুলি সম্পর্কে আদৌ ওয়াকিবহাল? শুধু আলাদা হস্টেলে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রদের রাখলেই র‌্যাগিং বন্ধ হয়ে যাবে? এর পরেও যদি র‌্যাগিং হয়, তখন কী বলবেন? র‌্যাগিং বন্ধ করতে এক এক বছর এক এক কলেজে পড়ানো হোক?

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে র‌্যাগিং যাতে না হতে পারে, তার জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষ কার্যকর কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? তাঁরা কি নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রদের ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং বুকলেট’ দিয়েছেন? নতুন ছাত্রদের কলেজে ভর্তির সময় এবং হস্টেলে আসন বরাদ্দ করার সময় কি ছাত্রদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং অ্যাফিডেভিট’ নিয়েছেন? কলেজ চত্বরে, হস্টেলে, মেসে, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে র‌্যাগিং-বিরোধী পোস্টার, হোর্ডিং লাগিয়েছেন? কলেজে ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটি’ এবং অ্যান্টি-র‌্যাগিং স্কোয়াড’ আছে? আজ পর্যন্ত কলেজে নতুন এবং পুরনো ছাত্রদের নিয়ে নিজেরা কতগুলি ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং সেমিনার’ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ? ক’টি সেমিনারে পুলিশ প্রশাসন, আইনজীবী এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকেছিলেন? কলেজ চত্বরে কোথাও ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটি’ এবং ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং স্কোয়াড’-এর সদস্যদের মোবাইল নম্বর-সহ নামের তালিকা টাঙানো আছে? কোনও নোটিস বোর্ডে দেওয়া আছে? ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং স্কোয়াড’ বিগত ছ’মাসে কত বার হস্টেল পরিদর্শনে গিয়েছিল? ‘অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটি’র শেষ মিটিং কবে হয়েছিল? যে সমস্ত জায়গায় র‌্যাগিং হতে পারে, সেই সব জায়গা চিহ্নিত করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে কি?

কোনও ছাত্র র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ করলে এখন ইউজিসি থেকে শুরু করে সবাই কতটা দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় সে সম্পর্কে অনেকেরই বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। যার বিরুদ্ধের‌্যাগিং করার অভিযোগ, তার তো যা শাস্তি হওয়ার হবেই, সঙ্গে যে প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের অভিযোগ উঠছে তার অনুমোদন পর্যন্ত বাতিল হয়ে যেতে পারে, যদি কর্তৃপক্ষ র‌্যাগিংয়ের খবর জানার পরে ব্যবস্থা না করেন।

সর্বোপরি, পুরনো ছাত্রদের যদি ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে বাবা, তোমরা যদি র‌্যাগিং করো, তা হলে তোমার/তোমাদের এই এই হাল হতে পারে, আর নতুন ছাত্রদের যদি বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে তোমাকে কেউ র‌্যাগিং করলে তুমি এই এই ভাবে তা জানাতে পারো; তোমার পরিচয় গোপন থাকবে এবং তুমি জানালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এই এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে— তা হলে র‌্যাগিং হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কিন্তু মুশকিল হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বেশির ভাগ কর্মকর্তাই নিজেরাও এ সব জানেন বলে মনে হয় না।

উৎপল দাস

ভুপালপুর, উত্তর দিনাজপুর

তালিকা বিতর্ক

‘তালিকা বিতর্কে পিএসসি’ (১৬-৬) শীর্ষক সংবাদে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বার বার তালিকা বদল ও জনৈকের রহস্যজনক ভাবে নম্বর বেড়ে যাওয়ার খবর বিস্ময়কর ও কিছুটা হলেও কৌতূহলোদ্দীপক। সপক্ষে বলার মতো যুক্তি কমিশনের নিশ্চয়ই আছে। জনগণের জানার অধিকারকে মর্যাদা দিলে এই নম্বর বাড়ার প্রকৃত কারণটি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করলেই ল্যাঠা চুকে যায়। আদালতে যাওয়ার খবরে কমিশনের মর্যাদা বৃদ্ধি হয় না।

প্রসঙ্গত মনে পড়ল, কয়েক বছর আগে, কলেজ সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউয়ের পূর্বে চাকরিপ্রার্থীদের যে তালিকাটি নেটে প্রকাশিত হয়, তাতে অন্তত দু’টি নাম বর্ণানুক্রমিকতার নিয়ম লঙ্ঘন করে মাঝখানে ঢুকে পড়ে। বিষয়টির প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও খবরের কাগজে দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়। ইন্টারভিউ শুরুর আগে বোর্ডের মেম্বারদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা তিন জন অধ্যাপক ব্যাপারটির প্রতি তৎকালীন চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

আমাদের বক্তব্য ছিল, হয় যুক্তি দেখিয়ে তালিকায় নিজের নামটি এগিয়ে আনতে দরখাস্ত করার সুযোগ সকলের প্রতি প্রসারিত করা হোক, অথবা, ওই দুই প্রার্থীকে নিয়মমাফিক ক্রম অনুযায়ী ডাকা হোক। তার উত্তরে চেয়ারম্যান জানান, আমাদের কোনও কথাই শোনা হবে না। পরের দিনের ইন্টারভিউতে প্রতিবাদী অধ্যাপকদের এক জনকে আর ডাকা হল না। আর তার পরের দিনের ইন্টারভিউয়ের জন্য আমাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তা ই-মেলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এই নিয়ম-বহির্ভূত কাজের কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়ে কোনও উত্তর পাইনি।

প্রত্যাশিত গোপীনয়তার কারণে, প্রার্থীদের নাম, বিষয় বা শিক্ষাবর্ষের উল্লেখ করা সম্ভব নয়। প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়েও কোনও সংশয় নেই। কমিশন অধ্যাপকদের ডাকেন উপাচার্যের সুপারিশের ভিত্তিতে। তার পরও নিজস্ব নিরিখে তাঁরা গ্রহণ-বর্জন করতেই পারেন। শুধু কার্যপদ্ধতির পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সকলের যে সামান্য দাবি, সেটিকে মান্যতা দিলেই ভাল হয়।

তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থ

কলকাতা-১৪৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন