সম্পাদক সমীপেষু: আনন্দের নমুনা

আমাদের আছে জোরানন্দ (জোর করে আনন্দ) যার কোনও প্রাণ নেই। আমাদের আনন্দের নমুনা— বাসে বসার জায়গা পেলে আনন্দ, কলে জল এলে আনন্দ, প্রসাদের নামে রাস্তাঘাটে খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দ, ট্রামে-বাসে বিনা টিকিটে যাওয়ার আনন্দ, পথচারীকে কাদাজল ছেটানোর আনন্দ, মণ্ডপে এসে ঠাকুর প্রণাম না করে সেলফি তোলার আনন্দ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

দুর্গাপুজো চলে গেল। একটা পুজো মণ্ডপে চার দিন ছিলাম, পুজো নিয়ে হইচই আছে, হুজুগ আছে, কিন্তু আনন্দের লেশমাত্র নেই। শিশুদেরও সেই ভাবে হাসতে দেখি না। তা হলে কি আনন্দের ডিজ়াইনটা বদলে গিয়েছে? আমাদের আছে জোরানন্দ (জোর করে আনন্দ) যার কোনও প্রাণ নেই। আমাদের আনন্দের নমুনা— বাসে বসার জায়গা পেলে আনন্দ, কলে জল এলে আনন্দ, প্রসাদের নামে রাস্তাঘাটে খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দ, ট্রামে-বাসে বিনা টিকিটে যাওয়ার আনন্দ, পথচারীকে কাদাজল ছেটানোর আনন্দ, মণ্ডপে এসে ঠাকুর প্রণাম না করে সেলফি তোলার আনন্দ। হেলমেট না পরে বাইক চালানোর আনন্দ, হাওড়াতে বসে মোবাইলে চিৎকার করে কালীঘাটে আছি বলার আনন্দ, সবাই খারাপ আর আমি ভাল, এটা ভাবার আনন্দ (ভাবানন্দ)।

Advertisement

স্বপন সিনহা

কলকাতা-১৯

Advertisement

৭ শবর মৃত’

‘লালগড়ে ৭ শবর মৃত দুই সপ্তাহে’ (পৃ ১, ১৩-১১) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ঔদাসীন্য ও প্রয়োজনীয় মনোযোগের অভাব নিয়ে কয়েক জন স্থানীয় ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, লালগড় ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও লালগড় থানার অফিসার-ইন-চার্জকে নিয়ে লালগড় ব্লকের জঙ্গলখাস গ্রামে মৃত ৭ জন শবর সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বাড়ি পরিদর্শনে যান। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে কম্বল, শাড়ি, বাচ্চাদের পোশাক, ত্রিপল, খাদ্য-সহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। খাবার প্রস্তুতের জন্য একটি রান্নাঘরও চালু করা হয়েছে। দু’টি শিশু অনাথ হয়ে পড়ায় তাদের আগামী কাল হোমে পাঠানো হবে।

মৃত ৭ জনের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রাপ্য সুযোগসুবিধা নিয়মিত পেয়েছেন। পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিকটবর্তী রেশন দোকান থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত ৮ কেজি চাল ও ৩ কেজি গম; কেজি প্রতি ২ টাকা হারে পেয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও খাদ্য দফতরের কর্মীদের থেকে আলাদা ভাবে এই তথ্যটি যাচাই করা হয়েছে। অপুষ্টিজনিত মৃত্যু নিয়ে পরিবারগুলির তরফে কোনও অভিযোগ নেই। এই পরিবারগুলির এক-চতুর্থাংশ ইতিমধ্যেই আবাস যোজনায় নিজস্ব বাড়ি পেয়েছে।

মৃতদের মধ্যে দু’জন (মংলু শবর ও পল্টু শবর) যক্ষ্মায় ভুগছিলেন। এঁরা চিকিৎসাধীন ছিলেন, বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁরা নিয়মিত ওষুধ খেতেন না বলে জানা গিয়েছে।

স্থানীয় তদন্তে জানা গিয়েছে, ৭ জনের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে মদ্যপানজনিত সিরোসিসের কারণে। চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যাদি এই রকম:

১) উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ এবং লালগড়ের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজ দুপুর ১২ টায় পূর্ণপানি গ্রাম পরিদর্শনে যান।

২) মৃত ৭ জনের মধ্যে ২ জনের যক্ষ্মায়, ২ জনের সিএলডি-র চিকিৎসা চলছিল। ৩ জনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রের হদিস মেলেনি।

৩) স্থানীয় অনুসন্ধান ও চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ২ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে,

৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন মদ্যপানজনিত সিরোসিসে। ৭ম ব্যক্তির ২০১৮-র মার্চ পর্যন্ত যক্ষ্মার চিকিৎসা চলছিল। তিনি মারা যান ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে।

৪) এক জনের মৃত্যু হয় সেপ্টেম্বরে, এক জনের অক্টোবরে, নভেম্বরে মারা যান ৫ জন।

৫) মৃত ১ জনের বয়স ৩০ বছর, ৪ জনের বয়স ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এবং ২ জন সত্তরোর্ধ্ব।

৬) এলাকার ৩ জন রোগীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আজ ভর্তি করা হয়েছে।

৭) পূর্ণপানি এলাকায় মোট অধিবাসীর সংখ্যা ১৭২।

সরকারি ঔদাসীন্য ও প্রয়োজনীয় মনোযোগের অভাবে ২ সপ্তাহে ৭ জনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ সত্য নয়, তা এর থেকেই প্রতীয়মান।

মিত্র চট্টোপাধ্যায়

তথ্য অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

প্রতিবেদকের উত্তর: প্রথমত, মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েক জন গত ১২ নভেম্বর লালগড়ের বিডিও-র ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ করে জানিয়েছিলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে আমাদের পরিবারের সাত জন সদস্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।’’ আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাই মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, এই মৃত্যু হয়েছে গত ১৫ দিনে। দিনমজুর পরিবারগুলির উপার্জনশীলদের মৃত্যুর কারণে পরিজনরা সরকারি সাহায্যের আবেদন করেছিলেন বিডিও-র কাছে। সেই আবেদনের (যে আবেদনের প্রতিলিপি আনন্দ বাজারের কাছে রয়েছে) ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল। আমরা জেলাশাসক আয়েষা রানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যের ঘটনাটি ব্লক প্রশাসনকে জানানো উচিত ছিল। কেন জানানো হল না খতিয়ে দেখা হবে।’’ জেলাশাসকের এই প্রতিক্রিয়াও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে যে মৃত্যুসংবাদ দেরিতে পৌঁছেছে জেলাশাসকের প্রতিক্রিয়াতে কি তা স্পষ্ট নয়? জেলাশাসক মঙ্গলবার দাবি করেছিলেন, ‘‘শবররা সব সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন। আর সব মৃত্যু সাম্প্রতিক নয়। অগস্ট থেকে পর পর কয়েক জন মারা গিয়েছেন।’’ ‘মৃত্যু নয়, শবরপল্লির চিন্তা ভাত’ (পৃ ১, ১৪-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনে তারও উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ জেলাশাসক-সহ অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রতিবেদনগুলি লেখা হয়েছিল।

তথ্য অধিকর্তা লিখেছেন, জেলাশাসক অন্য আধিকারিকদের নিয়ে জঙ্গলখাস এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং মৃতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। বিনীত প্রশ্ন, ‘ত্রাণসামগ্রী’ কখন বিলি করা হয়। এ ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হল কেন? কবে এই ত্রাণসামগ্রী বিলি হয়েছে? মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর। তা ছাড়া বিলি করা সেই ত্রাণসামগ্রীর গুণগত মান কেমন, এই প্রতিবেদক তা স্বচক্ষে মঙ্গলবার দেখেছেন। মংলুর বাবা চুনু শবর কিংবা কিসান শবরের স্ত্রী খুকুমণি সরকারি ত্রাণে পাওয়া পোকাধরা চাল বাছছিলেন তা আমরা দেখেছি। করমশোল গ্রামের সুজিত শবর, ফটিক শবরদের মতো কয়েক জনকে ব্লকের কর্মীরা ‘অল্প ছেঁড়া ফাটা’ নতুন লুঙ্গি বিলি করেছেন, সেটাও আমরা ঘটনাস্থলে থেকে লক্ষ করেছি। সুজিতরা ছেঁড়া লুঙ্গি নিতে অস্বীকার করলে ব্লকের কর্মীরা বলেন, “এখন এটা নাও, পরে ভাল দেওয়া হবে।”

তথ্য অধিকর্তা তাঁর প্রতিবাদপত্রে স্বীকার করে নিয়েছেন মৃত ৭ শবরের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে মদ্যপানজনিত সিরোসিসের কারণে। এটা এলাকায় রমরমিয়ে বেআইনি মদের ভাটি চলার অভিযোগকেই মান্যতা দেয়। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার মঙ্গলবার জঙ্গলখাস গ্রামে মৃতদের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে এলাকায় ৬০-৭০টি বেআইনি মদের ভাটি চলার অভিযোগ শুনেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে বিবৃতি দেননি।

সরকারি ঔদাসীন্য ও মনোযোগের অভাবের অভিযোগ এসেছে শবরদের মধ্যে থেকে। প্রতিবেদনে সে কথাই লেখা হয়েছে।

তথ্য অধিকর্তা সাতটি অনুচ্ছেদে চিকিত্সা সংক্রান্ত তথ্যও আমাদের জানিয়েছেন। অথচ আমরা তাড়কি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে সেখানকার কর্মীরা মৃতদের সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি। এমনকি, ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতায় মাত্র যে ৪ জন যক্ষ্মারোগীর নাম জানানো হয়েছিল তাঁদের মধ্যে মঙ্গল (মংলু?) শবর ছাড়া আর শবর সম্প্রদায়ের যক্ষ্মারোগী নেই বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই রোগীরা কে কেমন আছেন, সেটাও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাতে পারেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, এক মহিলা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। দু’জনের চিকিত্সা চলছে মেদিনীপুরে।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘অজানা গ্যালাক্সিতে উ়ড়ান মাটির সুপারহিরোর’ (আনন্দ প্লাস, ১৪-১১) শীর্ষক লেখায় ক্রিস ইভান্সকে ‘কোল্ডপ্লে’র সদস্য হিসেবে লেখা হয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন