সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিমবঙ্গের আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং অধিক সংখ্যায় অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে প্রায় একশো বছর আগের পরিস্থিতির কথা পড়া গেল, কিংবদন্তি ইংরাজির অধ্যাপক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তের স্মৃতিকথা ‘তে হি নো দিবসা’ বইটিতে। অধ্যাপক সেনগুপ্ত তাঁর শিক্ষক প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে জানাচ্ছেন: ‘‘নানা কারণে— বিদ্যাবত্তার জন্য ততটা নহে— তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সবচেয়ে বেশি স্নেহ করিতেন বলিয়া মনে হয়। (শ্যামাপ্রসাদ, প্রফুল্লচন্দ্রর ছাত্র ছিলেন।) এদিকে পরীক্ষার মান যাহাতে নীচু না হয় সেই দিকে তাঁহার সজাগ দৃষ্টি থাকিত এবং কঠিন পরীক্ষক হিসাবে তিনি ছাত্রমহলে ভয়েরও উদ্রেক করিতেন। ইউনিভার্সিটির কিন্তু গ্রেস নম্বর না দিলে চলে না। এই বস্তু প্রথম আমদানী হইয়াছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে এবং লাভবান্ হইয়াছিলেন স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ইউনিভার্সিটির প্রধান পুরুষ আশুতোষের পলিসি ছিল পরীক্ষায় বেশি পাস করানো। সুতরাং তিনি এই ব্যবস্থাকে অনেকটা গা-সহা করিয়া ফেলেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যেবার ভাইস্-চ্যানসেলর হয়েন সেইবার বোধহয় বি-এ পরীক্ষায় ইংরেজিতে বেশ একটু বেশি মাত্রায় গ্রেস দেওয়া হয়। স্যার (প্রফুল্লচন্দ্র) খুব চটিয়া গিয়া নূতন VCকে বলিলেন, ‘ইউ হ্যাভ ইনহেরিটেড অল দ্য ভায়সেস অব ইয়োর ফাদার’। একটি সংক্ষিপ্ত উক্তিতে তিনি পিতাপুত্রকে নস্যাৎ করিয়া দিলেন।’’
আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রসঙ্গে সুবোধচন্দ্র লিখেছেন, ১৮৮৬ সালে ফিজিক্সে এম এ পরীক্ষা দিয়ে আশুতোষ দ্বিতীয় শ্রেণিতে দ্বিতীয় হন। মাদ্রাজের এক সাহেব পরীক্ষকের কাছে তিনি খুব কম নম্বর পেয়েছিলেন এবং সে নিয়ে প্রতিবাদ করে তিনি পত্রিকায় প্রবন্ধও লিখেছিলেন। সুবোধচন্দ্রের মন্তব্য: ‘পরীক্ষা দিতে হইলে পরীক্ষকের রায় মানিতে হইবে যেমন মামলা করিলে বিচারকের রায় মানিতে হয়। যদি প্রতিবাদের কাহিনী সত্য হয়, তাহা হইলে ইহা আত্মবিশ্বাস হইতে আত্মম্ভরিতার সমধিক পরিচয় দেয়। আর একটা কথাও ভাবিতে হইবে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা-নির্ভর। যদি এই কাহিনীর কোন ভিত্তি থাকে, তাহা হইলে প্রশ্ন উঠিবে, পরীক্ষকের বিচার যিনি বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করিতে পারেন না, তাঁহার ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষার ন্যায়বিচার হইতে পারে কিনা।’
দেবাঙ্গন বসু
চন্দননগর
সু-সংবাদ
‘ব্যাগ ফেরত’ (১৭-২) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এক অভিজ্ঞতার কথা শোনাব। কিছু দিন আগে কলকাতা বিমানবন্দরে অবস্থিত রেলওয়ে বুকিং কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার পর, বাইরে বেরিয়ে আসতেই টের পেলাম, আমার মানিব্যাগ উধাও। উদ্বিগ্ন হয়ে রেলওয়ে কাউন্টারে ফিরে এলাম। এক প্যাসেঞ্জার বললেন, একটি মানিব্যাগ কাউন্টারে পড়ে ছিল, কিন্তু এক জন নিয়ে গিয়েছে।
ব্যাগে ছিল প্রায় আড়াই হাজার টাকা এবং আমার ব্যাংকের এটিএম ডেবিট কার্ড। পাশের ভিজিটর্স প্রবেশপথের কর্তব্যরত সিআইএসএফ-এর এক অফিসারকে ব্যাপারটা বললাম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর হাতের ওয়াকি-টকির মাধ্যমে বার্তার আদানপ্রদান করতে লাগলেন এবং মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এক উচ্চপদস্থ সিআইএসএফ অফিসার চার পাঁচ জন জওয়ানসহ উপস্থিত হলেন। তাঁরা আমাকে অপেক্ষা করতে বলে, এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে পড়লেন। এই সঙ্গে ওই অফিসারের ওয়াকি-টকিতে বার্তা চলতে লাগল। ইতিমধ্যে এক জওয়ান এসে একান্তে জানালেন, সমস্ত অঞ্চলে সিসিটিভি-র কড়া নজরদারি। সম্ভবত আপনার ব্যাগ ফেরত পেয়ে যাবেন।
মিনিট আট-দশের মধ্যে এক জওয়ান আমার মানিব্যাগটি এনে বললেন, দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না। দেখা গেল আমার কার্ডসহ টাকাপয়সা সব যথাস্থানেই আছে।
আমার সামান্য মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইএসএফ যে-ভাবে গুরুত্ব দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাটির ফয়সালা করল, তা আমাকে যুগপৎ বিস্মিত ও আনন্দিত করেছিল। তাঁদের আচার-ব্যবহারও ছিল সহৃদয়।
কৃষ্ণদাস সাহা
কলকাতা-৫২
কুম্ভীলক
স্থবির দাশগুপ্তের ‘তাঁকে ফিরে পেলে বেশ হত’ (৯-২) পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। পরশুরামের বিরুদ্ধে কুম্ভীলকবৃত্তির অভিযোগের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। সাহিত্যজগতের ‘কুম্ভীলকবৃত্তি’ নিয়ে দু’চার কথা বলি।
ইংরেজিতে কুম্ভীলকবৃত্তির গালভরা নাম প্লেজিয়ারিজম। অভিধান সংজ্ঞা দিচ্ছে: কারও কৃতি বা ধারণা তুলে নিয়ে তা নিজের বলে চালানোর অভ্যাস। সর্বাগ্রে যে প্রশ্ন উঠে আসে— মনন, চিন্তাভাবনার কি কপিরাইট হয়? এই যুগের এক জন সাহিত্যিক যা ভাবছেন, একশো বছর আগেও সেটাই কেউ ভেবেছিলেন, একশো বছর পরও কেউ ভাববেন।
মার্কিন সাহিত্যিক এডগার অ্যালান পো-র ‘দ্য প্রিম্যাচিয়োর বেরিয়াল’ গল্পটির সঙ্গে, রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ ছোটগল্পটির মূল ভাবগত মিল পাওয়া যায়। আবার পো-র প্রেমের কাব্য ‘টু হেলেন’-এর সঙ্গে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’-এর মিল পাওয়া যায়। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘পিঠে-পার্বনে চীনে ভূত’ গল্পের শেষ অংশে চিনে ভূতের পিঠে খাওয়ার অংশটুকু বাদে, বাকিটার সঙ্গে পুরোপুরি মিল রয়েছে আর্থার কোনান ডয়েলের ‘দ্য ব্রাউন হ্যান্ড’-এর। কোনান ডয়েলের গল্পে অবশ্য ভূতটি চিনে নয়, ভারতীয়।
এমনকী গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস-এর ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড’কেও বলা হয়েছে বালজাক-এর ‘দ্য কোয়েস্ট অব দ্য অ্যাবসোলিউট’ থেকে চুরি! কিন্তু এ থেকে তো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না, যে, রবীন্দ্রনাথ থেকে গার্সিয়া মার্কেস সবাই টুকেছিলেন! তা হলে এত মিল থাকার কারণ কী? প্রথমত, পৃথিবীর সমস্ত বড় সাহিত্যকই হয়তো একই রকম ভাবেন।
দ্বিতীয়ত, সব সাহিত্যিকই তাঁর পূর্ববর্তী সাহিত্যিকদের চিন্তাভাবনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হন। তাই তাঁর নিজের লেখায় সেই সব পূর্বজ সাহিত্যিকের চিন্তার প্রতিফলন অস্বাভাবিক নয়। যে সমস্ত নিন্দুক সাহিত্যের মৌলিকত্ব সন্ধানে শ্লাঘা অনুভব করেন, তাঁদের মনোবৃত্তিতে আঘাত হেনেছেন জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনে। তিনি বলেছিলেন: যারা কবির রচনাতে ‘নির্ভেজাল’ অরিজিনালিটি খোঁজে, তারা চিবোক মাকড়ের জাল, কারণ একমাত্র মাকড়ই তার জালটি তৈরি করে আপন পেটের মাল দিয়ে, ষোলো আনা অরিজিনাল, আমি কিন্তু খেতে ভালবাসি মধু, যদিও বেশ ভাল ভাবেই জানি মধুভাণ্ডের প্রতিটি ফোঁটা ফুলের কাছ থেকে চোরাই করা মাল।
গৌরব বিশ্বাস
কলকাতা-৫১
অনর্গল
‘দেশ পেরিয়ে বিদেশি ভাষায় অনর্গল মমতা’ (১-৩) সংবাদটি সম্বন্ধে বলি, দু’চারটে বিশেষ বিদেশি বা প্রাদেশিক শব্দ বললেই কি তাঁকে বিভিন্ন ভাষায় অনর্গল বলা যায়? কলকাতায় এসে নরেন্দ্র মোদী, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান প্রমুখ দু’চারটি শব্দ বাংলায় উচ্চারণ করে হাততালি কুড়োন। তার মানে কি ওঁরা বাংলা ভাষায় অনর্গল?
রাধিকানাথ মল্লিক
কলকাতা-৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
‘রসুন নয়, এ তো পোকা’ শীর্ষক খবরে (১০-৩, পৃ ১২) প্রকাশিত স্কুলের নাম অন্নদাসুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি অন্নদাসুন্দরী হিন্দু বালিকা বিদ্যাপীঠের। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।