কঙ্গনা রানাউত ‘মণিকর্ণিকা’ ছবির যুদ্ধের দৃশ্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘যোদ্ধা পুরুষ হোক বা মহিলা, আসলে কাজটা খুব পুরুষোচিত। তাই লক্ষ্মীবাইও পুরুষের মতোই আচরণ করেছে। আর এখনকার দিনে মেয়েরা শরীরী ভেদাভেদ অতিক্রম করে সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই প্রবেশ করেছে।’’ (‘বোকা বোকা প্রশ্ন করলে পুরুষের প্রিয় হওয়া যায়’, আনন্দপ্লাস, ২৪-১২) এই ক’টা লাইন পড়ে মহেশ দত্তানি-র ইংরেজি নাটক ‘ব্রেভলি ফট্ দ্য কুইন’-এর কথা মনে পড়ে গেল। প্রাথমিক ভাবে নাটকের নাম রাখা হয়েছিল ‘ব্রেভলি ফট্ দ্য ম্যানলি কুইন’। কিন্তু পরবর্তী কালে ‘ম্যানলি’ শব্দটাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কঙ্গনা যে পুরুষতন্ত্রের দোষত্রুটির এত গঠনমূলক সমালোচনা করলেন এবং নারীস্বাধীনতার কথা বললেন, তিনি কি যোদ্ধার বীরত্বকে ‘পুরুষোচিত’ বিশেষণ প্রদান করে শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স-এর মতো ধপাস করে পড়লেন বলে মনে হয় না? তা হলে তিনি কি বিশ্বাস করেন যে, পুরুষ মানেই শক্তিশালী? তিনি এটাও বলেছেন যে লক্ষ্মীবাইও পুরুষের মতোই আচরণ করেছেন যুদ্ধে। এখান থেকে কি এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে পুরুষরা যে-হেতু বলশালী, তাই যুদ্ধ তাদেরই কাজ এবং সেই ক্ষেত্রে যখন একটি মেয়ে প্রবেশ করে তখন তাকে ‘ছেলের মতো’ পারফর্ম করতে হয়? অথচ কঙ্গনা পরক্ষণেই বললেন, এখনকার দিনে মেয়েরা শরীরী ভেদাভেদ অতিক্রম করে সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই প্রবেশ করেছে!
বীরত্বের কোনও লিঙ্গ হয় না। আর যুদ্ধে বীরত্বেরই প্রয়োজন।
সুদীপ্ত রায়
কলকাতা ৫৪
মদের প্লাবন
‘বিহার সরকারের মদ নিষেধাজ্ঞার জেরে সে রাজ্যের ঘরে ঘরে খুশি ফিরে এসেছে’ (২৪-১২)। এতে কি এ রাজ্যের সরকারের নেতা–নেত্রী–মন্ত্রী–আমজনতার টনক নড়বে? সংবাদে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিহারে পারিবারিক হিংসার মাত্রা ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যায়, এ রাজ্যেও মদের প্রভাবে পারিবারিক হিংসা কী মারাত্মক আকার নিয়েছে৷ প্রায় প্রতি দিন খুন, ধর্ষণে যুক্ত অপরাধীদের মত্ত অবস্থায় থাকার কথা প্রকাশিত হয়। কুড়ি-ত্রিশ বছর আগেও মদের এমন স্রোত বইতে দেখা যেত না৷ অন্য দিকে প্রায় দেখা যায়, মহিলারা সংগঠিত ভাবে মদের ভাটি ভেঙে ফেলছেন৷ পুলিশ প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও যখন ফল হয় না, তখন তাঁরা এ পথে যেতে বাধ্য হন৷ নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতে মহিলারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী৷ তাঁদেরই এর জন্য মূল্য দিতে হয় সবচেয়ে বেশি৷ প্রতি দিন সংবাদমাধ্যমে নারী-বৃদ্ধ-শিশু নির্যাতনের খবর প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হৃদয়কে যন্ত্রণাবিদ্ধ করছে৷ অথচ সেটা নেতা-মন্ত্রীদের মনে সামান্যতম আঁচড়ও কাটে না৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মদের ভাটিগুলি চালানোর পিছনে রয়েছেন এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কর্তারা৷
কোটি কোটি বেকার আজ অন্ধকার ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির আশায় মদের নেশায় আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছে৷ আর সরকারি উদ্যোগে হাজার হাজার মদের দোকান শুধু নয়, মদের কারখানা পর্যন্ত খোলা হচ্ছে৷ কর্তারা সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলছেন, পুজোয় রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে, বড়দিনে তাকেও ছাপিয়ে যাবে৷ তার ফলে ছাত্র-যুব সমাজের কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, তা কি তাঁরা হিসাবের মধ্যে রাখছেন? এঁরাই ঘটা করে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী–মনীষীদের গলায় মালা দেন৷ ব্রিটিশ যখন মাদক দ্রব্যের ব্যাপক প্রভাব বাড়িয়ে ছাত্র-যুব সমাজকে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করছিল, তখন ওই সংগ্রামীরা তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, দোকানের সামনে পিকেটিং করেছেন৷ আজ তাঁরা থাকলে এই সব নেতা–মন্ত্রীকে কী বলতেন? বিহার সরকারের মদ নিষিদ্ধ করার পিছনে জনমতের ব্যাপক চাপ কাজ করেছিল, এ রাজ্যেও সেই চাপ তৈরি আজ খুবই প্রয়োজন৷
সমরেন্দ্র প্রতিহার
কলকাতা-৪
স্বেচ্ছা কয়েদি
এক জিজ্ঞাসু ছাত্র কোনও এক সময়ে মেসেজ করেছিল আমাকে, "Sir apnaka akta katha ask karba"। শ্রম খরচা করে বাংলায়ন করলাম— “আপনাকে একটা কথা আস্ক করব”, মানে জিজ্ঞাসা করব। দুটো বিষয় লক্ষ করলাম। অদ্ভুত বাক্যশৈলী এবং বানানের ব্যবহার। পরে সাক্ষাতে এ রকম বাক্যগঠনের কারণ জানতে চাইলে সহাস্য উত্তর পেলাম “এখন সবাই এ রকমই লেখে।” বুঝলাম আমার প্রশ্নটাই খুব হাস্যোৎপাদক। তাৎপর্য হল, সবাই যখন লিখছে তখন এটাই সঠিক এবং সর্বোত্তম, অতএব এ নিয়ে প্রশ্ন করাটাই একটা দুষ্কৃতী।
আর এ সব মেসেজের বানান বিষয়ে একটা কথা বুঝে নিতে হবে আগে। যার উদ্দেশে বার্তা যাচ্ছে, সে না বুঝলেও অসুবিধা নেই, প্রেরক বুঝতে পারলেই হল। অতএব ‘a’ এর উচ্চারণ ‘এ’ হবে, না ‘অ’ হবে, না কি ‘আ’ বা ‘অ্যা’-এর মতো হবে, সেটা না বুঝতে পারলে প্রাপকের দোষ। শুরুতে খুব সমস্যা হত, এখন আগের চেয়ে অনেকটা ‘সুস্থ’ হয়েছি। সে জন্য ‘apnaka’ লেখা মানে যে ‘আপনাকা’ নয়, ওটা ‘আপনাকে’, সেটা বুঝতে পারছি বলে মনটা বেশ খুশি হয়ে যায়।
প্রচুর উদাহরণ থাকলেও কয়েকটা আমার বেশ দৃ়ষ্টি আকর্ষণ করেছে। এইগুলোতে আবার বাঙালি-‘হিন্দুস্থানি’-ইংরেজ ভাই-ভাই । ‘6’ মানে ‘ছ’ (ফলিতার্থ 66=চ্ছ। সংস্কৃত ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব এবং গণিতের কী চমৎকার মেলবন্ধন)। ‘7’ মানে ‘সাথ’। হিন্দিতে একটা সিনেমা হয়েছিল, ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’। তা হলে সেটা এখন লিখতে হবে Hum 77 Hai। এটার বঙ্গার্থ কেউ ‘আমরা ৭৭’ ভাবলে সে কিছুই জানে না, একেবারে অশিক্ষিত। ‘4’ মানে ‘for’। ‘8’ মানে ‘আইট’ (পূর্ববঙ্গীয় উচ্চারণের মতো শোনালেও কিছু করার নেই। কারণ n8 এর উচ্চারণ ‘নাইট’-ই হয়, ‘নেইট’ নয়)। এর কারণটাও শুনলাম। এই রকম করে লিখলে নাকি সময় বাঁচে। সময় বাঁচাচ্ছি। সময়কে নিজেদের মতো করে ছোট করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু নিজেরাও যে ছোট হয়ে যাচ্ছি, ভাবছি কি?
সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা- ৫১
পাখি ও মাইক
শীতের মরসুমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশি পাখির প্রদর্শনী শুরু হয়। স্বল্প পরিসরে রাখা পাখিদের লোকসমাগমের কলরব এবং তৎসহ তারস্বরে মাইকের আওয়াজে রীতিমতো নাজেহাল দশা। পাখিদের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
রক্তদানেও
প্রায়ই নানা জায়গায় অনুষ্ঠিত হয় রক্তদান শিবির। প্রয়াস প্রশংসনীয়। কিন্তু রক্তদান শিবিরের দিন দশেক আগে থেকেই, বিরাট এলাকা জুড়ে লাইটপোস্টে মাইক বা চোঙ লাগিয়ে সারা দিন ধরে অবিরাম শিবিরের প্রচার চলতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও সংস্থা থেকে বাচিক শিল্পীদের সাহায্যে সিডি বানিয়ে দিনভর প্রচার কার্য চালানো হয়। কিন্তু এর ফলে, যে এলাকায় এই ধরনের শিবিরগুলি আয়োজন করা হয় সেখানকার অধিবাসীদের, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের জীবন যে একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, সে দিকে কারও খেয়াল থাকে না। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলে তা জনসাধারণকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু তাই বলে দিনভর তারস্বরে মাইক বাজিয়ে একই কথা বার বার শুনিয়ে এলাকাবাসীর প্রাণ অতিষ্ঠ করে তোলাটাও সুবিবেচনার পরিচয় হতে পারে না।
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।