সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণতম নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী ওই দলের বর্তমান নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ’র নেতৃত্বকে মৃদু ভর্ৎসনা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে দু’একটি কথা।
১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পর, যখন ১৯৮৬ সালে আডবাণী বিজেপির সভাপতি হলেন, তখনই নতুন মুখ নরেন্দ্র মোদী ও অন্যান্য কট্টর আরএসএস সভ্যকে পার্টির সাংগঠনিক পদে নিয়ে আসেন।
১৯৯০ সালে তিনি সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যা অবধি রথযাত্রায় বার হন। যার ফলে কমণ্ডলু রাজনীতির সূচনা এবং শেষে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হল ও অকুুস্থলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রামমন্দির নির্মাণের ঘোষণা নতুন রূপ পেল।
২০০২ সালে গোধরা কাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী চেয়েছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মোদীকে অপসারণ করতে, তাতে বাধ সাধেন আডবাণী। ২০০৯ সালে যখন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হল, তখনই আডবাণী সম্মানের সঙ্গে অবসর নিতে পারতেন, তা না করে ২০১৪ সালে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের বিরোধিতা করলেন। মোদীও তাঁর এই গুরুর দোলাচলের উচিত শিক্ষা দিলেন, তাঁকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ না দিয়ে কেবলমাত্র মার্গদর্শকমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত করে এবং গত পাঁচ বছরে এক বারও তাঁর কাছ থেকে কোনও পরামর্শ না নিয়ে।
গত পাঁচ বছরে, আডবাণী কখনও মোদীর উগ্র হিন্দুত্ববাদী কাজকর্মের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেননি, অথচ যখন তাঁকে সরিয়ে গাঁধীনগরে বিজেপির প্রার্থী করা হল অমিত শাহকে, তখনই অপমানিত বোধ করে বর্তমান নেতৃত্বকে আক্রমণ করলেন।
ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে, ধর্ম ও রাজনীতি মিশিয়ে ফেলার শিক্ষা দিয়েছেন আডবাণী স্বয়ং। মোদী আডবাণীরই উত্তরসূরি। তাই তাঁর এই প্রতিবাদ বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাবে মনে হয়।
চন্দন চট্টোপাধ্যায়
ভদ্রকালী, হুগলি
হাতুড়ে
‘হাতুড়ে ডাক্তার ছাড়া চলবে না’ (১২-৪) শীর্ষক নিবন্ধ পড়ে কিছু বলতে চাই। বর্তমান পরিষেবায় হতাশাব্যঞ্জক ছবির পরিপ্রেক্ষিতে ঝোলাছাপ হাতুড়ে ডাক্তারদের চিকিৎসার বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেও, আপাতত তাঁদেরই প্রশিক্ষিত করে কাজ চালানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রতিবেদকদ্বয়। তাই রচনাটি স্ববিরোধী। জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন যেখানে জড়িত, সেখানে ‘মধ্বাভাবে গুড়ং দদাৎ’ নীতি সমর্থন করা যায় না।
আমাদের দেশের গাঁ-গঞ্জে কিছু দিন আগেও ‘খালি-পা ডাক্তার’ ছিলেন। ছোটখাটো শারীরিক সমস্যায় এলাকার মানুষজন তাঁদের কাছেই ছুটে যেতেন। রোগ এবং রোগী সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলেও, দীর্ঘ দিন লেগে থাকার ফলে তাঁদের মোটামুটি একটা অভিজ্ঞতা থাকত। হোমিয়োপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, কখনও বা ইউনানি পদ্ধতিতে রোগীকে সারিয়ে তুলতেন তাঁরা। সবচেয়ে বড় কথা, ২৪ ঘণ্টা হাতের নাগালে পাওয়া যেত এক মানবিক চিকিৎসককে।
গত কয়েকটি দশকে দেশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিকল্প পদ্ধতির পাশ করা চিকিৎসক আছেন। এ ছাড়া ডাক্তারি কলেজ সংখ্যায় অনেক বেড়েছে। অনেক কলেজে আসনসংখ্যাও বেড়েছে। সবগুলির সম্মিলিত প্রভাব পড়া উচিত ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটাই। পরিষেবা শব্দটি থেকে সেবা করবার মানসিকতাটাই কর্পূরের মতো উবে যাচ্ছে।
প্রশস্ত মাঠ সামনে পেয়ে টাকার থলি হাতে নিয়ে নেমে পড়েছে পুঁজিপতি শ্রেণি। বিশাল অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে অসরকারি হাসপাতাল এবং কলেজে। রোগী ও তাঁর পরিবারের সামনে মৃত্যুভয়ের ঝুমঝুমি বাজানো হয় বলে এই ব্যবসায় লাভের হার অতি উচ্চ। কলেজগুলি থেকে ক্যাপিটেশন ফি বাবদ মোটা টাকার আমদানি। প্রাইভেট হাসপাতালগুলিতে নিয়োজিত ডাক্তাররা মালিকের ঝুলি সমৃদ্ধতর করবার এক একটি সাকশন পাইপ। সরকারি ডাক্তারদের, শহরের উন্নত জীবনযাপন ছেড়ে গ্রামে যেতে অনীহা। যথাযথ পরিকাঠামোর অভাবও অনেকটা দায়ী। সব দেখেও সরকার নিশ্চুপ। বিমার ললিপপ দেখিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার খাতে বরাদ্দ কাটছাঁট করে চলেছে। উপযুক্ত ক্ষেত্রে সময়মতো বিমা কোম্পানির থেকে টাকা আদায় করা যে কত দুরূহ, ভুক্তভোগীমাত্রেই জানেন। ফাঁকি পড়ছেন সঙ্গতিহীন অশিক্ষিত অথবা অর্ধশিক্ষিত মানুষ, যাঁরা গ্লো-সাইনবোর্ড দেখে হাসপাতালের সিঁড়িতে পা রাখতেই ভয় পান। আর এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন অসাধু হাতুড়ে চিকিৎসকের দল।
লেখায় হাতুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার নির্দিষ্ট পরিসর বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মোট চিকিৎসকের ৬০% হাতুড়ে, অনুমোদিত তালিকা মেনে চলছেন কি না, তার নজরদারি এই ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। তা ছাড়া, এক জন মেধাবী পড়ুয়া পাঁচ বছরে যে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেন, তার সঙ্গে স্বল্প ট্রেনিংপ্রাপ্ত হাতুড়েদের তুলনা চলে না। অথচ তাঁরাই দেশের বেশির ভাগ মানুষের চিকিৎসা করার লাইসেন্স পাবেন।
দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিশাল গহ্বর হাতুড়ে-তাপ্পি দিয়ে কোনওমতেই ঢাকা যাবে না। স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিকাঠামোর ১০০% দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ যথাযথ চিকিৎসা থেকে দূরে থাকলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর-৩, হুগলি
মাছি ও বচ্চন
গত বছর নভেম্বরে তিন দিন বোলপুরে এক রিসর্টে ছিলাম। খুব শৌখিন ব্যবস্থা। কিন্তু খাওয়ার সময় উড়ে এল যত রাজ্যের মাছি, হাত নেড়ে নেড়েও খাবারের ওপর তাদের বসা বন্ধ করা গেল না। অথচ সব কিছুই দিব্যি পরিষ্কার। তা হলে এত মাছি এল কোথা থেকে? কারণ খুঁজতে সকালে, সামনের রাস্তায় হাঁটলাম। দেখি স্থানীয় মানুষেরা পুকুরপাড়ে মলত্যাগ করে, শৌচ করছেন পুকুরের জলে। ফলে পরিত্যক্ত মল থেকে মাছি উৎপন্ন হয়ে সর্বত্র এবং রিসর্টের খাওয়ার টেবিলে চলে আসছে।
গ্রামবাসীদের জিজ্ঞেস করতে জানা গেল, সেপটিক-ট্যাঙ্ক মঞ্জুরির টাকা গৃহস্থ/গ্রাহকের হাতে পৌঁছতে ভাগ হতে হতে নামে। তাই হাতে-পাওয়া টাকা দিয়ে প্ল্যানমাফিক শৌচালয় হয় না। যা হয়, সেই শৌচালয়ে ঘুঁটে-কয়লা, কাঠকুটো রাখতে সুবিধা হয়। যথারীতি খোলা আকাশের নীচে অমিতাভ-অনুষ্কার অনুরোধ না মেনে, মলত্যাগ চলছে চলবে। এবং রিসর্টে মাছির উপদ্রব কমাতে বচ্চনের পরামর্শ লাগবে।
রণজিৎ পাল
ইমেল মারফত
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
• ‘ছিনতাইকারী ধরলেন যুবক’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, পৃ ১৬, ২৪-৪) প্রকাশিত হয়েছে: ট্র্যাফিক সার্জেন্ট এবং ছিনতাইকারী— দু’জনের নামই সুজয়কুমার সাহা। কেবল ট্র্যাফিক সার্জেন্টের নাম সুজয়কুমার সাহা।
• ‘বিলকিসকে ৫০ লক্ষ ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (দেশ, পৃ ৮, ২৪-৪) কিছু সংস্করণে দু’টি ভুল রয়ে গিয়েছে। বিলকিসের স্বামীর নাম সাদিক নয়, ইয়াকুব। বিলকিসরা পালিয়েছিলেন ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, মার্চ নয়।
• ‘দিনপঞ্জি’ বিভাগে (পৃ ২, ২৩-৪) সত্যজিৎ রায়ের ‘জন্মদিবস’ প্রকাশিত হয়েছে। সেটি তাঁর ‘প্রয়াণ দিবস’।
• ‘নজরে সাংসদ’ শীর্ষক গ্রাফিকে (পৃ ৫, ২২-৪) প্রকাশিত হয়েছে: সাংসদ অনুপম হাজরার সংসদে হাজিরা ৪৭ শতাংশ এবং সংসদে প্রশ্ন ৭টি। এই সংখ্যা যথাক্রমে ৮৮ শতাংশ এবং ৯৪টি হবে।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।